
মাধবপুরে প্রচন্ড তাপদাহে বিভিন্ন গ্রামে ও চা বাগানে হাজারো মানুষের বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়া ও শুষ্ক মৌসুমে সেচের অধিক চাহিদার কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপ থেকে পানি আসছে না। তীব্র তাপদাহে শুকিয়ে যাচ্ছে সকল নিরাপদ পানির উৎস।
ফলে বাধ্য হয়ে গ্রামের স্বচ্ছল জনগোষ্ঠী নতুন করে সাবমারসিবল পাম্প বসাতে হচ্ছে। উপজেলার পাঁচটি চা বাগানের চা শ্রমিকরা কুপের পানি পান করে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। নিরাপদ পানির অধিকার বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই আবার দরিদ্র। বিশুদ্ধ পানির অভাব এখন ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানিবাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া,কলেরাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
তেলিয়াপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী চন্দ্রদেব কৈরী বলেন,তেলিয়াপাড়া এলাকায় নলকূপ থেকে পূর্বে দুই চাপ দিলে এক জগ পানি বের হতো। এখন এক জগ পানির জন্য নলকুপে বিশ চাপে এক জগ পানি বের করা কষ্টকর অবস্হা। অনেক নলকুপ থেকে পানি বের হচ্ছেনা। একই অবস্থা পুরো উপজেলার। নাজিরপুর গ্রামের কুদ্দুস মিয়া বলেন, আমার একটি নলকূপ ছিল। এটা দিয়ে খাবার পানি, গোসল সহ প্রয়োজনীয় কাজ করতাম কিন্তু হঠাৎ করে নলকূপ দিয়ে পানি আসা বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমি এখন নতুন করে সাবমারসিবল পাম্প (নিমজ্জিত পাম্প) বসাতে বাধ্য হলাম।
সুরমা চা বাগান ইউপি সদস্য লতিফ হোসেন বলেন, খরা মৌসুমে পাহাড়ি এলাকা সুরমা চা বাগানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গভীর অগভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পানি উঠা বন্ধ হচ্ছে। তাই শ্রমিক পরিবার বাধ্য হয়ে কুপের দূষিত পানি করছে। তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ইউপি সদস্য সাইমন মরমু বলেন, শুষ্ক মৌসুম এলেই উচুঁ এলাকা তেলিয়াপাড়া চা বাগানের বিশুদ্ধ পানি তীব্র সংকট দেখা দেয়। এ বছর তাপদাহ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার চা বাগানে পানির জন্য হাহাকার চলছে।
বিশুদ্ধ পানির অভাবে কূপের পানি পান করে সাধারণ চা শ্রমিকরা ডায়রিয়া সহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে ভুগছে। চা বাগানে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর পানির চাহিদা মেটাতে সরকারিভাবে ঘনবসতি এলাকায় গভীর নলকূপ বসালে শুষ্ক মৌসুমে চা বাগানে পানির সংকট দেখা দিতো না। এখন চা বাগানের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পানির এমন সংকট রয়েছে বৈকন্ঠপুর ও জগদীশপুর চা বাগানে।
মাধবপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী তুষার পাল জানান, গ্রাম ও চা বাগান এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন গভীর ও অগভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানি স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গ্রাম ও চা বাগান উচ্চ এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শুষ্ক মৌসুমে সেচের অধিক চাহিদা এবং দ্রুত নগরায়নের ফলে পানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বৃদ্ধি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন।
আফরোজা