ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

উত্তরাঞ্চলে চা উৎপাদনে বিপর্যয়, বৃষ্টির জন্য চাষিদের আহাজারি!

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী

প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ৯ এপ্রিল ২০২৫

উত্তরাঞ্চলে চা উৎপাদনে বিপর্যয়, বৃষ্টির জন্য চাষিদের আহাজারি!

ছবি: জনকণ্ঠ

অনাবৃষ্টির কারণে প্রখর রোদের খরায় পুড়ছে উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমির চা বলয়। ভালো মানের চা উৎপাদনের জন্য তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও লালমনিরহাটের চা বলয়ে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা করছে।

এছাড়া অধিকাংশ বাগানে ছায়াবৃত্ত (শেড ট্রি) না থাকায় চা-গাছগুলো প্রচণ্ড রোদ ও তাপদাহে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে লাল মাকড়সা, লুপারসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়েছে। পর্যাপ্ত পানির অভাবে কুঁকড়ে যাচ্ছে কচি পাতা। অতিরিক্ত খরচে সেচ দেওয়ার পরও গাছ ঝিমিয়ে পড়ছে, ফলে চাষিরা পড়েছেন বিপাকে।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কেবল তেঁতুলিয়ায় ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এর বাইরে উত্তরাঞ্চলের আর কোথাও উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়নি। গত দুইদিনে নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ, চিলাহাটি, ডোমার এবং তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সরাসরি ঘুরে দেখা গেছে চা-চাষিদের দুরবস্থা।

ক্ষুদ্র চা-চাষি কাজল, মোজাফ্ফর, মঞ্জু, নসিব, সারোয়ার, শাহিন, নুরুজ্জামান, আব্দুস সালাম, আব্দুল করিম, আহসান ও রিপন হোসেন জানান, চলমান তাপপ্রবাহে চা-গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। বারবার সেচ দিলেও কিছুক্ষণের মধ্যে পাতা ঝিমিয়ে পড়ছে। নতুন পাতা গজানোর আগেই কুঁকড়ে যাচ্ছে। কীটনাশক ব্যবহার করেও ফল মিলছে না। ফলে অতিরিক্ত খরচ করে লোকসানে পড়তে হচ্ছে।

তারা জানান, বুধবার রাতে তেঁতুলিয়া, শালবাহান ও দর্জিপাড়ায় সামান্য বৃষ্টি হয়েছে, যা তেমন কোনো কাজে আসেনি। টানা বৃষ্টি না হলে চা বলয়ের পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।

গত মৌসুমে পাঁচ জেলায় ১ কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার ১৫১ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ৩৫ লাখ ৫৭ হাজার কেজি কম। এবারও তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে উৎপাদন আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চাষিরা জানান, তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ ডিগ্রি বেশি হওয়ায় চা-গাছ ঝলসে যাচ্ছে এবং কুঁড়ি কুঁকড়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড জানায়, ২০২৪ সালে সারাদেশে ৯ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১ কোটি কেজি কম। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি উৎপাদন হয়েছে।

২০০০ সাল থেকে উত্তরাঞ্চলে সমতলে চা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে পাঁচ জেলায় নিবন্ধিত ১০টি ও অনিবন্ধিত ২০টি বড় চা-বাগান, ২১৭৪টি নিবন্ধিত ও ৬১৯৭টি অনিবন্ধিত ক্ষুদ্র চা-বাগান রয়েছে। বর্তমানে ১১ হাজার ৫২৬ দশমিক ৮৭ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে।

২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ে চালু হয় তৃতীয় (অনলাইনভিত্তিক) চা নিলাম কেন্দ্র। উত্তরাঞ্চলে ৫৩টি চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলায় ২৮টি এবং ঠাকুরগাঁওয়ে একটি কারখানা চালু রয়েছে।

চা বোর্ড জানায়, চা উৎপাদনের জন্য ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা আদর্শ। বর্তমানে এ তাপমাত্রা অতিক্রম করায় উৎপাদনে প্রভূত প্রভাব পড়ছে। অধিকাংশ বাগানে ছায়াবৃত্ত না থাকায় রোদে পোকার উপদ্রব বেড়েছে। চা বোর্ড চাষিদের কালো কড়ই ও সাদা শিরীষ গাছ রোপণের পরামর্শ দিয়েছে। এতে চা-পাতার মান উন্নত হয় এবং গাছ শীতল থাকায় পোকার আক্রমণ কমে যায়। ছায়াবৃত্ত থেকে ঝরে পড়া পাতা জৈব সার হিসেবেও কাজে লাগে।

শহীদ

×