ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

আধিপত্য বিস্তারে খুনের পর এবার বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ

মহিউদ্দিন মুরাদ, নিজস্ব সংবাদদাতা, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ০০:০৯, ৯ এপ্রিল ২০২৫

আধিপত্য বিস্তারে খুনের পর এবার বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ

ছবি: জনকণ্ঠ

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি কর্মী সাইজ উদ্দিন দেওয়ান (৪০) খুনের পর এবার হামলা চালিয়ে তিনটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং আট-দশটি বসতঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের বাবুরহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ রয়েছে, রায়পুর উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব জিএম শামীমের অনুসারীরা উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহমেদ উল্যা গাজী, উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন খান ও সদস্য আনোয়ার মালের বসতঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ভুক্তভোগীরা উপজেলা বিএনপির সদস্য ফারুক কবিরাজের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উত্তর চরবংশী ইউনিয়নে উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব জিএম শামীম ও উপজেলা বিএনপির সদস্য ফারুক কবিরাজের লোকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এর জের ধরে দুই দফায় শামীম ও ফারুকের নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে ওই ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষকদলসহ সব অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম বিলুপ্ত করা হয়।

সোমবার (৭ এপ্রিল) আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেড়ি ও বাবুরহাট এলাকায় কৃষকদল নেতা শামীম গাজী ও ফারুক কবিরাজের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক গাজীর লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে একজন নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হয়।

ঘটনার সময় বিল্লাল মাঝি, আবু তাহের মাঝি, জিহাদ হোসাইনের বসতবাড়িতে শামীমের অনুসারীরা ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এর জের ধরেই মঙ্গলবার দুপুরে ফের হামলা চালিয়ে শামীম গাজীর অনুসারীরা ফারুক কবিরাজের লোকজনের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। পরে স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে কেউ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি।

দু’পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ, হামলা-ভাঙচুর, হত্যা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এলাকায় বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কৃষকদল নেতা শামীম ও বিএনপি নেতা ফারুক কবিরাজের লোকজন ৫ আগস্টের পর দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। এরমধ্যে সাইজ উদ্দিন খুন হয়েছেন। তিনি শামীমের অনুসারী ছিলেন। এর জের ধরে শামীমের অনুসারীরা ফারুক কবিরাজের অনুসারীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে।

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, “সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়। তবে মঙ্গলবার রাত ৯টা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। ফলে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। কেউ থানায় কোনো মামলাও করেনি। মামলা করলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, না হলে পুলিশ নিজেই মামলা করবে।”

তিনি আরও বলেন, “ঘটনাস্থল এলাকায় এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। কয়েকটি বসতঘরে আগুন লাগানো হয়েছে। লুটপাটেরও খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।”

উল্লেখ্য, নিহত বিএনপি কর্মী সাইজ উদ্দিন রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চরগাসিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিন মাস পূর্বে তিনি স্পেন থেকে দেশে ফেরেন। কিছু দিনের মধ্যে স্ত্রী-সন্তানসহ স্বপরিবারে স্পেনে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর।

ঘটনার সময় তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে ফেরার পথে সংঘর্ষে দুই পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর মাঝে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে নিজ দলের অপর পক্ষের লোকজন। হাসপাতালে নেওয়ার সময় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়। এতে অধিক রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয় বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

যার ফলে স্বপরিবারে তাঁর স্পেন যাওয়া আর হলো না। তবে তিনি কোনো সক্রিয় কর্মী ছিলেন না। স্পেনে ফিরে যাওয়ার পর সেখানে দলীয় পদবী পাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তিনি এলাকায় সাধারণ লোকজনকে বিভিন্ন আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছিলেন— এমনটিই জানিয়েছে এলাকার লোকজন।

এম.কে.

আরো পড়ুন  

×