
প্রথম অনলাইন বাস টার্মিনাল চালু হয়েছে কক্সবাজারে
দেশের ইতিহাসে প্রথম অনলাইন বাস টার্মিনাল চালু হয়েছে কক্সবাজারে। বৃহস্পতিবার থেকে চালু হওয়া এই অনলাইন বাস টার্মিনালে যুক্ত হয়েছে ইমার্জেন্সি এলার্ম বাঁটন। যার মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি বাসের যাত্রীরা কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে পুলিশি সহযোগিতা চাইলে এই ইমার্জেন্সি বাঁটন ক্লিক করে সহায়তা নিতে পারবে। শুধুমাত্র কক্সবাজার থেকে যাওয়া যাত্রীগণ এই সুবিধা পাচ্ছেন।
অনলাইন বাস টার্মিনাল বা ওবিটি। এই ওয়েব সাইটের মাধ্যমে সুবিধা পাবে যাত্রী ও পর্যটক, বাস অপারেটর, স্থানীয় সম্প্রদায়, পর্যটনশিল্প, নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ অনেকেই। গুগলে গিয়ে এই নাম দিয়ে সার্চ করলেই চলে আসবে বিস্তারিত। এই মাধ্যমে যে সকল সুবিধা যাত্রীগণ পাবেন তা হলো, ইমার্জেন্সিএলার্ম বাঁটন, সকল বাস সার্ভিসের শ্রেণিভিত্তিক তালিকা। গন্তব্য অনুযায়ী বাস সার্ভিসের তালিকা।
ট্রাফিক বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রতিদিনের সিডিউল ও বাস পরিবহনের ব্যবস্থাপনায় থাকবে দৈনিক বাসের সিডিউল। টিকিটমূল্য, বাসের রেজি নং, গাইডের নম্বর, বাস ছাড়ার স্থান ও গন্তব্য উল্লেখ থাকবে, সকল বাস, চালক ও গাইডের বিস্তারিত তথ্য সংযুক্ত থাকবে। থাকবে বাসের ফিটনেস ও রুট পারমিটের হালনাগাদ তথ্য। কাউন্টারে, বাসের ভেতরে ও বাইরে থাকবে কিউআর কোড সংযুক্ত পোস্টার।
স্ক্যান করে রিভিউ ও অভিযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি অভিযোগ ও দুর্ঘটনার ডিজিটাল ডাটা ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। ডিজিটাল বোর্ডে বাসের লাইভসিডিউল প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে যেমনটা বিমানবন্দর বা ট্রেন স্টেশনে রয়েছে।
এই সেবা আরও একধাপ এগিয়ে নিতে উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনলাইন বাস টার্মিনাল অ্যাপসে যুক্ত হয়েছে ইমার্জেন্সি এলার্ম বাঁটন। আপাতত কক্সবাজার থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোর যাত্রীরা এই সুবিধা পাবেন বলে জানান জেলা পুলিশ কক্সবাজার। উন্নত দেশে বাসে এই বাঁটন থাকলেও বাংলাদেশে এই অনলাইন বাস টার্মিনালের অ্যাপসের মাধ্যমে ইমার্জেন্সি এলার্ম বাঁটন চাপ দিয়ে সরাসরি পুলিশের সহায়তা নিতে পারবে সড়কে-বাসে থাকা যাত্রীগণ। তাই বাস যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ইমার্জেন্সি এলার্ম বাঁটন যুক্ত হলো অনলাইন বাস টার্মিনাল সিস্টেমে। যেটি নিরাপত্তার প্রয়োজনে যাত্রীর অবস্থান জানবে পুলিশ।
সম্প্রতি মহাসড়কে ডাকাতি, দস্যুতাসহ নারীদের যৌন হয়রানির মতো বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে দেশে। এই সকল ঘটনার প্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক নিরাপত্তা শাখা হতে যাত্রীসাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ পুলিশের কন্ট্রোল সিস্টেমের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিটি গাড়িতে ইমার্জেন্সি প্যানিক পুশ বাঁটন সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে একটা নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত ও সড়ক নিরাপত্তা জোরদারে এই সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত জরুরি ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ মনে করেন জেলা পুলিশ কক্সবাজার। কিন্তু প্রতিটি গাড়িতে ডিভাইস ইন্সটল করে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া বলে মনে করেন জেলা পুলিশ। তাই নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও পর্যটনবান্ধব ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে জেলা পুলিশ, কক্সবাজারের ডিজিটাল ইনোভেশন অনলাইন বাস টার্মিনাল সিস্টেমে যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তার লক্ষ্যে ইমার্জেন্সি এলার্ম বাঁটন সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার সাইফ উদ্দীন শাহীনের নির্দেশে সরকারের ইতিবাচক ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্তকে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সহজ ও ব্যবহারবান্ধব করে ওবিটিতে সংযুক্ত করার প্রয়াস নেওয়া হয় বলে জানান জেলা পুলিশের মিডিয়া ফোকাল অতিরিক্ত পুলিশ (ট্রাফিক) সুপার মো: জসিমউদ্দিন। পরিবহন খাতে যারা আছেন তারা মনে করছে ডিজিটাল ইনোভেশনে আরও একধাপ এগিয়ে গেছে অনলাইন বাস টার্মিনাল।
