ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১

বিনোদনকেন্দ্রে পর্যটকের ভিড়

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ৪ এপ্রিল ২০২৫

বিনোদনকেন্দ্রে পর্যটকের ভিড়

সিলেটের বিছনাকান্দিতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়

পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির আমেজ যেন কাটছেই না। চলমান লম্বা ছুটির পঞ্চমদিন শুক্রবারও দেশের হোটেল-মোটেল, সমুদ্র সৈকত, নদীর তীর, পর্যটন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন বিনোদন স্পটে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ছাড়া পরিবার-পরিজনসহ এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন লোকজন। আবার কেউ ছুটছেন সিনেমা হলে। দেশের বিভিন্ন জেলার জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলো এখন পর্যটকে ঠাঁসা।

সিলেটের জনপ্রিয় স্পটগুলো এখনো কোলাহলপূর্ণ। এ ছাড়া রাজশাহীর পদ্মার তীরসহ আরও বিভিন্ন মনোরম জায়গা, নীলফামারীর তিস্তাপাড়, মাদারীপুরের শকুনি লেকের পাড় ও সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর তীরসহ বিভিন্ন জায়গায় লোকজন আপন মনে সময় কাটাতে ব্যস্ত। 
সিলেট অফিস থেকে সালাম মশরুর, রাজশাহী থেকে  মামুন-অর-রশিদ, নীলফামারী থেকে তাহমিন হক ববি, মাদারীপুর থেকে সুবল বিশ্বাস ও সিরাজগঞ্জ থেকে বাবু ইসলাম এসব তথ্য জানান।
সিলেটের পর্যটন স্পটগুলো এখনো লোকে লোকারণ্য। খালি নেই জেলার হোটেল মোটেল ও রিসোর্টগুলো। এক কথায় পর্যটন স্পটগুলোতে এখনো পর্যটকের ঢল । ঈদের পরদিন থেকে সারাদেশের পর্যটকরা ছুটে আসছেন সিলেটে। স্থানীয়রাও আছেন।

সিলেটের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথর, গোয়াইনঘাটের জাফলং, জৈন্তাপুরের লালাখালসহ অন্যান্য পর্যটন স্পট ও চা বাগানগুলোতে পর্যটকরা ছুটছেন দলবদ্ধ হয়ে। সবুজের গালিচা বিছানো  ছোট-বড় পাহাড় টিলা বেষ্টিত প্রকৃতির নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্য উপভোগ করতে জাফলং এলাকায় পর্যটকদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। অন্যান্য সময়ের  চেয়ে এবার ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় তুলনামূলক অনেক বেশি।
শুক্রবার ঈদের ছুটির ৫ম দিনেও বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় দেখা গেছে ভ্রমণপ্রিয়দের। জাফলং, বিছনাকান্দি, সোয়াম ফরেস্ট রাতারগুল ছাড়াও পানতুমাই ঝরনা, জাফলং চা বাগান ও মায়াবী ঝরনায় পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ঈদের প্রথম দিন থেকে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। পর্যটকদের আগমনকে ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে হোটেল মোটেল রিসোর্টের ব্যবসা। বিভিন্ন  স্পটে পসরা সাজিয়ে  অস্থায়ী টং  দোকানের ছোট ব্যবসায়ীরাও  দেদার ব্যবসা করছেন।  
পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মিডিয়া সাইফুল ইসলাম জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিনোদন কেন্দ্রের ভেতর ও কেন্দ্রগুলোর বাইরে পুলিশের টহল সব সময় আছে। কারও কোনো সমস্যা হলে আমাদের অবহিত করলে আমরা ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সাদাপাথর এলাকায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার গণমাধ্যমে বলেন, পর্যটন কেন্দ্রে আসা মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা ও সুব্যবস্থা নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি।

আমাদের এখানকার থানা পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন। ঈদের মৌসুম হওয়ার কারণে আমরা ১২ জন আনসার মোতায়েন করেছি, সেইসঙ্গে থানা পুলিশের একটি টিম কাজ করছে। পর্যটকদের গাড়ি পার্কিং এরিয়াতে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করেছে। নৌঘাট থেকে প্রায় দেড় হাজার নৌকা পর্যটন স্পটে যাওয়া আসা করছে।

কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। চারদিকেই বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এবারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের সমাগমে জাফলং পর্যটনকেন্দ্র পর্যটকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।  জাফলং চাবাগান মোহাম্মদপুর থেকে শুরু করে জাফলং জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকদের আনাগোনায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব পরিবার-পরিজন শিশু-কিশোরদের আনন্দ উল্লাসে জাফলংয়ের সবুজ প্রকৃতিতে এখন অন্যরকম প্রাণচাঞ্চল্য।
শুক্রবারও জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ছাড়াও বিছনাকান্দি,  সোয়াম ফরেস্ট রাতারগুল, স্বচ্ছ ও নীল পানির লালাখাল, পান্তুমাই ঝর্ণাসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে ছিল ব্যস্ততা। এসব স্পট সারাক্ষণ পর্যটকদের পদচারণায় মুখর। হরেক রকম গাড়ির বহরে ও আবাল বৃদ্ধ বনিতা নানা শ্রেণি পেশার মানুষের আগমনে উপজেলার সব জায়গায় এখন মানুষের কোলাহল হই হুল্লোড়ে আকাশে বাতাসে আনন্দের হাওয়া বইছে।  ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা ও নিয়মিত নিরাপত্তার জন্য কাজ করছেন।
পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে টুরিস্ট পুলিশ, গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ, বিজিবি, বাংলাদেশ স্কাউট, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট ও আনসার সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে।
জাফলং টুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ঈদের ছুটিতে সকাল থেকেই পর্যটকে মুখর ছিল জাফলং। আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন।
লাক্কাতুড়া চা বাগান সিলেট নগরীর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি। সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশ, উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ, আর চায়ের সবুজ গালিচায় মোড়ানো এই বাগান শহরের কোলাহল থেকে দূরে এক প্রশান্তির স্থান হিসেবে নগরবাসীর কাছে পরিচিত। সারাবছরই এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের চাপ আরও বেড়েছে।
রাজশাহী ॥ রাজশাহী শহর থেকে প্রতিনিয়ত সরে যাচ্ছে পদ্মার পানির গতিপথ। শহরের তীরঘেঁষে চর জেগেছে। এ অংশেই এই অবস্থা নয়, জেলার গোদাগাড়ী ও চারঘাট বাঘায় পদ্মা নদীর ৬০ ভাগ এলাকা এখন পানিশূন্য। কিছু এলাকায় পানি থাকলেও গভীরতা সামান্য। 
এই পানিতেই নৌকা ভাসিয়ে চরের বালুরাশিতে আনন্দ খুজে পাচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। পদ্মার রাজশাহী অংশে এখন পদ্মা রূপ নিয়েছে অসংখ্য খ- খ- খালে আর বালুরাশিতে। সেখানেই যেন সুখ খুঁজে পাচ্ছেন মানুষ। 
এখন ঈদের ছুটি চলছে। এবার টানা ছুটি। ঈদের বেশ কয়েকদিন পর শুক্রবার বিকেলেও রাজশাহীর পদ্মা ঘিরে হাজারো মানুষের জটলা। তাপ্রবাহের কারণে দুপুরে ভিড় কম থাকলেও বিকেল হতেই দর্শনার্থীদের ভিড়। শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে পদ্মাপাড়।
শুধু নদীকেন্দ্রিক নয়, রাজশাহীর অন্যতম বিনোদনের স্থান হচ্ছে শহীদ জিয়া শিশুপার্ক, বড়কুঠি পদ্মার পাড়, সীমান্ত নোঙর, ভদ্রা শিশুপার্ক, রাজশাহী চিড়িয়াখানা ও কেন্দ্রীয় উদ্যান। সব জায়গায় কয়েকদিন ধরেই মানুষের উপচে পড়া ভিড়। অনেক জায়গায় পা ফেলার মতো জায়গাও মিলছে না। 
সবেচেয়ে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের ভিড় চোখে পড়ার মতো। শান্ত নদীতে নৌকা ভ্রমণে আগ্রহ দর্শনার্থীদের। শুক্রবার নাচোলের লক্ষীপুর থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন শিশু ঊর্মি। সে জানায়, পদ্মাপাড়ে ঘুরতে এসেছে নৌকায় চড়েছে। ওপারে গেছে আবার ফিরে এসেছে। পদ্মানদী এখন শান্ত। ঢেউ নেই। তাই বাচ্চাদের নিয়ে নৌকায় উঠছেন অভিভাবকরাও।
বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে আসা শিক্ষক ইয়াকুল আলী জানান, চাকরি জীবনে অবকাশ পাওয়া কঠিন। তাই ছুটিতে শিশুকে নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছেন। আগে থেকেই বায়না ধরে রেখেছিল ঈদের ছুটিতে রাজশাহীর সব পার্ক ঘুরবে। শেষে পদ্মা নদীতে নৌকায় উঠবে। ঈদের ছুটি বেশ উপভোগ করছেন তিনি। 
তিনি বলেন, ঈদের ঘোরাঘুরিতে কিছুটা বাগড়া দিচ্ছে গরম। প্রচ- গরমে মানুষ যেন দুপুরে বের হতেই পারছে না। এত গরমে বের হলে শিশুরাও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় ঘিয়ে দেখা যায় নৌকার মাঝিদের হাঁকডাক। তবে যাবে কোথায়! কোনো গন্তব্য আছে কি। নদীর ওপারে তো বালুরাশি। তবে হ্যাঁ ওপারেই শুকিয়ে জেগে ওঠা বিশাল বালুরাশিই যেন এবারের ঈদে বিনোদনপ্রেমীদের নতুন ঠিকানা। পদ্মা পাড়জুড়ে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে উৎসবমুখর পরিবেশ। অনেকে নৌকায় চড়ে পদ্মার বুকে ভেসে বেড়াচ্ছেন, নদীর বাতাসে প্রাণ জুড়াচ্ছেন, আর পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করেন ঈদের আনন্দ।
শুকনো পদ্মার এই বিশাল বালুরাশিও এক অনন্য নৈসর্গিক দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। যা সহজেই যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমীর মন কেড়ে নেয়। রাজশাহীর বালুচরেই সমুদ্র সৈকতের রূপ খুজছেন অনেকে। নদীর বালুচর আর বয়ে চলা বাতাসের কারণে রাজশাহীর পদ্মা এখন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে রাজশাহীর পদ্মার শহর অংশ ছাড়াও গোদাগাড়ী, চারঘাট ও বাঘার বিস্তীর্ণ এলাকা দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
রাজশাহী নগরীর শ্রীরাপুর এলাকার বাসিন্দা আকরাম আলী বলেন, ‘একসময় পদ্মার উত্তাল ঢেউ আর গর্জন ছিল মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু কালের বিবর্তনে নদী তার সেই রূপ হারালেও, নতুনভাবে বিনোদনের স্থান হয়ে উঠেছে এখন  নদীর বুকে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ বালুরাশি। এখন পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুদের নিয়ে দলবেঁধে আসা মানুষ ঈদের আনন্দে ভাসছেন। নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আবার কেউ বালুর চরে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
দর্শনাথীরা বলছেন ‘পদ্মার এই নতুন চর আমাদের কাছে এক নতুন বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন হাজারো মানুষ। 
ঈদের ছুটি পুরোপুরি কাজে লাগাতে এখন শান্ত পদ্মার কাছেই ছুটছেন রাজশাহীবাসী। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে না হতেই মহানগরীর মানুষের ঢল নামছে পদ্মার পাড়ে। ঈদের ছুটিতে রাজশাহী শহর এখন ফাঁকা। চিরচেনা প্রাণচাঞ্চল্য অনুপস্থিত। তবে স্থানীয়সহ যারা রাজশাহীতে ঈদ উদযাপন করেছেন তারা ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে নিতে ভিড় করেছেন চিরচেনা পদ্মায়। 
নীলফামারী ॥ খরা মৌসুমে হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর বুকে ঢেউ তুলেছে। সেই ঢেউ এ তিস্তা পাড়ে ঈদ বিনোদনে মানুষজন পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ উৎসবে  মেতে উঠেছেন। নদীর পানি প্রবাহে ভেসে উঠা চর তলিয়ে গেছে। সেখানে ছুটে চলছে পালতোলা নৌকাসহ স্পিড বোট। নদীর ঠান্ডা পানিতে তীব্র তাপপ্রবাহ উপেক্ষিত।

