
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে বিনোদন খোঁজা দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়
মোবাইল ব্যবহার করতে নিষেধ করায় নামাজরত অবস্থায় বাবাকে ছুরিকাঘাত করে মেরে ফেলে ছেলে। কতটা নৃশংস এ কাজ। দেশে বর্তমানে হাজারো নৃশংসতার জঘন্য দৃষ্টান্তের একটি এটি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ খবরটি সচেতন মানুষকে উৎকণ্ঠায় ফেলেছে। এভাবে সন্তানের কাছে বাবা, বাবা-মায়ের কাছে সন্তানও এখন অনিরাপদ হয়ে গেছে। ভাই-ভাই, ভাই-বোন কলহ তো নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ তো হারহামেশা। পারিবারিক বন্ধন এখন ঠুনকো হয়ে গেছে। আর বংশের বন্ধন তো গেছে ছিন্নভিন্ন হয়ে। মানব সভ্যতার আদি সংগঠন হচ্ছে পরিবার। পরিবার থেকেই গড়ে উঠে সমাজ। সুন্দর ও সুস্থ সমাজ প্রতিষ্ঠায় আদর্শিক পরিবার অপরিহার্য। পারিবারিক বন্ধন ছিল আমাদের গর্ব। কিন্তু গত এক যুগের ধারাবাহিক সমাজিক অস্থিরতায় মানুষের সকল বন্ধন যেন ছিন্ন হয়ে গেছে। সহিংসতা পৌঁছেছে শেষ প্রান্তে। সব যেন অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।
বাড়ি-ঘর, পরিবার, মহল্লা, গ্রাম, সমাজভিত্তিক বন্ধন, সামাজিকতা সব যেন বন্ধনহীন হয়ে গেছে। অসুস্থ সংস্কৃতির অস্থির ধারা বহমান গোটা দেশে। তারপরও সমাজে কিছু কিছু কর্মকা- প্রশংসা কুড়ায়। শেখায় অনেক কিছু। শেখায় করণীয় দিকগুলো। জোগায় প্রেরণা। যা হয়ে ওঠে একে অপরের জন্য অনুকরণীয়।
আর এমন এক অনুষ্ঠান ছিল আলিফ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বংশ কিংবা গোষ্ঠীর বন্ধন ধরে রাখার এক মিলনমেলা। সাত পুরুষের অস্তিত্ব ধরে রাখতে শেকড়ের সন্ধানে কলাপাড়ার ঐতিহ্যবাহী সিকদার পরিবারের মিলনমেলায় দেখা গেল বন্ধন কত জরুরি প্রয়োজন।
বাবার বাবা, তার বাবা, এভাবে সাত পুরুষকে প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে ঐক্যের বন্ধনে দৃঢ়তার সঙ্গে আঁকড়ে রাখার যেন এক নিরন্তর চেষ্টা। অসহিষ্ণু মানসিকতার মানুষের কাছে, পরিবারের কাছে, গ্রামভিত্তিক সমাজের কাছে একটি উদাহরণ সিকদারদের প্রতিষ্ঠিত আলিফ ফাউন্ডেশন। দৃঢ় এই পারিবারিক বন্ধন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোর পথ দেখাবে।
কলাপাড়া পৌরশহরের বড় সিকদার বাড়িতে ঈদ পরবর্তী মিলনমেলায় কয়েক হাজার সিকদারদের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে পারিবারিক বন্ধনের দৃঢ়তার জানান দেওয়া হয়েছে। পরিবারটির শত শত নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সব বয়সীদের ছিল প্রাণখোলা উপস্থিতি। অনুষ্ঠানে অন্তত দুই শ’ বছর ধরে আজ অবধি সিকদার বংশের প্রদীপ জ¦ালানো মানুষগুলোর পরকালীন-ইহকালীন কীর্তিমান কৃতকর্ম তুলে ধরা হয়েছে।
একই সঙ্গে সুশৃঙ্খল পরিবেশে খাওয়া-দাওয়া। খোশ মেজাজে একে অপরের খোঁজ-খবর নেওয়া। এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করার মতো পারিবারিক মিলনমেলার আয়োজন করা হয়। বিশেষ দোয়া-মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শান্তি কামনা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিকদার পরিবারের কৃতিমান মানুষ হাজী হুমায়ুন সিকদার। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আলিফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি গণমাধ্যম কর্মী এসএম মোশারফ হোসেন সিকদার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সিকদার পরিবারের স্বজন বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আহসান হাবিব মিলন, ইঞ্জিনিয়ার মো. নাসির উদ্দিন, শাহজালাল বিমান বন্দরের পরিচালক আবদুল করিম মোল্লা, চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক লেফটেন্যান্ট (অব.) এসএম মকবুল হোসেন, কলাপাড়া বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি নুরুল হক মুন্সী, বিএনপি নেতা গাজী মো. ফারুক, সিকদার পরিবারের সদস্য হাসানুজ্জামান সিকদার, সিকদার আবদুর রব মাস্টার, জাকির হোসেন সিকদার, আবু জাফর সিকদার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এসএম জাকির হোসেন সিকদার ও প্রভাষক মুহাম্মদ রেজাউল করিম কেনান।
