
ছবি: সংগৃহীত
কুমিল্লার হোমনায় সরকারের দেয়া ১৫টাকা কেজি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় স্বল্প মূল্যে হতদরিদ্রের মাঝে চাল বিতরণে পরিমাপে কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের ডিলার মো. মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল থেকে সরকারি সিলমোহর সংবলিত বস্তার পরিবর্তে বাজারের প্লাস্টিকের বস্তায় বালতি দিয়ে পরিমাপ করে এ চাল বিতরণ করা হয়। কিন্তু নিয়ম ছিল পাল্লা দিয়ে মেপে বা ডিজিটাল ওজন মাপার মেশিন দিয়ে মেপে দেওয়ার।
নিয়ম অনুযায়ী তারা ৩০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রতি বস্তায় সর্বনিম্ন ২৪ কেজি ও সর্বোচ্চ ২৭ কেজি করে (প্রতি বস্তায় ৩-৬ কেজি কম) সুবিধাভোগি গ্রাহকদের মাঝে বিতরণ করেন বলে হোমনা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় এর নিয়োজিত ডিলার মোঃ মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে ওই ডিলারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
জানা গেছে, উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডধারী ৩৮৫ জন দরিদ্র মানুষের মধ্যে ১৫ টাকা কেজি দরের ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিনে আব্দুল্লাপুর-খন্দকারচর, জয়পুর ও মির্জানগর (৬,৭,৮ ও ৯নং ওয়ার্ড) চাউল বিতরণ করেন। তিনি সরকার নির্ধারিত সিলমোহর যুক্ত বস্তা ব্যতীত বালতি দিয়ে ৩ বালতি করে সুবিধাভোগীদের প্লাস্টিকের বস্তায় চাউল বিতরণ করেন।১ বালতি ডিলারের মাপ অনুযায়ী ১০ কেজি ৩ বালতি মানে ৩০ কেজি। কিন্তু চাল নেওয়ার পরে বিষয়টি কার্ডধারীদের সন্দেহ হলে পাশের একটি দোকানের স্কেলে ওজন করে সর্বনিম্ন ২৪কেজি ও সর্বোচ্চ ২৭কেজি করে প্রতি বস্তায় তারা চাল পান। পরে চাউল ভর্তি বস্তা নিয়ে কার্ড ধারী সুবিধাভোগিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস কক্ষে প্রতিকারের আশায় যান।
জয়পুর গ্রামের ৮ নং ওয়ার্ডের শাহিন, পিতা- বাচ্চু মিয়া বলেন, সরকার লিখছে আমাদের ৩০ কেজি করে চাল দিবে কিন্তু চাল পাওয়ার পর দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। আমরা বস্তা মাথায় নিয়ে অভ্যাস আছে; আমরা দেখে কোনটার ওজন কেমন বুঝার ক্ষমতা আছে। আমরা বাড়ি যাওয়ার আগেই স্কুল বাড়িতে ডিজিটাল মেশিন আছে সেখানে কয়েকজনের সামনে মাপলে দেখি আমার বস্তায় ২৪ কেজি চাল
এরপর ভিডিও করে মহিলা মেম্বারকে জানালে তিনি বলেন উপজেলায় গিয়ে ইউএনও, খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ জানাতে।আমরা এখন অভিযোগ করেছি।
জয়পুর গ্রামের ৯ নং ওয়ার্ডের শাহ আলমের মেয়ে শাহিনা আক্তার বলেন, আমরা গরীব মানুষ হওয়ায় আমরা কার্ড করছি, আজকে যখন চাল নিয়েছি সন্দেহ হলে আমরা অন্যত্র গিয়ে মাপি দেখি আমার বস্তায় ২৩ কেজি চাল ৭ কেজি কম, দেওয়ার কথা ৩০ কেজি। ১-২ কেজি হলে আমরা আসতাম না, আমরা গরীব মানুষ, মোশাররফ ভাই কেন এই কাজগুলো করতেছে? আমরা যদি সেখানে গিয়ে বলতাম তাহলে হয়তো মারধর হতো আমরা সেটি না করে অফিসারদের জানিয়েছি।
একই গ্রামের ৯ নং ওয়ার্ডের আব্দুল মালেকের ছেলে মো. শাহিন মিয়া জানান, চাল বালতি দিয়ে মেপে দিলে আমার সন্দেহ হলে ডিজিটাল মেশিন দিয়ে মাপলে দেখি আমার বস্তায় ৩০ কেজির জায়গায় ২৫ কেজি এরপর মহিলা মেম্বার কে জানিয়ে আমরা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার অফিসে আসলে দেখি তিনি নেই। এখানের একজন লোককে আমরা জানিয়ে এসেছি। সবগুলো বস্তায় চাল কম দিয়েছে।মহিলা মানুষ অনেকেই আসে নাই বলছে তোমরা গিয়ে জানাও আমরা আছি। আমরা এখন চিন্তায় আছি আমাদের কার্ড এর লিস্ট থেকে আবার বাদ দেয় কি না!
এ বিষয়ে ডিলার মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, আমি পরিমাপে কম দেই নাই। আমার বিরুদ্ধে একটা গ্রুপ আছে সেই লোকেরা এগুলো করতেছে। যাদের চাল দিয়েছি তারা বস্তা থেকে চাল বাড়িতে রেখে-আমাদের বদনাম করার জন্য অভিযোগ করছে।
সরকারের সিলমোহর সংবলিত ৩০ কেজি বস্তার পরিবর্তে খোলা বস্তায় কেনো চাল দেয়া হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গোডাউন থেকে ৫০কেজি বস্তা করে দিয়েছে। তাই খুলে ওজন করে দিতে হয়েছে।আমার আরো ২০০ জন লোক আছে তারা তো সঠিক ভাবে পেয়েছে।সরকারি বস্তায়ও চাল কম হয় মাঝে মাঝে।
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াসিম জানান, এ বিষয়ে তিনি অবগত নন, কিন্তু সাংবাদিক যখন বলে আপনার অফিসে ভুক্তভোগীরা এসেছিল তখন তিনি বলেন ৩০ মিনিট আগে আমার অফিসের একজন কর্মকর্তা আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। ইউএনওর সামনে তো তারা আপনাকে জানিয়েছে আপনি বললেন অবগত নন, এরপর তিনি স্বীকার করে বলেন আমি এখন জেনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
জয়পুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার হোমনা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আমানউল্লাহর কাছে জানতে কল দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি বলেন আমি কি করতাম কন? এরপর চাল বিতরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার বুধবারে অফিসে কাম আছে আমি গেছিগা। বৃহস্পতিবার গেছি জয়পুরে চাল বিতরণের স্থানে, আমি বলে আসছি আপনি নাকি চাল কম দেন? চাল কম দিলে আপনি দায়ী থাকবেন। এরপর আমি চলে আসছি কাজে আমি কি করবো? দেয় তো এমন লোকদেরই। আমি ডিলারকে বলছি উনি কি করছে আমি জানি না বলে কল কেটে দেন।
এবিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমাকে কল দেওয়া হলে তিনি জানান, অভিযোগকারীরা এসেছে চাল পরিমাপে কম দেয়ার অভিযোগ পেয়েছি, তবে তারা আবার চালটা নিয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে মেপেছে এরপর হোমনাতে এসেছে সময়টা একটু দেরি হয়েছে। ডিলার ১০ কেজির বালতি দিয়ে মেপে দিয়েছে, ওখানে মেশিন ছিল সেটা দিয়ে দিলে হয়তো এমন হতো না। আমরা বিষয়টি আমলে নিয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মায়মুনা