এতেই দেশের সর্ববৃহৎ ডালিয়াস্থ তিস্তা ব্যারাজে লোকে ভরপুর। বলতে  গেলে তিস্তা নদী ঘিরে দর্শনার্থীর পদচারণা এবারও ঈদ উপলক্ষে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এ যেন সমুদ্রের তীরের সৈকতের ছোঁয়া। রীতিমতো সেখানে গ্রামীণ মেলা বসেছে। নানা রকম পণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে দোকানগুলো। বিভিন্ন খেলনা, বাঁশি, বেলুন, মাটির গাড়ি ও খাবারের দোকান।  ঈদের দিন বিকাল থেকে এই ঢল শুরু হয়।
শুক্রবার সরেজমিন গেলে দেখা যায় মানুষজনকে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে। বলতে গেলে উৎসব আর আনন্দে মেতে উঠেছে পুরো তিস্তা ব্যারাজ এলাকা। পর্যটকদের উৎসাহিত করতে ডালিয়া এলাকায় তিস্তার বুকে ১২টির বেশি ¯িপড বোট চলছে। এগুলো দ্রুত বেগে এ পাশ থেকে ওপাশে ছুটে চলছে পর্যটকদের নিয়ে। ¯িপডবোট ও পালতোলা নৌকায় মাত্র ৬০ টাকায় তিস্তার ঢেউ খেলানো বুকে ভাসছেন দর্শনার্থীরা। এতে সববয়সী মানুষ হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠছেন। নদীর পানি  বড় বড় ঢেউ এসে ধাক্কা দিচ্ছে তিস্তার কূলে। ছিটকে আসা জলরাশির আনন্দে মেতে উঠছে সবাই। 
প্রতিবছর ঈদ ও নানা উৎসবে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয় তিস্তা ব্যারাজ এলাকা। এবারও তার ঘাটতি হয়নি। ঈদের প্রথম দিনের দুপুরের পর থেকে শুক্রবার  পর্যন্ত ব্যারাজ এলাকায় দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষণীয়। বিভিন্ন স্থান থেকে কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ অটোরিক্সায় আবার কেউ মাইক্রোবাসে করে আসছেন। পাশাপশি ব্যারাজ এলাকায় বসেছে বিভিন্ন দোকানের পসরা।

