
ছবি: সংগৃহীত
পাহাড়ে প্রাণের উৎসব বৈসাবি উপলক্ষে চলছে মারমা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। পুরাতন বছরকে বিদায় নতুন বছরকে বরণ করে নিতে খাগড়াছড়িতে মারমা সম্প্রদায়ের নববর্ষ বরণ সাংগ্রাইং উপলক্ষ্যে ছয় দিনব্যাপী উৎসবের সূচনা করা হয়েছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় যে সমস্ত খেলাধুলা হারিয়ে যাচ্ছে তা পুনরুদ্ধার ও টিকিয়ে রাখতে খাগড়াছড়িতে মারমা জনগোষ্টির হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার মাধ্যমে নতুন বছর বরণের উদ্যোগ নেয় মারমা জনগোষ্ঠী। এতে অংশ নিতে পেরে খুশি বিভিন্ন বয়সী মানুষ।
এ উপলক্ষ্যে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের পানখাইয়া পাড়ার বটতলা এলাকায় মারমাদের ঐতিহ্যবাহী আলারী (খৈয়াৎ), ধ” খেলা, রিআক্যাজা ও পানি খেলাসহ ১০ ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করে মারমা উন্নয়ন সংসদ।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে এ খেলার উদ্ধোধন করেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মো.আরেফিন জুয়েল। এর আগে উৎসেবর সূচনায় মারমাদের ঐতিহ্যবাহী ডিসপ্লে প্রদর্শন করে মারমা নৃত্যশিল্পীরা। পরে উদ্বোধন করা হয় মারমাদের ঐতিহ্যবাহী ধ” খেলা ও আলারি খেলা ।
এসময় আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, সাংগ্রাইং যে উৎসব চলছে এটির মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে যুক্ত হয়েছে। গোটা বাংলাদেশের জন্য এটি অনুকরণীয়। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে মেলবন্ধন গড়ে উঠবে এবং সহাবস্থান তৈরি হবে। এটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্যের প্রতিচ্ছবি। আমরা যে অন্তভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই এই ধরনের উৎসব তাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির এসব খেলাধুলা যাতে হারিয়ে না যায় সে বিষয়ে সরকার আন্তরিক ভাবে কাজ করছে। পাহাড়ের লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় কৃষ্টি ও সংস্কৃতি উদ্ধারে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি ।
মারমাদের নতুন বছর বরণের সাংগ্রাই এর ২য় দিন হচ্ছে (আকাইয়া)। এ দিনে তারা বিভিন্ন ধরনের সবজি সংগ্রহ করে পাচন তৈরীর জন্য । এছাড়া বাড়ীঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নসহ বয়জ্যেষ্ঠদের প্রনাম করেন।
সাংগ্রাই উপলক্ষে মারমা উন্নয়ন সংসদের পক্ষ থেকে আয়োজিত এ খেলাধুলায় অংশ নেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। এ ছাড়া বিভিন্ন পাহাড়ি পল্লীতে মারমা স¤প্রদায়ের লোকজনও ঐতিহ্যবাহী খেলায় অংশ নেয়। নিজেদের ঐতিহ্যবাহী খেলায় অংশ নিতে পেরে খুশি তারা।
খাগড়াছড়ি মারমা উন্নয়ন সংসদ,কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক মংনু মারমা জানান, বিলুপ্তির পথে থাকা ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ফিরিয়ে আনতেই এমন উদ্যোগ। মানুষ সচেতন হলে কোনো সংস্কৃতিই হারিয়ে যাবেনা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাওয়া খেলাধুলা ফিরিয়ে আনতেই এমন উদ্যোগ বলছেন আয়োজকরা।
আগামী ১৪ এপ্রিল মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাইং উৎসবে ঐতিহ্যবাহী জলকেলি বা জলোৎসবে তরুন-তরুনীরা একে অপরের দিকে পানি নিক্ষেপ করে উল্লাস প্রকাশ করবে। মার্মা জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস এই পানি উৎসবের মধ্য দিয়ে অতীতের সকল দুঃখ-গ্লানি ও পাপ ধুয়ে মুছে যাবে। সেই সাথে তরুন-তরুনীরা একে অপরকে পানি ছিটিয়ে বেছে নেবে তাদের জীবন সঙ্গীকে। বৈসাবি এক সময় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য হলেও এখন সার্বজনীন ও জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবের মাধ্যমে পাহাড়ের সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি আরো সু-দৃঢ় হোক এই প্রত্যাশা সকলের।
সপ্তাহব্যাপী ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা শেষে আগামী ১৭ এপ্রিল পুরষ্কার বিতরনের মাধ্যমে শেষ হবে মারমাদের সাংগ্রাই উৎসবের সকল আনুষ্ঠানিকতা।
মায়মুনা