জেলা পুলিশ সূত্র জানান, অনলাইন বাস টার্মিনালের স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ভিজিট করে বাসের যে কোনো যাত্রী নিজের আসনে বসেই ইমার্জেন্সি এলার্ম বাঁটন ক্লিক করে জরুরিভিত্তিতে সহযোগিতা চাইতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে কক্সবাজার রুটে চলাচলরত বাস যাত্রীরা এই সুবিধা পাবেন।
কিভাবে কাজ করবে ইমার্জেন্সি এলার্ম সিস্টেম জানতে চাইলে জেলা পুলিশ কক্সবাজার জানান, একজন যাত্রী ওবিটির ওয়েবসাইট ভিজিটি করে যে পরিবহনের বাসে ভ্রমণ করছে সেই পরিবহনের পেইজ সিলেক্ট করলে লাল রঙের ইমার্জেন্সি এলার্ম বাঁটন দেখতে পাবেন। উক্ত বাঁটনে ক্লিক করলে প্রথমে মোবাইলে গুগলম্যাপ লোকেশন অন করার নির্দেশনা আসবে। গুগলম্যাপ লোকেশন অন করলে সঙ্গে সঙ্গে ইমার্জেন্সি এলার্ম পেইজে নিয়ে যাবে।
নামসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ইমার্জেন্সি রিপোর্ট সাবমিট বাঁটন ক্লিক করলে যাত্রীর অবস্থানের গুগলম্যাপের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ চলে যাবে ওবিটির এডমিন সাইটে। যাত্রী প্রয়োজনে মন্তব্যের কলামে জরুরি সহযোগিতার কারণটা উল্লেখ করতে পারবেন। কোনো যাত্রী ইমার্জেন্সি এলার্ম বাঁটন পুশ করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাবমিট করলে ওবিটির এডমিন সাইটে একটা নোটিফিকেশন যাবে। সেখান থেকে গুগলম্যাপে যাত্রীর অবস্থান সহজে জানা যাবে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, ওবিটি’র সাইটে থাকছে রুটে চলাচল সকল বাসের রেজি নং, চালক ও গাইডের নাম ও মোবাইল নাম্বার। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারবে। তাই কেউ ভুল করে কিংবা পুলিশকে হয়রানি করার জন্য ইমার্জেন্সি বাঁটনে পুশ করলে সেই বিষয়টাও খতিয়ে দেখা যাবে।
ওবিটি’র ডাটাবেজে কক্সবাজার রুটে চলাচলরত আন্তঃজেলা ও লোকাল সর্বমোট ১২৭টি বাস পরিবহনের প্রায় ১ হাজার ৯০০টি বাসের তথ্য, প্রায় ২হাজার ২০০জন ছবিসহ চালক ও গাইডের তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সকল বাসের ফিটনেস ও রুট পারমিটের হালনাগাদ তথ্যও রয়েছে ওবিটি’র ডাটাবেজে তাই ফিটনেস বিহীন মেয়াদোত্তীর্ণ বাসগুলো চিহ্নিত করা সহজে সম্ভব হচ্ছে। যাত্রীদের প্রদত্ত রেটিং, রিভিউ ও অভিযোগের মাধ্যমে দক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ চালকদের চিহ্নিত করা সহজতর হচ্ছে।
সড়ক নিরাপত্তা জোরদারের ক্ষেত্রে চালক, যানবাহন ও সড়ক ব্যবস্থাপনা ছাড়াও ব্যবহারকারী অর্থাৎ যাত্রী ও পথচারীদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। তাই বাস যাত্রীদের রিয়েল-টাইম রেটিং, রিভিউ ও মন্তব্য পর্যালোচনা করে চালকদের তদারকি এবং যাত্রীসেবা নিয়ে যাত্রীদের মন্তব্যের মধ্যে পরিবহন কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার মধ্য দিয়ে সড়ক নিরাপত্তা জোরদার করার কার্যকর বন্দোবস্ত রয়েছে অনলাইন বাস টার্মিনাল সিস্টেমে।
কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশ কক্সবাজার রুটের সম্মানিত বাস যাত্রীদের যাত্রী সেবা নিয়ে ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক মন্তব্য করে সড়ক নিরাপত্তা জোরদারে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহবান জানাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে ইমার্জেন্সি এলার্ম বাটন ক্লিক করে সহযোগিতা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। কক্সবাজার জেলা পুলিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন জানান, ইমার্জেন্সি এলার্ম সিস্টেম যাত্রীদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে এবং জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীর অবস্থান শনাক্ত করে দ্রুত সহযোগিতা প্রদান করা যাবে।