ঘুরতে আস দর্শনার্থীরা বলেন, ঈদ আনন্দে প্রতিবছর এই তিস্তা ব্যারাজে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। বছরে দুই দিনে  পরিবার পরিজন নিয়ে এই ব্যারাজে ঘুরতে আসি। অনেক আনন্দ উপভোগ করি। এই জায়গাটি পর্যটন এলাকা ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।দর্শনার্থী আসিফ বলেন, ঈদের দীর্ঘ ছুটি থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে তিস্তা ব্যারাজে এসেছি। তিস্তা ব্যারাজে ¯িপড বোটে উঠে আরও আনন্দ লাগছে।

এ সময় তিস্তা ব্যারাজে আনন্দের স্মৃতির হিসেবে ফ্রেমবন্দি করছেন প্রিয় মুহূর্তগুলো। ঘুরতে আসা দর্শনার্থী রাজিয়া আক্তার  বলেন, প্রতি বছর ঈদ ও নানান উৎসবে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় ছুটে আসি। রাজধানীতে বন্দি জীবনের পর ঈদে গ্রামে এলে আমি আমার ছেলেমেয়েদের নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। এখানে এসে অনেক মজা করেছি যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এটাই আমাদের কাছে প্রকৃতির বড় বিনোদনের আস্থা।

