
লিতুন জিরা
যশোরের মণিরামপুরে ‘হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেওয়া’ সেই অদম্য মেধাবী লিতুন জিরা এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলে বলীয়ান হয়ে মেধা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন তিনি। ভবিষ্যতে এই মেধাবী ও লড়াকু সন্তান সমাজের পিছিয়ে পড়া ও আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
এ শিক্ষার্থী মণিরামপুর উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। উপজেলার নেহালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি। বৃহস্পতিবার প্রথম দিনে ইউএনও নিশাত তামান্না পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে তাকে দেখে অভিভূত হন। এসময় এগিয়ে যাওয়ার পথে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাসও দেন ইউএনও।
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সাতনল খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও জাহানারা বেগম দম্পতির দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছোট লিতুন জিরা। বড় ছেলে ঢাকার একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন। জিরা পিইসি (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা) ও জেএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর, প্রাথমিকে বৃত্তি লাভ, শ্রেণির সেরা শিক্ষার্থীর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চায়ও রেখেছেন চমক জাগানো অবদান।
তার একাগ্রতা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মেনেছে। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি বা পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমেও স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি । জানা যায়, অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলে বলীয়ান হয়ে সব বাধা টপকে গিয়ে সমাজের ৮/১০ প্রতিভাবান স্বাভাবিক শিশুর মতোই এগিয়ে চলেছেন জিরা। বরং এক্ষেত্রে স্বাভাবিক শিশুর চেয়েও দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে চলেছেন লিতুন জিরা।
২০২৩ ও ২০২৪ সালে পর পর দুই বছর লিতুন জিরা উপজেলা পর্যায়ে মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রচনা প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন, একই সালে জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল অর্জনসহ একই বছরের ৪ জানুয়ারি খুলনা বেতারে গান গাওয়ার সুযোগ পান।
তার মা জাহানারা বেগম আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের পড়ালেখার প্রবল আগ্রহ এবং মেধার স্বাক্ষরতায় সেই আশঙ্কা আজ আশার আলোয় রূপ নিয়েছে তার কাছে।