সিকদার পরিবারের বন্ধনকে আঁকড়ে রাখার সেতু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন আলিফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি এসএম মোশারফ হোসেন মিন্টু সিকদার জানান, ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সাত পুরুষকে সকল প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। বন্ধন নামের একটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে এই বংশের প্রবীণ থেকে কিশোরদের চেনানো হয়েছে।
জানানো হয়েছে সাত পুরুষের কর্মকা-। পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। পারিবারিক বিরোধ তো দূরের কথা বংশগত বিরোধে কখনো জড়ানো যাবে না এমন মেসেজ দেওয়া হয়েছে। শুধু সিকদারদের বন্ধন নয়। এই বন্ধনের মধ্য দিয়ে কলাপাড়ার সমাজ ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান তারা। তাদের গড়ে তোলা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কলাপাড়ার সমাজ ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ়তা ব্যক্ত করলেন মোশারফ হোসেন।
সিকদারদের মিলনমেলার এই অনুষ্ঠান ছিল বর্তমান অস্থির সমাজ ব্যবস্থার জন্য এক অনুকরণীয় দিক। সবার কাছে বিষয়টি প্রশংসা কুড়িয়েছে। শেষকালে এ প্রতিবেদকের কাছে অনুষ্ঠানটি পারিবারিক বিবাদ-দ্বন্দ্বসহ সহিংসতার শিকার হওয়া কোন প্রজন্মের মানুষের কাছে একটি পাঠশালা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। যেখানে সিকদাররা ছিলেন ওই পাঠশালার একেকজন শিক্ষকের মতো। প্রবীণ-নবীন হাজারো সিকদারদের এই মিলনমেলা অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে রইল।
মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া, পটুয়াখালী
সোনারগাঁয়ে লাখো দর্শনার্থী
ঈদের ছুটিতে সোনারগাঁয়ে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড় ছিল। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতেই চতুর্দশ শতকের মসলিনখ্যাত বাংলার ঐতিহ্যবাহী রাজধানী সোনারগাঁয়ে ঈদের দিন থেকে টানা তিনদিন লাখ লাখ দর্শনার্থী মিলিত হন।
বুধবার দিনব্যাপী বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, পানাম নগরী ও বাংলার তাজমহলসহ বিভিন্ন বিনোদন স্পটগুলোতে দর্শনার্থীর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। অতিমাত্রায় দর্শনার্থীর উপস্থিতির কারণে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ও বাংলার তাজমহলসহ বিভিন্ন বিনোদন স্পটের কর্মকর্তারা দর্শনার্থীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
জানা যায়, এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, পানাম সিটি ও পেরাব এলাকায় অবস্থিত বাংলার তাজমহল ও পিরামিডে। ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে তিনদিনব্যাপী পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, কারুপল্লীতে প্রায় ৪৮টি স্টলে কর্মরত করুশিল্পী ও তাদের সৃজনশীল শিল্পকর্ম প্রদর্শনীসহ বাউল গানের আয়োজনও করা হয়। এসব বাড়তি আয়োজন দেখে আগত দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হন। পর্যটকদের উপস্থিতির কারণে ঈদের দিন থেকেই লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, পানাম সিটি ও বাংলার তাজমহল খোলা ছিল।
বুধবার দিনব্যাপী বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, পানাম সিটি, বাংলার তাজমহল ও পিরামিড ঘুরে দেখা যায়, দেশী-বিদেশী পর্যটকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে এসব বিনোদন স্পটের আশপাশের দোকানগুলোতে বেঁচাবিক্রি বেড়েছে। হোটেল-মোটেলগুলোতে কোনো রুম খালি ছিল না। রুমের চাহিদা বেশি থাকায় বুকিং করতে গুনতে হয়েছে দর্শনার্থীদের বাড়তি টাকা।