আরেক দর্শনার্থী মোস্তাফ বলেন, আমরা ঢাকা শহরে গ-ির মধ্যে বসবাস করি। কোথাও প্রকৃতির বিনোদনে যেতে পারি না। তাই ঈদে সন্তানদের নিয়ে তিস্তা ব্যারাজে ছুটে আসছি। এতে বাচ্চারা অনেক আনন্দ পাচ্ছে। এখানে বিশাল এলাকা জুড়ে মেলার মতো দোকান বসেছে। খাবার দোকান রয়েছে। সব মিলে সারা দিন ভালো কাটছে। তিস্তায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সাবরিনা ইয়াসমিন বলেন, প্রতিবছর ঈদে এবং নানা উৎসবে আমরা পরিবার নিয়ে তিস্তা এলাকায় আসি।

এখানে এসে আমরা অনেক মজা করেছি, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। রংপুর থেকে আসা শোবন ও মিলা বলেন, ‘নদীর বুকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া আশির দশকের পালতোলা নৌকাগুলো দেখতে বেশ ভালো লাগছে। এগুলো আমাদের মতো অন্যদেরও নজর আকৃষ্ট করছে, এবং আমরা ক্যামেরায় কিছু মুহূর্ত বন্দি করতে পেরেছি।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা থেকে আসা সুজন ইসলাম ও রনি ইসলাম জানান, তিস্তা ব্যারাজের নাম প্রতিবছর বন্যার সময় পত্রিকায় পড়েন, টিভিতে দেখেন। এবার ঈদের ছুটিতে সরাসরি দেখতে তাঁরা ছুটে এসেছেন। এখানে এসে বেশ ভালো লেগেছে তাঁদের। আগামী বছর এখানে আবার আসার ইচ্ছা আছে।
ঝালমুড়ি-চানাচুর ও আচার বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, ঈদের এই আন্দ উৎসব শনিবার পর্যন্ত চলবে।   বাহারি খেলনা বিক্রি করে ভালো ব্যবসা হচ্ছে বলেও জানালেন খেলনা বিক্রেতা সুভাষ চন্দ্র রায়। এখানে ভাতের হোটেল সহ বিভিন্ন মুখোরোচক খাবারের দোকান রয়েছে। ঘুরাঘুরি পাশাপাশি পরিবার পরিজন নিয়ে মানুষজন খাওয়া দাওয়াও সেরে নিচ্ছেন। তিস্তাপাড়ের ঠান্ডা বাতাস যেন চলমান তাপপ্রবাহকে ম্লান করে দেয়। তিস্তা নদীর ধারে একেবারে গ্রাম্য পরিবেশে হলেও নিরাপত্তা নিয়ে তেমন কোনো ঝুঁক্কি পোহাতে হচ্ছেনা দর্শনার্থীদের। 
ব্যারাজ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্য আনারুল ইসলাম বলেন, ঈদের আনন্দ উৎসবে  প্রথম দিন এখানে প্রচুর যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও চেষ্টা করেছি ঘুরতে আসা মানুষদের নিরাপত্তা দিতে। পাশাপাশি হাতিবান্ধা ও ডিমলা থানা পুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিশ প্রতিক্ষণ দর্শনার্থীদের নিরাপক্তা দিয়ে যাচ্ছেন। 
খরা মৌসুমে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধির বিষয়ে  ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপ অপারেটর নুরুল ইসলাম বলেন, মার্চ পর্যন্ত নদীতে পানি কম থাকে। তবে এপ্রিলে নদীর প্রবাহ বেড়ে যায়। এটি নদীর দীর্ঘদিনের নিয়ম। তিনি আরও জানান, মার্চ মাসে নদীর পানি প্রবাহ গড়ে আড়াই হাজার কিউসেক থাকলেও এখন এপ্রিলে এসে পানির প্রবাহ ৭/৮ হাজার কিউসেকে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন দিন যত যাবে ধীরে ধীরে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। 
সিরাজগঞ্জ ॥ ওই দুর বহু দুরে, তবে দৃষ্টি সীমার মধ্যে ঘরবাড়ি গাছ-পালা, যমুনা রেল সেত ুদিয়ে  ট্রেন সড়ক সেতুতে নানা যানবাহন হেড লাইট জ¦ালিয়ে যাচ্ছে। চাঁদের আরো আকাশ থেকে জলরাশিতে থালার মতো ভেসে উঠছে।
সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। আবার কাছেই প্রমত্ত যমুনা, তবে  শান্ত। নদীতে ভাসছে নৌকা। যমুনার পাড়ে শানবাঁধানো ঘাট। ওপরে মনিষীদের  ছবিসহ সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য, শিশুদের বিনোদনের জন্য পার্ক, টাইলস মোড়ানো শানবাধা বেঞ্চ, মাথার ওপর ছাতা নানা স্থাপনায় নদীকেন্দ্রিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সিরাজগঞ্জের হার্ডপয়েন্ট। বিনোদনের নতুন জগৎ। ঈদের পরে ৫ম দিন শুক্রবারও বিনোদন প্রেমিদের ভিড় কমেনি। প্রেম যমুনার ঘাটে পরিণত হয়েছে শহর রক্ষা বাঁধ বা হার্ড পয়েন্টে।
