
ছবি: সংগৃহীত।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সাইজ উদ্দিন (স্পেনপ্রবাসী ও বিএনপি কর্মী) নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে নিহতের বড় ভাই হানিফ দেওয়ান রায়পুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ফারুক কবিরাজকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। তার ছোট ভাই মেহেদী কবিরাজসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৬০ জনকে আসামি করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া যায়নি।
সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুর সার্কেল) জামিলুল হক জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির ১৫ নেতাকর্মীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব জিএম শামীমকে বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
বুধবার রাতে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম মিঠু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সালেহ আহম্মদ ও সদস্য সচিব সফিকুর রহমান ভূঁইয়ার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আহ্বায়ক মিঠু বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল ও তাঁতীদলের যৌথ সভায় আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে ৭ এপ্রিল সংঘর্ষ, হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়।
৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি কর্মী মেহেদী কবিরাজ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এবাদ উল্যা গাজী, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ফারুক সর্দার ওরফে ফারুক কবিরাজ, ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফিক রাড়ী, ৮ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরিফ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী ফারুক গাজী ও রায়হান, ৬ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আল-আমিন কবিরাজ, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মানিক আহমেদ তারেক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর আলী হাওলাদার, স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী নজরুল ইসলাম, যুবদল কর্মী শরিফ বাগ, শাহজাহান মাঝি এবং ইউনিয়ন কৃষকদলের সদস্য সচিব শাহ আলী।
বহিষ্কৃতদের সঙ্গে কোনো প্রকার সম্পর্ক, উঠাবসা বা যোগাযোগ না রাখার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
গত ৭ এপ্রিল বিকেলে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা ফারুক কবিরাজ ও কৃষকদল নেতা জিএম শামীমের গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় স্পেনপ্রবাসী সাইজ উদ্দিন কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। নিহত সাইজ উদ্দিন ছিলেন কৃষকদল নেতা শামীমের অনুসারী।
ঘটনার জেরে তিনটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং অন্তত ১৫টি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর মেঘনার চর, মাছঘাট, বাজার ও কাঁচামালের আড়ত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইউনিয়নের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে—একপক্ষ জিএম শামীম গাজীর অনুসারী এবং অন্যপক্ষ ফারুক কবিরাজের অনুসারী। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ ও ২০ ডিসেম্বরও খাসেরহাট ও বাবুরহাট এলাকায় সংঘর্ষ হয়। তখনও অন্তত ১৫ জন আহত হন এবং বেশ কিছু বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা বিএনপি তখন পুরো ইউনিয়নের সব কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে দলীয় কার্যক্রম স্থগিত করলেও সংঘর্ষ থামেনি। সর্বশেষ ৭ এপ্রিল সংঘর্ষে একজন নিহত ও বহু আহত হন। এর জের ধরে আরও তিনটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়, অন্তত ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। বর্তমানে গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
নুসরাত