
ছবি: জনকণ্ঠ
শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকের বিদায় বেলায় শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ধারিয়ারচর হাজী ওমর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ফরিদ উদ্দিন।
সোমবার (৭ এপ্রিল) সকালে সহকারী শিক্ষকের অবসরগ্রহণ উপলক্ষে রাজকীয় বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বিদ্যালয়ের সহকর্মী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
জানা যায়, ১৯৮৭ সালে ধারিয়ারচর হাজী ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয় দিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন মো. ফরিদ উদ্দিন। এরপর ২০২৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর প্রায় দীর্ঘ ৩৭ বছর ২ মাস শিক্ষকতা শেষে অবসরে ঘোষণা দেন এই সহকারী শিক্ষক।
প্রিয় শিক্ষকের অবসর গ্রহণের সময় শিক্ষককে ফুল দিয়ে বরণ করে স্কুলে নিয়ে আসেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তারপর মঞ্চে উঠিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় চারপাশের পরিবেশ যেন ভারি হয়ে উঠে। শিক্ষাগুরুর ভালোবাসার স্মৃতিচারণ করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
বিদায়ী অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘তিনি আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছেন। তার দেওয়া পথে আমরা অনেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, স্যারের স্মৃতি ভোলার নয়। তিনি আমাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থল স্থায়ী হয়ে থাকবেন। তিনি চিন্তায় ও মননে ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক বা আঞ্চলিক দলাদলির ঊর্ধ্বে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। যে জ্ঞানের প্রদীপশিখা তিনি এ অঞ্চলে প্রজ্বলিত করে গেছেন, তার ঋণ শোধ করার মতো নয়। স্যারের নিরলস কর্মজীবনে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, ত্যাগ ও আদর্শ আমাদের সমগ্র জীবনের দিশারি হয়ে থাকবেন।’
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক কারিয়া বেগম বলেন, ‘স্যারের শূন্যতা কখনই পূরণ হওয়ার নয়। স্যার অনেক ভালো শিক্ষক ছিলেন। স্যারকে আমরা আমাদের চাকুরি জীবনের শুরু থেকেই দেখেছি তিনি কখনোই সময়ের অপব্যবহার করতেন না। যথা সময়ে আসতেন এবং যথা সময়ে চলে যেতেন। স্যারের নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতা থেকে আমরা সহকারী শিক্ষকরা অনেক কিছু শিখেছি।
দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে এমন সম্মান পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন বিদায়ী শিক্ষক মো. ফরিদ উদ্দিন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন সহকর্মীসহ শিক্ষার্থীরা। চোখে জল নিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে অবসরে যান তিনি।
ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকতা করেছি। এ সময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করানো, বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। আমি চেষ্টা করেছি সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করতে। ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্ট সবাই আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন, তাতে আমি গর্বিত ও আনন্দিত। এই ভালোবাসাকে পুঁজি করেই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারব।
তিনি আরও বলেন, আমি চাই আমার ছাত্ররা যেন ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ করতে পারে। সমাজের জন্য, দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে পারে। এ ব্যাপারে তারা যেন সর্বদা সজাগ থাকে। এতেই আমি শান্তি পাব।
শহীদ