
ছবিঃ সংগৃহীত
সরকার পতনের মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্মাণাধীন দলীয় কার্যালয় আজ অবৈধ দখলদারদের হাতে। নির্মাণকাজ এখনো এক তলাও পূর্ণাঙ্গভাবে শেষ না হলেও ভবনের নিচতলা দখল করে চালানো হচ্ছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম—প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি ফার্নিচার কারখানা।
দলীয় সূত্র ও স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, ভবনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে। অথচ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও সাংগঠনিক অভিভাবকত্ব হারিয়ে ফেলায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের হাতে। এই দখলদারি স্থানীয় আওয়ামী লীগের অব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্বের শূন্যতার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।
স্থানীয় দুই ব্যবসায়ী আশরাফ উদ্দিন ও মোস্তফা মিয়া, দলীয় কোনো অনুমোদন বা ভাড়া ছাড়াই, গত অক্টোবর মাস থেকে ভবনের দুটি ইউনিট দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্মাণ অসম্পূর্ণ হলেও নিচতলার ব্যবহারযোগ্য অংশকে তারা কার্যত আত্মসাৎ করে ফেলেছেন।
দখলদার আশরাফ উদ্দিন বলেন, “ভবনটি ফাঁকা পড়ে ছিল। অসামাজিক কাজ হতো। তাই আমি কারখানা দিয়েছি।”
মোস্তফা মিয়া বলেন, “জায়গা খালি ছিল দেখে কাজে লাগিয়েছি। কাউকে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করিনি।”
এই বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগে কীভাবে সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়—আর ক্ষমতা হারালে দলের অস্তিত্ব কীভাবে হয়ে পড়ে গৃহহীন, অভিভাবকহীন।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক একেএম ভিপি মুছা বলেন, “দলীয় অফিস দখল করে বাণিজ্য করা কোনো রাজনৈতিক সৌজন্যের মধ্যে পড়ে না। এটা দায়িত্বহীনতা ও অনৈতিকতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত।”
এই অবস্থা আওয়ামী লীগের জন্য আত্মসমালোচনার বড় কারণ। এটি দলটির তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক অবক্ষয়, নেতৃত্বহীনতা ও সম্পদ ব্যবস্থাপনায় চরম ব্যর্থতার প্রতীক।
একসময় যে দল ক্ষমতায় থেকে দেশ চালিয়েছে, আজ তাদের স্থানীয় কার্যালয় রক্ষা করতেও ব্যর্থ—এটাই বাস্তবতা। ক্ষমতা হারানোর সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের অবকাঠামোও কীভাবে ভেঙে পড়ে, বাঞ্ছারামপুরের দলীয় কার্যালয় যেন তার জীবন্ত উদাহরণ।
এ যেন রাজনৈতিক পরিণতির এক নির্মম প্রতিচ্ছবি—যেখানে দল ক্ষমতার সিংহাসন থেকে নামার পর নিজেদের ঘরও আর নিজেদের থাকে না।
মারিয়া