
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় তিন সন্তানের জননী আখি আক্তার নুপুর (৩৫) দুই রাত দুই দিন পরেও কোনো খোঁজ মেলেনি। তার বাবা ও পরিবারের সদস্যরা মেয়েকে না পাওয়ার শঙ্কায় শোকাবহ অবস্থা অনুভব করছেন। অপরদিকে, নুপুরকে হত্যার উদ্দেশে অপহরণ করার অভিযোগে তার বাবা আলমগীর হাওলাদার কলাপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় নুপুরের স্বামী আলমগীর সিকদারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া, ননদ, ভাসুর, দেবর, ভাসুরের ছেলে-মেয়ে ও অজ্ঞাত আরও ১৪-১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে নুপুর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পুলিশ তার স্বামী আলমগীর সিকদার, ননদ নাছিমা বেগম, দুই ভাগনে, এক দেবর, এক ভাগনে বউ, ও ভাসুরের এক পুত্রবধূসহ মোট সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। কলাপাড়া থানার এসআই মো. জাহিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গ্রেফতারকৃত সবাইকে আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং বর্তমানে তারা জেল হাজতে রয়েছে।
নুপুরের বাবা আলমগীর হাওলাদার জানান, ১৮ বছর আগে তার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে ননদ, ভাসুরসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করত। সর্বশেষ ওই রাতে, তার মেয়েকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে আহত করা হয় এবং পরে অপহরণ করা হয়।
নুপুরের ননদ, শাশুড়ি ও অন্যান্যরা জানায়, নুপুরকে জিন বা ভূতে নিয়ে গেছে। বর্তমানে নুপুরের মাদ্রাসা পড়ুয়া ১৪ বছরের ছেলে নোমান, ৫ বছরের মেয়ে সাওদা এবং ৩ বছরের ছেলে মাশফি তার নানা বাড়িতে অবস্থান করছে এবং তারা মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ছোট্ট ছেলে মায়ের জন্য কান্না করছে।
এদিকে, মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে স্বামীর বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় গৃহবধূ নুপুর আক্তার। ঈদের কারণে বাড়িতে আমন্ত্রিত মেহমানরা ছিলেন। সকলেই খাওয়া-দাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়েন। মেহমান বেশি থাকায়, আলমগীর সিকদার তার তিন সন্তানের দুজনকে নিয়ে ভাইয়ের ঘরে ঘুমাতে যান এবং আখি তার ননদসহ অন্যদের সঙ্গে ঘুমান। রাত আনুমানিক ২:৩০টার দিকে, নুপুরের বড় ছেলে আসাদুল সিকদার (নোমান) টয়লেটে যাওয়ার সময়, ঘর থেকে মারধরের শব্দ শোনেন। প্রায় ২০ মিনিট পরে ফিরে এসে তিনি মেঝেতে রক্ত দেখতে পান। ছুটে গিয়ে মাকে খোঁজেন, কিন্তু মাকে না পেয়ে নানিকে ফোন করে কান্নাকাটি করতে থাকেন।
এদিকে, নুপুরের ননদ-ভাসুরসহ শ্বশুরবাড়ির একাংশ কিছুক্ষণ পর থেকেই প্রচার করতে থাকে, নুপুরকে জিন বা ভূতে নিয়ে গেছে। তবে, নুপুরের বাবা এবং ভাইদের দাবি, ওই রাতে নুপুরের সাথে একই বিছানায় থাকা ননদ নাসিমা ও ভাসুরের মেয়ে লামিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা সামনে আসবে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাহিদ বলেছেন, "তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়, তবে তদন্ত চলমান রয়েছে।" বর্তমানে এই ঘটনা কলাপাড়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
নুসরাত