ঈদের ছুটিতে তাজমহলে সপরিবারে বেড়াতে আসা রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার রাজু আহম্মেদ জানান, ভারতের আগ্রার তাজমহল দেখা ব্যয়বহুল হওয়ায় সেখানে যেতে পারিনি। পেরাব গ্রামের বাংলার তাজমহল কিছুটা হলেও তাজমহল দেখার প্রত্যাশা পূরণ করেছে।
কুমিল্লার লাকসাম থেকে সোহেল রানা বলেন, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে ঈদের দিনে বিশেষ আয়োজন থাকায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। হারিয়ে যাওয়া হাতের তৈরি গ্রাম্য অনেক পণ্য এখানে আসলে দেখা যায়, যা কারুশিল্পীরা হাতে তৈরি করছেন।
বরিশাল থেকে পানাম সিটিতে ঘুরতে আসা রুনা আক্তার জানান, পানাম সিটির অনেক ইতিহাস বই থেকে পড়েছি। আজ বাস্তবে পানাম সিটি চোখে দেখলাম। এখানকার প্রতিটি ভবন যে মনে করিয়ে দেয় এটি চতুর্দশ শতকের মসলিনখ্যাত বাংলার ঐতিহ্যবাহী রাজধানী। এখানকার ভবনগুলোর অনেক অংশে ভেঙে যাচ্ছে তাই দ্রুত সংস্কার করে আদিরূপে ফিরে আনার দাবি জানান তিনি।
সোনারগাঁয়ে বেড়াতে আসা একাধিক দর্শনার্থী জানান, সোনারগাঁয়ের পর্যটন স্পটগুলোতে বিনোদনের কোনো কমতি নেই। কিন্তু দোকানগুলোতে বিভিন্ন মালামালের মূল্য আগের চেয়ে অনেক বেশি টাকা আদায় করছেন। পরিবহন যাত্রীদের কাছ থেকেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন চালকরা। তা ছাড়া রাস্তাগুলো সরু হওয়ায় এবং সংস্কারকাজ না করায় দর্শনার্থীদের অনেক ভোগান্তিতে পোহাতে হয়।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের রেজিস্ট্রেশন অফিসার এ কে এম মো. মুজ্জাম্মিল হক বলেন, ঈদ উপলক্ষে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হয়েছে। পর্যটকদের বিনোদন দিতে কারুশিল্পীদের পাশাপাশি পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলাসহ বিভিন্ন আয়োজন রয়েছে। তা ছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সিসি টিভির মনিটরিং পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
পানাম নগরীতে দায়িত্বে থাকা সহকারী কাস্টডিয়ান কর্মকর্তা মো. সিয়াম চৌধুরী বলেন, ঈদ উপলক্ষে পানাম নগরীতে দর্শনার্থীদের চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন ৫-৬ হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করছেন পানাম নগরীতে। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সকল ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সোনারগাঁ ট্যুরিস্ট পুলিশের দায়িত্বরত অফিসার ইনচার্জ মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঈদ উপলক্ষে পর্যটকদের চাপ অনেকটাই বেশি। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে আমরা কাজ করছি। এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
ফারুক হোসাইন, সোনারগাঁ
মাগুরায় নোমানী মাঠে মেলা
ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে মাগুরায় নোমানী ময়দানে মেলা বসেছে। ফলে দর্শকদের ভিড় জমেছে। এখানে দর্শকদের আনন্দ দিতে রাইড বসানো হয়েছে। ঘোড়ার গাড়িতে করে দর্শকদের বহন করা হচ্ছে। ফলে ঈদে দর্শকদের ভিড় জমেছে এবং সকলেই ঈদ আনন্দ উপভোগ করছেন। বেশকিছু দোকানপাট বসেছে। বসেছে খাবারের স্টল। ফলে আনন্দঘন পেিবশের সৃষ্টি হয়েছে। ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে এখানে নানা বয়সের শত শত দর্শকের আগমন ঘটেছে।
সকলেই ঈদ আনন্দ উপভোগ করছেন। এদিকে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে মাগুরা পৌর পার্কে দর্শকদের ভিড় জমেছে। মাগুরা পৌরসভা শহরতলির পারনান্দুয়ালীতে পৌর পার্ক নির্মাণ করো হয়েছে। এই পার্কে নানা ধরনের আইটেম রয়েছে। ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে এখানে দর্শক সংখ্যা বেড়েছে। সবাই ইদ আনন্দ উপভোগ করছেন।
সঞ্জয় রায় চৌধুরী, মাগুরা