ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

বগুড়ায় অভিনব কৌশলে ইয়াবা পাচারের সময় তিনজন আটক

মাহফুজ মণ্ডল, বগুড়া

প্রকাশিত: ২০:৪০, ১১ এপ্রিল ২০২৫

বগুড়ায় অভিনব কৌশলে ইয়াবা পাচারের সময় তিনজন আটক

বগুড়ায় মাদক পাচারে ব্যবহার হলো মানবদেহ। অভিনব কায়দায় পেটের ভেতর গিলে ফেলা ১ হাজার ৭০০ পিস ইয়াবা নিয়ে বগুড়ায় প্রবেশ করতেই পুলিশের হাতে ধরা পড়লো এক পেশাদার মাদক কারবারি। শুক্রবার শহরের চারমাথা এলাকায় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। 

এ সময় তার দুই সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া মূল আসামির নাম মোঃ আলম (৪০)। তিনি জয়পুরহাট জেলার কালাই থানার জামুড়া গ্রামের মোঃ সামাদের ছেলে। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, টেকনাফ থেকে ইয়াবা পাচার করে আনার জন্য আলম নিজের পেটে ৩৪টি পোটলায় ভরে আনেন মোট ১ হাজার ৭০০ পিস ইয়াবা। শুক্রবারের অভিযানে তার পেট থেকে এখন পর্যন্ত ১৭টি পোটলায় ৮৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সহায়তায় অবশিষ্ট পোটলাগুলো বের করার প্রক্রিয়া চলছে। আলমের সঙ্গে আটক হন আরও দুই সহযোগী মোঃ আপেল (৩৫) ও তার স্ত্রী মোছাঃ স্মৃতি বেগম (৩০)। তারা বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর চামড়া গুদাম এলাকার সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী মতিন সরকারের ভাতিজি। পুলিশ বলছে, এই দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছিলেন মতিন সরকার। 

 

জেলা ডিবি পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর আবু জাফর বলেন, “আটক আলমের পেট থেকে এখন পর্যন্ত ১৭টি ইয়াবার পোটলা উদ্ধার করা হয়েছে। চিকিৎসকের সহায়তায় বাকি পোটলাগুলো বের করার কাজ চলছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।” তিনি আরও জানান, “এই পদ্ধতিতে মাদক পাচার অত্যন্ত বিপজ্জনক। সামান্য অসতর্কতায় পাচারকারীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আলম একাধিকবার এভাবে মাদক পাচারে জড়িত ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তে নজরদারি কঠোর হওয়ায় মাদকচক্র নতুন নতুন কৌশল নিচ্ছে। ‘বডি প্যাকিং’ বা পেটের মধ্যে পোটলা ঢুকিয়ে ইয়াবা বহনের এ পদ্ধতি বর্তমানে ভয়ঙ্করভাবে বিস্তার লাভ করছে। পাচারকারীরা সাধারণত গরিব বা দুর্বল মানসিকতার মানুষদের টার্গেট করে এ কাজে ব্যবহার করে থাকে। ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই চক্রের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত রয়েছে। আটককৃতদের মোবাইল ফোন, যোগাযোগ মাধ্যম, এবং আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। টেকনাফ-বগুড়া রুটে সক্রিয় মাদক চক্রের একটি বড় নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে চলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বগুড়ার সুশীল সমাজ ও সচেতন নাগরিকরা বলছেন,“শুধু পুলিশি অভিযান নয়, মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তরুণদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।” বগুড়ায় অভিনব এই ইয়াবা পাচারচক্র ধরা পড়া যেন বড় ধরনের সতর্কবার্তা। মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা, বিশেষ করে এই ধরণের শারীরিক বহন কৌশল, দেশের নিরাপত্তা এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বড় হুমকি। এখনই সময় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের।

মুমু

×