
পাবনা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া থেকে রাতের অন্ধকারে অসংখ্য পেঁয়াজবাহী ট্রাক খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে প্রবেশ করছে। গত বছর পেঁয়াজের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা এবার উৎপাদন বাড়িয়েছেন, ফলে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি হয়ে পড়েছে। সাধারণত এ সময় ২০ থেকে ২২টি ট্রাক পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও এবার ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাক পেঁয়াজ বাজারে প্রবেশ করছে। কিন্তু অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না।
মেহেরপুরের স্থানীয় পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি মাত্র ২২ থেকে ২৩ টাকায়, দেশি পেঁয়াজ ৩২ টাকা এবং হাইব্রিড (হালি) পেঁয়াজ ৩৬ টাকা দরে। অথচ হাইব্রিড পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকদের খরচ পড়ে কেজিপ্রতি ৩৮ টাকা। ফলে কৃষকরা তাদের পণ্য বাধ্য হয়ে লোকসানে বিক্রি করছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরাও একই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, কারণ বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা কম থাকায় তাদের গতানুগতিক বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না।
ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা স্থানীয় পেঁয়াজের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দামি। তবে উচ্চমূল্যের কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের বিক্রিও কমে গেছে, ফলে আমদানিকারকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, যদি কৃষকরা ক্রমাগত লোকসানের শিকার হন, তাহলে আগামী মৌসুমে তারা পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। এতে দেশের পেঁয়াজের উৎপাদন কমে গিয়ে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা বাড়বে, যা দীর্ঘমেয়াদে বাজারের জন্য ক্ষতিকর।
বাংলাদেশে বছরে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে, যার মধ্যে ২০ থেকে ২৫ লাখ টন দেশেই উৎপাদিত হয়। কিন্তু বর্তমান সংকটে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারি হস্তক্ষেপ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্থানীয় পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে এবং আমদানিনির্ভরতা কমাতে কার্যকর নীতি গ্রহণ প্রয়োজন। অন্যথায়, উৎপাদন খরচ ও বাজার দরের মধ্যে এই অসামঞ্জস্য কৃষকদের পেঁয়াজ চাষ থেকে বিরত করবে, যা ভবিষ্যতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
সূত্র:https://youtu.be/8JZJ5HV1O7I?si=LGf7WJUdA32IQbfO
আঁখি