যমুনার আগ্রাসান থেকে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষায় নির্মিত বিদেশী প্রযুক্তিনির্ভর আড়াই কিমি হার্ড পয়েন্ট এখন সিরাজগঞ্জবাসীর বিনোদনের প্রধান কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। আবার মাঝে মধ্যে হার্ড পয়েন্টে ধস নামলেও আতঙ্কিত হয়ে হাজারো মানুষ ভিড় জমান। অনেকের কাছে এ পরিস্থিতিও এক প্রকার বিনোদন।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটিতে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষাহার্ড পয়েন্ট ও যমুনার নির্মিত চারটি ক্রসবার বাঁধে হাজারো বিনোদনপ্রেমীর উপচে পড়া ভিড়। ঈদের দিন থেকেই সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ বা হার্ড পয়েন্টে, মোল্লাবাড়ি ক্রসবার বাঁধ, শৈলাবাড়ী ক্রসবার বাঁধ, খোকশাবাড়ি ক্রসবার বাঁধ ও পাইকপাড়া এলাকার ক্রসবার বাঁধগুলোতে নারী, পুরুষ, ছেলেবুড়ো সব বয়সী মানুষের ভিড় দেখা যায়।
প্রতিদিন বিকেল হলেই প্রকৃতি কন্যা যমুনার নির্মল বাতাসে গা ভাসিয়ে দিতে উদগ্রীব মানুষগুলো এখানে ছুটে আসেন। যমুনাও তার স্নিগ্ধ সমীরণ ঢেলে ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি প্রাণ জুড়িয়ে দেয় প্রকৃতি প্রেমীদের।
শুক্রবার বিকেলে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে যমুনাপাড়ের হার্ডপয়েন্টে এসেছিলেন ব্যাংকার শহিদুল ইসলাম। চিত্ত বিনোদনের জন্য যমুনা পাড়ের চেয়ে সুন্দর আর কোনো জায়গা নেই। তিনি জানান, এখানে এল চোখে পড়ে নদীতে ভাসছে নৌকা। যমুনার পাড়ে শানবাঁধা নৌকা ঘাট।  উপরে মনিষীদের  ছবিসহ সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য, শিশুদের বিনোদনের জন্য পার্ক, টাইলস মোড়ানো শানবাধা বেঞ্চ, মাথার উপর ছাতা এমন অনেক নানা স্থাপনা। যা চিত্তাকর্ষক।
কলেজ পড়–য়া শহরতলীর শহীদগঞ্জ মহল্লার বর্ষণ, রুদ্র ও সৈকত বলেন, বিকেল হলেই আমরা এখানে যমুনার স্নিগ্ধ বাতাসে গা জুড়াতে  ছুটে আসি। প্রতিটা ছুটির দিনেই আসি, একদিন হার্ড পয়েন্টে, কোনোদিন ৩ নম্বর ক্রসবার বাঁধ আবার কোনো দিন অন্য ক্রসবার বাঁধে ছুটে যাই। এখানে এসে যমুনার বুকে ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ তুলে নৌকা চলাচলের দৃশ্য দেখে মন জুড়িয়ে যায়।
জান্নাতুল ফেরদৌস নামে একজন স্কুল শিক্ষিকা বলেন, প্রতিটি মানুষের কাজের পাশাপাশি চিত্তবিনোদনের প্রয়োজন আছে। বিনোদনের জন্য সিরাজগঞ্জের চারটি ক্রসবার বাঁধের মতো সুন্দর জায়গা আর হয় না। হার্প পয়েন্টে দাঁড়ালেই চোখে ভেসে ওঠে যমুনা রেলওয়ে ব্রীজরে ওপর দিয়ে রেলগাড়ী চলাচালের নয়াভিরাম দৃশ্য। শিুদের জন্যও রয়েছে শিশুপার্কে বিনোদনের ব্যবস্থা।
সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় আগ্রাসী যমুনা অপার সৌন্দর্যে পরিণত হয়েছে। এখানে এখন হাজার হাজার মানুষ এখানে এসে নির্মল বিনোদন উপভোগ করে।
মাদারীপুর॥ জেলায় এখনো কাটেনি ঈদের আমেজ। ঈদকে ঘিরেই চলছে আনন্দ-উৎসব। আজো শহরের শকুনী লেকেরপাড়ে ভিড় করছেন হাজারো দর্শনার্থীরা। সকাল থেকে রাত অবধি শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন মনের আনন্দে। লেকের চারদিকে ঘোরাফেরার পাশাপাশি উপভোগ করছেন মনোরম দৃশ্য।

