
দুই পাড়ে এখনো কয়েক শ’ প্রাচীন ম্যানগ্রোভ প্রজাতির ছৈলা ও কেওড়া গাছ রয়েছে। গেওয়া ও বাইন গাছও আছে কিছু কিছু। এক সময়ের মনোরম মধুখালী লেকটির কথা বলছিলাম। অন্তত আট কিলোমিটার দীর্ঘ। বর্তমানে অবস্থান ভেদে ২০-৩০ মিটার প্রস্থ। জোয়ারে স্বচ্ছন্দে ডিঙি নাওসহ ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করছে। কিন্তু ভাঁটিতে আর চলে না। হেটেই এপার থেকে ওপারে যাওয়া যায়। সোনাতলা নদীর সাউদের ভাড়ানি হয়ে পক্ষিয়াপাড়া থেকে গাববাড়িয়া হয়ে খাপড়াভাঙ্গা নদীর সঙ্গে ছিল মধুখালী লেকের সংযোগ। এটিকে শাখা নদীও বলা হয়। দুই পাড়ের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ঢাকা এই লেকটি চোখে দেখার মতো। এক-দেড় যুগ আগেও লেক পেরিয়ে দুই পাড়ের বেড়িবাঁধ দিয়ে মানুষ চলাচলে শরীর ছম ছম করতো। প্রস্থ ছিল ৫০-৬০ মিটার। গভীরতাও ছিল অনেক। পাখির ছিল অভয়ারণ্য। অভয়ারণ্য ছিল শেয়াল-মেছোবাঘসহ বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণীর। সন্ধ্যার পরেতো বণ্যপ্রাণীর নিয়ন্ত্রণে থাকতো লেকটির দুই পাড়ের চলাচলের পথ। সন্ধ্যার পরে মানুষ ভয়ে বের হতো না। এখন সেসব পুরনো কথা। গল্পের মতো শোনায়। প্রাচীণ ম্যানগ্রোভে প্রজাতির কয়েক শ’ গাছ এখনো গহীন এই বনাঞ্চলের স্বাক্ষ্য দিচ্ছে। আবার বহু গাছ মরতে মরতে কঙ্কালের মতো ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে। লেকটি এখনো জোয়ার-ভাটায় জানান দিচ্ছে তার উপস্থিতি। যদিও আগের মতো স্রোত বয় না। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ লেকটির দুই পাড়ের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছপালা কেটে উজাড় করে বাড়িঘর, পুকুর মাছের ঘের করেছে। গাছগুলো মেওে ফেলা হচ্ছে। এরজন্য মূলত কলাপাড়া ভূমি অফিসের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মীরা দায়ী। কারণ তারা আশির দশকের দিকে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বেড়িবাঁধের বাইরের লেক পর্যন্ত বনাঞ্চলকে চাষযোগ্য কৃষি জমি দেখিয়ে কথিত ভূমিহীনদেও বন্দোবস্ত দিয়েছে। তারা দীর্ঘ বছরের পর বছর চুপচাপ ছিল। গত এক যুগ ধরে দখলে যাওয়া শুরু করে। যার ফলে বনাঞ্চল ধ্বংসের শেষ পর্যায়ে পৌছেছে। তারপরও মধুখালীর লেকটি এখনো দেখতে আকর্ষণীয়। নৌকা-ট্রলাওে ঘোরার সুযোগ রয়েছে। এটি সংরক্ষণ করতে পারলে যেমনি প্রকৃতি বাচবে তেমনি ঝড়-জলোচ্ছাস কালীন সবুজ দেয়াল থাকবে।
কলাপাড়া পৌর শহর থেকে কুয়াকাটাগামী বিকল্প সড়কের তুলাতলী চৌরাস্তা থেকে তেগাছিয়াগামী পাকা সড়কে সোজা পশ্চিমে গেলেই মধুখালীর এই লেকটির অবস্থান। উত্তর দক্ষিণ মুখো লেকটিতে আন্ধার মানিক নদীপথেও প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। লেকের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বিচরণ দেখার সুযোগ রয়েছে। সবসময়ে পাখির কোলাহলে মুখরিত থাকে লেকটি । একদা প্রকৃতির মনোরম এই লেকটি দিয়ে ছোট ধরনের একতলা লঞ্চ চলাচল করত বলে সেখানকার প্রবীণরা জানিয়েছেন। কিন্তু জলবায়ুর দ্রæত পরিবর্তনজনিত কারণে এখন পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। দুই পাড়ের অসংখ্য ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছ বনদস্যুরা কেটে উজাড় করে দিয়েছে। ফলে ক্রমশ বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির সৌন্দর্য মন্ডিত মধুখালীর লেকটি। লেকটির দুই পাড়ে রয়েছে মানুষের বসতি। একপাড়ে পশ্চিম মধুখালী এবং অপর পাড়ে পূর্ব মধুখালী গ্রাম। বনবিভাগের কর্মীদের চরম উদাসীনতায় লেকটির সৌন্দর্য অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের যোগসাজশে কেটে ফেলা হয়েছে হাজার হাজার ছইলা এবং কেওড়া বৃক্ষ। পরিবেশ সংগঠন নজরুল ইসলাম জানান, মধুখালী লেকটি পরিবেশ প্রতিবেশের জন্য রক্ষা করা জরুরি প্রয়োজন। বনবিভাগের উচিৎ এটির যথাযথ সংরক্ষণ করা।
লেক দিয়ে ট্রলার যোগে যাত্রীবহনকরা নৌচালক শহীদুল ইসলাম জানান, এই ভাড়ানি খাল বা নদীটি রক্ষা করা প্রয়োজন। এটিতে নৌকা চলাচল করে এবং মাছ ধরে বহু গরিব মানুষের জীবিকা চলে।
রাজু