ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২

উত্তাল জুলাইয়ের যে গান গুলো এখনো নাড়া দেয়!

ছামিয়া ইসলাম আঁখি

প্রকাশিত: ১১:১৯, ৮ এপ্রিল ২০২৫

উত্তাল জুলাইয়ের যে গান গুলো এখনো নাড়া দেয়!

ছবি : সংগৃহীত

২০২৪ সালের উত্তাল জুলাই মাসে বাংলাদেশজুড়ে যে গণ-আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে, তা ছিল একটি যুগান্তকারী জনজাগরণ- সরকারি অব্যবস্থাপনা, স্বৈরতান্ত্রিক দমন-পীড়ন ও গণতন্ত্র হরণের বিরুদ্ধে সরব জনতার বজ্রকণ্ঠ। এই আন্দোলনে শুধু রাজনৈতিক বাণী বা মিছিলই ছিল না, বরং একে প্রাণবন্ত করে তুলেছিল সংগীত, এক শক্তিশালী প্রতিবাদের মাধ্যম।

 

আন্দোলনের সময় রচিত এবং গীত হওয়া গানগুলো কেবলমাত্র শিল্প বা বিনোদনের অংশ ছিল না, বরং তা পরিণত হয়েছিল প্রতিবাদ, ঐক্য এবং সংগ্রামের হাতিয়ারে। এই গানগুলোতে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরব, ভাষা আন্দোলনের আত্মত্যাগ এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা। সংগীতের সুর ও কথায় আন্দোলনকারীদের আবেগ, ক্ষোভ, ও আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকে উজ্জীবিত করেছে।

 

গানগুলোর এক বড় বৈশিষ্ট্য ছিল স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা ও শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কটাক্ষ। উদাহরণস্বরূপ, ইথুন বাবুর লেখা ও মৌসুমী চৌধুরীর কণ্ঠে পরিবেশিত “দেশটা তোমার বাপের নাকি” গানটি ২০২২ সালে প্রকাশ পেলেও, ২০২৪ সালের আন্দোলনে আবারও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এটি সরাসরি রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি ও একচ্ছত্র ক্ষমতার বিরুদ্ধে একটি জোরালো প্রতিবাদ।

 

এই সময়ের আরেকটি আলোচিত গান আসে পারসা মাহজাবীন পূর্ণীর কণ্ঠে, যেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতা নিয়ে লেখা হয় হৃদয়বিদারক এক সঙ্গীত। উকুলেলেতে সুর দেওয়া গানটি ফেসবুকে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। গানের কথা—  
*“ভুলে যাই আমি, ভুলে যাও তুমি, ভুলে যাক পুরো জাতি…”*  
এই গানটি আন্দোলনরত তরুণদের ভেতরে এক গভীর আবেগ ও প্রতিজ্ঞার জন্ম দেয়। আবু সাঈদ ও মুগ্ধর মতো শহিদদের স্মরণে লেখা এ গান আন্দোলনের ইতিহাসে এক আবেগঘন অধ্যায় হয়ে রইল।

 

 

‘শূন্য’ ব্যান্ডের *“শোনো মহাজন”* গানটি এক দশক আগে তৈরি হলেও এই আন্দোলনে যেন নতুন করে প্রাণ পায়। গানটির বেশ কিছু পঙ্ক্তি হয়ে ওঠে জনপ্রিয় স্লোগান, যা টিকটক, ফেসবুক, ইউটিউবের মতো সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ইমরুল করিম এমিলের কণ্ঠে ধ্বনিত এই গান আন্দোলনের প্রতিটি মিছিল ও সমাবেশে নতুন মাত্রা যোগ করে।

 

গানের পাশাপাশি কিছু স্লোগানও আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যেমন,  
 তুমি কে? আমি কে?
রাজাকার রাজাকার।
কে বলেছে, কে বলেছে 
স্বৈরাচার স্বৈরাচার।


বুকের ভিতর ভীষণ ঝড়
বুক পেতেছি, গুলি কর

 


দড়ি ধরে মারো টান
রাণী হবে খান খান। 
এই স্লোগান পুলিশি দমন-পীড়নের মুখেও আন্দোলনকারীদের সাহস যুগিয়েছে এবং প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার মানসিক শক্তি দিয়েছে।

 


২০২৪ সালের এই গণআন্দোলন শুধু রাজনীতির ইতিহাস নয়, সাংস্কৃতিক ইতিহাসেও এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যেখানে গান হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের ভাষা, সুর হয়ে উঠেছে বিপ্লবের ঢেউ। সংগীত, কাব্য এবং স্লোগানের সম্মিলনে গড়ে উঠেছিল এক সামাজিক ঐক্য, যা রাষ্ট্রক্ষমতার বিরুদ্ধে জনতার শক্তিকে সুদৃঢ় করেছিল।  

×