ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

সিরাজগঞ্জে বোরো আবাদে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জনের সম্ভাবনা

নাজমুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ থেকে ফিরে

প্রকাশিত: ০১:৩১, ৮ এপ্রিল ২০২৫

সিরাজগঞ্জে বোরো আবাদে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জনের সম্ভাবনা

সিরাজগঞ্জে এবার বোরো উৎপাদন ভালো

উত্তারঞ্চলের কৃষি নির্ভর জেলা সিরাজগঞ্জে এবার বোরো উৎপাদন ভালো হবে বলে আশা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। বোরো আবাদ ভালো হওয়ার প্রধান শর্ত হলো ধানের গোড়ায় পানি থাকতে হবে। সারাদেশে অতিমাত্রায় তাপ প্রবাহ থাকার কারণে অনেক জেলায় উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

তবে সিরাজগঞ্জ জেলা নদী মাতৃক ও নিচু অঞ্চল হওয়ায় সেচ পদ্ধতি খুবই সহজ। যে কারণে লক্ষ্য মাত্রা পূরণে শতভাগ আশ্বাস দেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা আজ. জা. মু. আহসান শাহীন সরকার।  
এই কৃষি কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, সিরাজগঞ্জ জেলায় এ মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, এক লাখ ৪১ হাজার টন। যা শতভাগ অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে গত বছর এক লাখ ৪১ হাজার ৭৫০ টন অর্জন হয়েছিল। ৫০ শতাংশ জমিতে ধানের থোর ধরেছে এবং ৫ শতাংশ শীষ ধরেছে। তিনি আরও জানান, সিরাজগঞ্জ নিচু অঞ্চল হওয়াতে জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে কোনো ধরনের শঙ্কা নেই।

তাড়াশের চলনবিল, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ সদর ও চৌহালী উপজেলায় কৃষি জমিতে পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা রয়েছে। এই জেলায় এখন পর্যন্ত কোথাও অতিরিক্ত লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ বিভ্রান্তের অভিযোগ আসেনি। 
দেশে বোরো মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদিত হয়। সাধারণত আমন মৌসুম শেষ হবার পর বরো মৌসুম শুরু হয়। নভেম্বর মাসে চারা রোপণ শুরু হয় গ্রীষ্মকালে এপ্রিল-জুনে কৃষক ধান সংগ্রহ করতে পারে। এই ধানের মূল ফলন বসন্তকালে হওয়ায় অনেকের কাছে বসন্তিকা ধান নামেও পরিচিত। 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) তথ্যমতে, সারাদেশে এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ টন। আর এবার বোরো আবাদ করা হবে ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৪৬ টন। আবাদকৃত জমিতে ধানের শীষ ধরতে শুরু করেছে।
কয়েক  মাস ধরেই দেশে বৃষ্টিপাত নেই। রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, সৈয়দপুর, ফেনী, মৌলভীবাজার, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।  এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধানের ফলন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। 
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি কর্মকর্তা আহসান শাহীন সরকার জানান, এরই মধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) পক্ষ থেকে তাপপ্রবাহ থেকে ধান রক্ষায় আগাম সতর্কতা দিয়ে বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করা হয়েছে। জমিতে ছত্রাক আক্রমণ রোধে জেলা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। ফলন বৃদ্ধির জন্য  কৃষকদের মাঝেও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তাদের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।   
বুলেটিনে তাপপ্রবাহের কারণে ধানের ক্ষতি রোধে জমিতে সর্বদা ৫-৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জমিতে যেন কোনোভাবেই পানির ঘাটতি না পড়ে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। চলমান তাপপ্রবাহে ধানের শীষ ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

আর আক্রান্ত হলে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই বিকেলে ৫ শতাংশ জমির জন্য ১০ লিটার পানিতে ৮ গ্রাম ট্রুপার বা ৬ গ্রাম নেটিভো মিশিয়ে স্প্রে হিসেবে পাঁচদিনের ব্যবধানে দুবার ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনাবৃষ্টি ও তাপমাত্রা বাড়ায় ব্লাস্টের ঝুঁকি বাড়ছে। ব্লাস্ট হয়ে গেলে বৃষ্টির পরও তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন ধানের চিটা বাড়বে। তাই আগাম ব্যবস্থা হিসেবে ওষুধ ছিটাতে হবে। আবার এখন কালবৈশাখী ঝড় হলেও ধানগাছ হেলে পড়তে পারে। এতে গাছের পাতা ঝরা রোগ দেখা দিতে পারে। তাই কৃষকদের এখন সচেতন হতে হবে।
দেশের কৃষি অনেকটাই প্রকৃতিনির্ভর। তাই আবহাওয়ার প্রতি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে কৃষিবিদ সালমা লাইজু জনকণ্ঠকে বলেন, ‘তাপমাত্রা আরও বাড়লে ধান চিটা হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে, যা সার্বিক উৎপাদনের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে। আর ব্লাস্ট হয়ে গেলে বৃষ্টি হলেও তা ছড়িয়ে পড়বে।

তাই আগাম ব্যবস্থা হিসেবে ট্রুপার বা নেটিভো স্প্রে করতে হবে। এটাই কৃষকদের জন্য কমন সাজেশন। তবে এখন বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। তখন ধান গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গাছ হেলে পড়তে পারে। তখন পাতা ঝরে পড়তে পারে। তবে ভালো বৃষ্টির পর তাপমাত্রা কমে এলে ঝুঁকিও কমে আসবে।’
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে বোরোর উৎপাদন ছিল ২ কোটি ১০ লাখ টন। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ কোটি ৭ লাখ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ কোটি ১ লাখ টন ও ২০২০-২১ অর্থবছর ১ কোটি ৯৮ লাখ টন ধান উৎপাদন হয়। কৃষির বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের সেচ ব্যবস্থা সহজীকরণ করতে হবে। বালাইনাশকের দামও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।  জ্বালনি তেলের দাম বৃদ্ধির কারেণ অনেক অঞ্চলের ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।

×