
ঈদুল ফিতরের পরের দিন সাফারি পার্কে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দর্শনার্থীদের ভিড়
ঈদুল ফিতরের পরদিন গাজীপুর সাফারি পার্কে ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। এদিন পার্ক কর্তৃপক্ষ শুধু পার্কে প্রবশে টিকেট বিক্রি করেছেন ১৬ হাজার দুইশ। প্রতি টিকেটের মূল্য ৫০ টাকা। এ হিসেবে একদিনে বিক্রি হয়েছে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকার টিকেট। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পার্কে দর্শণার্থীরা প্রবেশ করেছেন।
মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে পার্ক খোলা রাখা হয়েছে। পার্কের বিট কর্মকর্তা হারুন-অর রশীদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি আরও বলেন, ঈদের দিনে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১৩ হাজার দর্শনার্থী পার্কে প্রবেশ করেছেন। তাদের কাছে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার টিকেট বিক্রি হয়েছে।
দুপুরে সরেজমিনে সাফারি পার্কের প্রধান ফটকে দেখা যায়, দর্শনার্থীরা টিকিটের অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। পার্কের প্রবেশ ফটকের বাইরে উন্মুুক্ত মাঠের বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পার্কে আসা দর্শনার্থীরা ওই মাঠে ব্যক্তিগত ও ভাড়ায় চালিত শত শত গাড়িও পার্কিং করে রেখেছে। মাঠের বিভিন্ন স্থানে খাবারের দোকান ছাড়াও ঘোড়ায় চড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের অস্থায়ী বিনোদনের ব্যবস্থাও ছিল।
পার্কের প্রবেশের পরই চোখে পড়ে দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন। আলাদা বেষ্টনীতে কোর সাফারি পার্কে প্রবেশের জন্য দর্শনার্থীরা লাইনে টিকিটের জন্য দাঁড়িয়েছেন। কোর সাফারিতে উন্মুক্ত পরিবেশে বাঘ, ভালুক, সিংহ, জেব্রা, জিরাফসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী রয়েছে। আটটি মিনিবাসে দর্শনার্থীদের নিয়ে প্রাণীদের বেষ্টনীর ভেতর ঘুরে আসছে ওইসব মিনিবাস।
সাফারি কিংডমে প্রবেশের পরই চোখে পড়েছে আলাদা আলাদা টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা দেখছেন ম্যাকাও, টিয়া, ঘুঘুসহ বিভিন্ন বিদেশী পাখি। কেউ কেউ আবার ম্যাকাও পাখির সঙ্গে সেলফি নিচ্ছেন। এতে দর্শনার্থীরা যে যার মতো ছবি তুলে নিচ্ছেন।
পার্কের ভেতরে দর্শনার্থীরা হেঁটে ঘুরে ঘুরে দেখছেন কুমির, হাতী, জলহস্তী, মদন টাক, উটপাখি, ইমু পাখি, বিভিন্ন ধরনের সাপ, ইগল, ভুবন চিল ও রঙিন মাছ। সাফারি পার্কের ভিতরেই শিশু দর্শনার্থীদের রয়েছে শিশু পার্ক। ওই পার্কেও প্রবেশ করতে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে শিশুদের।
শিশুদের জন্য পার্কে রয়েছে ‘নাইন-ডি’ থিয়েটার। এখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে প্রাণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
জেলার কালিয়াকৈরের সফিপুর থেকে এসছেন পোশাক শ্রমিক দম্পত্তি আবু সাঈদ ও কণা। তারা বলেন ঈদের পরদিনও এতো লোক হবে বুঝতে পারিনি। পার্কে প্রবেশ করতে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে প্রায় এক ঘণ্টা। আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে কোর সাফারিতে প্রবেশের টিকিটের জন্য।
ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এসেছেন সরকারি চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের অনেক দিনের আবদার ছিল সাফারি পার্কে আসার জন্য। এবার ঈদের ছুটি বেশি হওয়ায় তাদের আবদার পূরণ করার জন্য পার্কে এসেছি সপরিবারে। প্রাকৃতিক পরিবেশে পশু-পাখি ঘুরে দেখেছেন সবাই। হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন ধরনের পশুপাখি দেখে আনন্দ পেয়েছেন তিনি।
তার গার্ল ফ্রেন্ডের বায়না ছিল এবারের ঈদের পর তাকে নিয়ে ছুটিতে সাফারি পার্কে ঘুরতে যেতে হবে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পার্কে প্রবেশ করেছেন। দর্শনার্থদের ভিড় থাকায় কোর সাফারি পার্কের লাইনে দাঁড়িয়েও দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাওয়ায় টিকিট কাটতে পারেননি। হেঁটে হেঁটে পার্কের অন্যান্য প্রাণী ও প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখেছেন তারা।
শ্রীপুরের বরমী থেকে এসছেন পাঁচ বান্ধবী বিউটি আক্তার, সালমা আক্তার, মৌসুমী আক্তার, সাজেদা খাতুন এবং মুন্নি আক্তার। তারা বলেন, আমাদের উপজেলায় সাফারি পার্কের অবস্থান হলেও পাঁচ বান্ধবী একসঙ্গে হতে পারি না বিধায় আগে কখনো সাফারি পার্কে আসা হয়নি। এবার আমরা একসঙ্গে পাঁচ বান্ধবী পার্কে এসে অনেক আনন্দ করেছি। পার্কে সকল বয়সের দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় আমাদের বাড়তি আনন্দ দিয়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে পার্কে প্রবেশের সিস্টেম খুব সুন্দর। এতে করে ছেলেমেয়ে এক সঙ্গে প্রবেশ করলেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকে। ঈদের ছুটিতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়বে।
প্রসঙ্গত, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের ইন্দ্রপুর গ্রামে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। পার্কে প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। তবে ১২ বছর বয়সী পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা এবং পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশমূল্য নেওয়া হয় ১০ টাকা।
মোস্তফা কামাল প্রধান, শ্রীপুর, গাজীপুর