ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

দুদকের খবরে পোস্ট, সহকারী শিক্ষিকাকে শোকজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর 

প্রকাশিত: ১৫:২০, ১০ এপ্রিল ২০২৫

দুদকের খবরে পোস্ট, সহকারী শিক্ষিকাকে শোকজ

ছবি: জনকণ্ঠ

মাদারীপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানের সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করার অভিযোগে এক সহকারী শিক্ষিকাকে একসাথে দুজন কর্মকর্তা শোকজ চিঠি দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে পুরো জেলায় বইছে সমালোচনার ঝড়। এক কর্মদিবসের মধ্যে ওই শিক্ষিকাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। হুমকি দেওয়া হয়েছে বিভাগীয় মামলারও।

বুধবার দুপুরে রাজৈর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আরা ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম মিয়া চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। পরে অফিসে ডেকে ওই চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হয় রাজৈর উপজেলার ৪২নং খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লক্ষ্মী বিশ্বাসকে। যদিও চিঠিতে স্বাক্ষর করা দুই কর্মকর্তার দাবি, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তারা শোকজ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।

জানা গেছে, সম্প্রতি মাদারীপুর জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর তাদের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মনজুর রহমানের বিরুদ্ধে। একই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত উপ-আনুষ্ঠানিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ও শিক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ উঠলে, মঙ্গলবার সকালে দুদকের ৭ সদস্যের একটি টিম অভিযান চালায় মাদারীপুরে। যাচাই-বাছাই করা হয় প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র। এ সময় প্রশ্ন করলে অভিযুক্ত কর্মকর্তা মনজুর রহমান রেগে গিয়ে দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে প্রদান করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান দুদকের কর্মকর্তা।

দুই কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে দুদকের অভিযান নিয়ে তৈরি একটি সংবাদ একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয়। ওই সংবাদের লিংক ফেসবুকে শেয়ার করেন সহকারী শিক্ষিকা লক্ষ্মী বিশ্বাস। সরকারি কর্মচারী হিসেবে এমন সংবাদ শেয়ার করা সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। এ প্রেক্ষিতে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয় এবং এক কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সংবাদটি "ভাইরাল" করার উদ্দেশ্যেই তিনি এটি শেয়ার করেছেন। কেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়।

লক্ষ্মী বিশ্বাস বলেন, ‘এক শিক্ষা কর্মকর্তা ইনবক্সে সংবাদটি পাঠাতে বলেন। তাকে পাঠানোর সময় ভুলবশত ফেসবুকে শেয়ার হয়ে যায়। বিষয়টি বুঝে তাৎক্ষণিক লিংকটি মুছে ফেলি। কিন্তু বিষয়টি এত দূর গড়াবে, ভাবিনি।’

উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই আলাদা দুটি চিঠি করা হয়। ফেসবুকে শেয়ার করে ভাইরাল করার উদ্দেশ্যেই শিক্ষিকা লক্ষ্মী বিশ্বাস এমন করেছেন। তার জবাব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠানো হবে। পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন জেলা কর্মকর্তা।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আরা বলেন, ‘লক্ষ্মী বিশ্বাস সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশেই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’

মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নজরে এলে লক্ষ্মী বিশ্বাসকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। তার সঙ্গে অন্যায় কিছু করা হবে না।’

দুদক মাদারীপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই শোকজ চিঠি দিয়েছেন। একই ফরম্যাটে দুই কর্মকর্তা স্বাক্ষর করা দুঃখজনক এবং উদ্দেশ্যমূলক।’

শহীদ

×