
ছবি: সংগৃহীত
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পশ্চিম পশারীবুনিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান নান্না শিকদার। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হয়ে সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। এছাড়া অভিযোগ উঠেছে, নান্না শিকদার পৈত্রিক সূত্রে ১৩ কাঠা জমির মালিক হওয়ার কথা থাকলেও এলাকায় তার হয়েছে ৮০০ কাঠা জমি। অভিযোগ আছে এসব জমি তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় লুট করা টাকা, স্বর্ণালংকার থেকে তৈরি করেছেন। একই এলাকার মিরাজ শিকদার এসব অভিযোগ করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ পত্রে মিরাজ শিকদার জানান, হাবিবুর রহমান নান্না শিকদার, মুক্তিযোদ্ধা সনদ নং-০৬০৫০৫০৬৪, সে মুক্তিযোদ্ধা নয়। প্রকৃতপক্ষে রাজাকার এবং এ বিষয়ে সাব-সেক্টর কমান্ডার (সেক্টর-৯) মেজর জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ ২০০২ সালের ২ আগস্ট একটি প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন। হাবিবুর রহমান নান্না শিকদার ১৯৭১ সনে রাজবিহারী ডাক্তার বাড়ী থেকে ৬৫,০০০/=টাকা ও ৪০ ভরি স্বর্ণ লুট করে। এ বিষয়ে বাবুল হালদার ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি দরখাস্ত করেন। পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ২০১৭ সালের ১০ জানুযারি তারিখে ৮৪ জন রাজাকার এর তালিকা করে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করেন। উক্ত তালিকায় ৬০নং নামটি নান্না, পিতা-আজহার আলী, ১৯৭১ সনে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রাজবিহারী ডাক্তার বাড়ীতে ০৭ জনকে হত্যা করে রাজাকারা এবং ১৯৭২ সালের ২ এপ্রিল ভান্ডারিয়া থানায় মামলা হয়, মামলা নং-১, ধারা-১৪৭/৪৪৮/৩৮০/৩৭৯/৪৩৬/৩০২/৩৪ যেখানে আসামী ১৯ জন। নান্নার আপন বড় ভাই মানিক শিকদার ১০নং আসামী। মামলাটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন আছে। হাবিবুর রহমান নান্নার পিতা আজহার আলীরা ০৪ ভাই। তারা প্রত্যেকে স্থানীয় মাপে ১৩ কাঠা জমি পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত হয়। কিন্তু আজহার আলী (আনুমানিক) ৪০ বিঘা বা ৮০০ কাঠা ভূমির মালিক।
অভিযোগ পত্রে আরো বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হত্যা, লুট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেও নান্না শিকদার মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে। তিনি দিব্যি মুক্তিযোদ্ধাদের সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা নন তার যথেষ্ট প্রমাণ থাকায় আমি তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত শেষে নান্না শিকদারের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল চাইছি। মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলে অভিযোগের পর আমাকে দুইবার মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলে ডাকা হয় আমার কাছে টাকাও চাওয়া হয় তখন। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে পিরোজপুরে তৎকালীন ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাক্ষীদের পূর্ণ সাক্ষ্য না নিয়ে মনগড়া সাক্ষ্য লিখে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করে। এ সময় আমাকেও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে অভিযোগ পত্র তুলে নেওয়ার জন্য বলেন।
ভান্ডারিয়ার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বাচ্চু জনকন্ঠকে বলেন, নান্না শিকদার যুদ্ধ করেছেন এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন রকমের প্রমাণাদি নেই বরং তার বাবা এলাকার স্বীকৃত রাজাকার ছিলেন। যার জন্য তিনি জেলও খেটেছেন। একইসাথে নান্না শিকদারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় হত্যা লুট ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে। তবুও তিনি কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হলেন আমাদের জানা নেই। নান্না শিকদার দাবি করেছিলেন তিনি ভারতে গিয়েছিলেন। তবে বাস্তবে দেখা গিয়েছে অনেকে দেশে লুটপাট ভাঙচুর করেও ভারতে গিয়েছিলেন এটা কোনভাবেই প্রমাণ করে না তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এমনকি তার কথার মধ্যেও দ্বিচারিতা দেখা যায়।
অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান নান্না শিকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরেই আমাকে রাজাকার বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে অভিযোগের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি সেগুলো বারবার এড়িয়ে যান এবং বলেন সব ষড়যন্ত্র।
ফারুক