
ছবিঃ সংগৃহীত
পেয়ারা বেগম সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য, দারিদ্রতা যার নিত্যসঙ্গী। জীবনযুদ্ধে লড়াই করে তাকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে সারাক্ষণ। ২০২২ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে উপজেলার জোড্দা পূর্ব ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন পেয়ারা বেগম। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হয়েও নিজের দারিদ্র্যের চক্র থেকে বের হতে পারেননি তিনি। এখনও তাকে মানুষের সাহায্যের ওপর নির্ভর করেই চলতে হয়। বর্তমানে তিনি জনপ্রতিনিধি হয়েও ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
পেয়ারা বেগম উপজেলার শ্রীহাস্য বাজারের পূর্ব পাশে মৌকরা ইউপির চাঁন্দগড়া গ্রামের মোস্তফা নামে এক ব্যক্তির জরাজীর্ণ টিনের ঘরে ছেলে সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও তাকে ভিক্ষা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। চার সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে তাকে চরম দারিদ্র্যের শিকার হতে হয়েছে প্রতিনিয়ত।
১৯৯৯ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর মাত্র আড়াই বছর পর তার প্রথম সন্তান জন্ম নেয়। দুর্ভাগ্যবশত শিশুটি শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়। সন্তানের চিকিৎসার খরচ জোগাতে স্বামীর নামে থাকা ছয় শতক জমি বিক্রি করতে বাধ্য হন তিনি। এরপর থেকেই শুরু হয় নিসঙ্গতার যাত্রা। বাধ্য হয়ে হাতে তুলে নেন ভিক্ষার থালা, হয়ে যান ভূমিহীন।
বর্তমানে তার বড় ছেলে পেয়ার আহমেদ (২৩) শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও কোনো সরকারি ভাতা পাচ্ছেন না। সংসারের বোঝা কিছুটা লাঘব করতে তিনি ট্রেনে ভিক্ষা করেন। তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চালান ইউপি জনপ্রতিনিধি।
শ্রীহাস্য বাজারের ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, “গত ২২ সালের নির্বাচনে আমরাই তাকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি বানাই। কিন্তু সংসারের অভাব-অনটন নিয়েও সে এলাকার মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। তার বড় ছেলে প্রতিবন্ধী, তাও আবার ট্রেনে ভিক্ষা করে জীবন চলে।”
ভূমিহীন পেয়ারা বেগম তার সন্তানদের নিয়ে ঘর করে থাকার এক শতক জায়গাও নেই। অন্যের ভাঙা টিনশেড ঘরে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দিনাতিপাত করছেন।
এ বিষয়ে পেয়ারা বেগম স্বামী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে ঘর করার জন্য সমাজের বৃত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন। পেয়ারা বেগম বলেন, “বিয়ের পর প্রথম সন্তান প্রতিবন্ধী হয়েছে। চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে সব হারিয়ে ফেলেছি। সংসারের অভাব মেটাতে নিরুপায় হয়ে ভিক্ষার থালা হাতে নিতে হয়েছে। তবু আমি সৎ পথে থেকে জনগণের সেবা করে যাচ্ছি। অথচ এখনও নিজের সংসার চালাতে আমাকে মানুষের সাহায্য নিতে হয়।”
এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল আমিন সরকার বলেন, “পেয়ারা বেগমের পরিবারের এই দুঃসহ অবস্থা আমাদের জানা ছিল না। দ্রুত তার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। তার যেন আর ভিক্ষার প্রয়োজন না হয়, সে বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
মারিয়া