ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১

খরস্রোতা বড়াল এখন মরা খাল

সংবাদদাতা, ভাঙ্গুড়া, পাবনা

প্রকাশিত: ২১:২৮, ৬ এপ্রিল ২০২৫

খরস্রোতা বড়াল এখন মরা খাল

দখল-দূষণ আর অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করায় মরে যাচ্ছে নদী

পাবনার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, ফরিদপুর এবং নাটোরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোতা বড়াল নদী এখন নাব্য হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এর তলদেশে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন ফসল। দখল-দূষণ আর অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদীর বুকে পলি জমে উঁচু হয়েছে। দখল আর দূষণের কারণে দুই পাড় চেপে গেছে। ফলে খরস্রোতা বড়াল নদী আজ পরিণত হয়েছে মরা খালে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ও অকালবন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য বড়াল নদীর উৎপত্তিস্থলে একটি সুইসগেট নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া আটঘড়িয়া, দহপাড়ায় ও পাবনার চাটমোহরে ক্রস বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে প্রায় তিন যুগ সময় পদ্মার পলিযুক্ত পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বড়াল নদীতে বন্ধ থাকায় নাব্য হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া নদীর দুই পাড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিল-কারখানা  ও বাড়িঘর নির্মাণ করে নদী দখল করে চলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

এতে নদীর  অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে পড়েছে। বর্তমানে বড়াল নদীটি শুকিয়ে যাওয়ায় চলনবিলের ৮টি উপজেলার মধ্যে নৌ-চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেমে এসেছে স্থবিরতা।জানা যায়, সড়কপথে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীরা স্বল্পখরচে নৌপথে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, আরিচাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্য পরিবহন করে আসছিলেন। এখন নৌপথ বন্ধ থাকায় সড়কপথে অধিক খরচে পণ্য পরিবহন করতে হয়।
ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন জানান, নদীতে পানি না থাকায় এ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলো তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান এক সময়ে এই বড়াল নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হলেও এখন আর নদীতে মাছ শিকার করা হয় না। পানি না থাকায় অনেক জেলে আজ অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। 
বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব ও বাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম মিজানুর রহমান বলেন, রাজশাহীর পদ্মা থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত বড়ালসহ প্রায় ১০টি নদী আছে। পদ্মা থেকে বাঘাবাড়ি ২২০ কিলোমিটার নদী পথের মধ্যে নদী দখল করে ৫৬টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

এবং নাটোরে ও রাজশাহীর চারঘাট এলাকায় দুটি স্লুইসগেট হয়েছে। এগুলো অপসারণ করা হলেই নদী আবারও প্রাণ ফিরে পাবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। অচিরে স্থাপনা ও স্লুইসগেট ভেঙে ফেলা হবে। যদি তা না হয়, তাহলে আন্দোলন গড়ে তুলব।

×