
ছবি: জনকণ্ঠ
লাঙ্গলবন্ধ হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক পুণ্যভূমি। এখানে হাজার বছর ধরে এই উৎসব পালন করা হচ্ছে। তবে লাঙ্গলবন্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে এখানকার স্থাপনা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমরা সরকারিভাবে প্রকল্প নিয়ে এখানে শুধু তিন দিনের জন্য নয়, বরং সারা বছরের জন্য পুণ্যার্থীদের ভ্রমণ ও পর্যটনের ব্যবস্থা গড়ে তুলবো।
শুক্রবার (৪ঠা এপ্রিল) সন্ধ্যায় স্নান-পূর্ব অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
তিনি আরও বলেন, এই অনুষ্ঠান কীভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়গণ। ভারত থেকে আগত পুণ্যার্থীদের স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, "এটা আপনাদেরই জায়গা। আপনারা নির্ভয়ে ও স্বাচ্ছন্দ্যে আপনাদের উৎসব পালন করুন।" সেই সঙ্গে তিনি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পক্ষ থেকে পুণ্যার্থীদের সুসংবাদ প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে স্নান উদযাপন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, লাঙ্গলবন্ধ স্নান সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ত্রেতা যুগের ঘটনা। তিনি এ সময় এই স্নানের কিংবদন্তি ঘটনা তুলে ধরে বলেন, "আমাদের পুরান মতে, দেবতা পরশুরাম হিমালয়ের মানস সরোবরে স্নান করে পাপমুক্ত হন। এরপর লাঙ্গল দিয়ে চষে হিমালয় থেকে এ পবিত্র জলকে ব্রহ্মপুত্র নদরূপে নামিয়ে আনেন লাঙ্গলবন্ধের সমভূমিতে। এখানে এসেই পরশুরামের লাঙ্গল চলা বন্ধ হয়ে যায়, যে কারণে এই জায়গার নাম লাঙ্গলবন্ধ হয়েছে।"
লাখ লাখ তীর্থযাত্রী পুণ্য লাভের আশায় ইতোমধ্যেই লাঙ্গলবন্ধে জড়ো হয়েছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডাঃ মশিউর রহমান বলেন, "স্নানকে সফল করতে আমি নারায়ণগঞ্জেই ঈদ উদযাপন করেছি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি, যেন কেউ বলতে না পারেন যে, গতবারের চেয়ে আয়োজন ও নিরাপত্তায় ঘাটতি রয়েছে।"
তিনি আরও জানান, পুণ্যার্থীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় মেডিক্যাল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে এবং নদের দুই পাড়েই তাদের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন—নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ইউসুফ খান টিপু, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া হিরণ, সাধারণ সম্পাদক লিটন, স্নান উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের নেতা প্রবীর কুমার সাহা, স্নান উদযাপন কমিটির সাবেক সভাপতি প্রত্যুষ কুমার সাহা, শঙ্কর কুমার সাহা, বাপ্পী রায় চৌধুরী, শিখর মণ্ডল সাহা এবং স্নান উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বন্দর উপজেলার ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান।
বক্তব্য প্রদান শেষে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা ঐতিহ্যবাহী রাজঘাট পরিদর্শন করেন এবং পুণ্যার্থীদের সার্বিক খোঁজখবর নেন। এ সময় পুণ্যার্থীরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
স্নান উৎসবের নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাশাপাশি স্পেশাল ফোর্স হিসেবে লাঙ্গলবন্ধে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে পুণ্যার্থীরা অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এবং তারা বলছেন, "এমন দৃশ্য নজিরবিহীন।"
উল্লেখ্য, মহাঅষ্টমীতে লাঙ্গলবন্ধে আজ রাত ২:৫৪ মিনিট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্নান শুরু হয়ে চলবে শনিবার দিবাগত রাত ১২:৫১ মিনিট পর্যন্ত।
এম.কে.