প্রতিদিন সন্ধায় নানা রঙের আলোয় রাঙিয়ে তোলা হয় শকুনী লেকের চারপাশ। কেউ পৌর শিশু পার্কে সন্তানকে নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। যেকোনো বিশেষ দিনে শকুনী লেক মূল বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়। ঈদের সময় লেক ঘিরে দর্শনার্থীদের ভিড় যেন আরও জমে ওঠে। দর্শনার্থীদের জন্য বাড়তি আনন্দ নিয়ে এসেছে পায়ে চালানো নৌকা বা প্যাডেল বোট। এখানে ঘুরতে আসেন ফরিদপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলার ভ্রমণ পিপাসুদের পাশাপাশি বিনোদনপ্রেমীরা।
২০১৬ সালে সাড়ে ২২ কোটি টাকা খরচ করে লেকের সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। এর আওতায় লেকের চারপাশে ওয়াকওয়ে, ওয়াচ টাওয়ার, আধুনিক মানের রেস্টুরেন্ট, শিশুপার্ক, রয়েছে স্বাধীনতা অঙ্গনসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরি করা হয়। এছাড়া লেকের চারপাশে গড়ে উঠেছে ১৫টি ছোট-বড় চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। সেই সঙ্গে ঈদকে কেন্দ্র করে বাহারি সৌখিন পণ্য ও বাচ্চাদের নানা খেলনা সামগ্রীর পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। প্রতি ঈদের মতো এবারও দর্শনার্থীদের মিলনমেলা বসেছে লেকের পাড়ে। রাতেও কমতি নেই লোকের আনাগোনা। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সদর মডেল থানা পুলিশ।
বরিশালের উজিরপুরের ধামুরা থেকে আসা উজ্জ্বল শেখ বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে লেকে ঘুরতে আসছি। খুবই মজা হচ্ছে। প্রাকৃতিক বাতাস আনন্দ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।’ শরীয়তপুরের জারিজার নাওডোবা থেকে আসা মনির সরদার বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাদারীপুরের শকুনী লেকে ঘুরতে আসি। এবারও এসেছি। খুব ভাল লাগছে। বাচ্চারাও আনন্দ করছে।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোকছেদুর রহমান বলেন, ‘জেলার সবচেয়ে বড় বিনোদনকেন্দ্র শকুনী লেক। এই লেকের চারপাশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘোরাফেরার পাশাপাশি কেনাকাটা করতে পারছেন।
নিজস্ব সংবাদদাতা, মাগুরা থেকে জানান, ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে  মাগুরায় অনেকে রাজবাড়ি দেখতে  ভীড় করছেন। জেলার মহম্মদপুরে রয়েছে রাজা সীতারাম রায়ের কাচারী বাড়ি। প্রতœতত্ব বিভাগ এটা সংস্কার করেছে। রাজবাড়ি দেখতে অনেকে ভিড় করছেন। অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে আসছেন। এ ছাড়া মহম্মদপুরের মধুমতি নদীর ওপর সেতুটি দেখতে অনেকে আসছেন।

×