
ছবি: সংগৃহীত
বগুড়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, অপরাধীদের গ্রেপ্তারের পরও রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কখনো অপরাধীদের আটকের পর হাত ঘুরে বেমালুম উধাও হয়ে যাচ্ছে মাদক ও অস্ত্র, আবার কখনো গোপন সমঝোতার মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে চোর-জুয়াড়িদের। সব মিলিয়ে বগুড়ায় পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) বগুড়া শহরতলীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের হটিলাপুর পানাতা পাড়ায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। স্থানীয় জনগণ মাদক ব্যবসায়ী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রিপন মিয়াকে ৩৫ পিস ইয়াবা ও একটি চাকুসহ আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। কিন্তু পরবর্তীতে পুলিশ জানায়, তারা রিপনের কাছ থেকে কোনো মাদক বা অস্ত্র পায়নি। এই ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা স্পষ্টভাবে জানায়, তারা পুলিশের হাতে ইয়াবাগুলো গুনে তুলে দিয়েছেন। পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে স্যোসাল মিডিয়ায় সাধারন মানুষ লেখালেখি শুরু করলে টনক নড়ে পুলিশের। মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট এ তথ্য গোপন রাখলেও রাতে রিপনের কাছ থেকে জব্দ করা মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা স্বীকার করে। এর আগে, গত রবিবার শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় একদল পুলিশ সন্দেহভাজন অটো চোর চক্রের সদস্যদের আটক করে। তবে অভিযোগ উঠেছে, পরে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে গোপনে ছেড়ে দেওয়া হয়। একই দিন রাতে চারমাথা এলাকায় পুলিশ ২০ জন জুয়াড়িকে আটক করেছিল।
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, প্রভাবশালী এক নেতার সুপারিশ ও মোটা অঙ্কের লেনদেনের মাধ্যমে রাতের মধ্যেই আটককৃত জুয়ারিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। টাকার বিনিময়ে অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা, আটককৃতদের কাছ থেকে মাদক উধাও হয়ে যাওয়া এসব ঘটনা বগুড়ার মানুষের মনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পুলিশের এই রহস্যময় কর্মকাণ্ড কি শুধুই দায়িত্বে গাফিলতি, নাকি গভীরে রয়েছে অন্য কোনো চক্রের যোগসাজশ?
এ সব বিষয়ে বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম মঈন উদ্দীন বলেন, মাদক কারবারী ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রিপনকে মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। ঈদের আগে রবিবার রাতে চারমাথা এলাকা থেকে ২০ জন জুয়ারিকে আটক করার কথা অস্বীকার করে বলেন, সদর থানা পুলিশ আটক করেনি তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য কোন সংস্থা আটক করতে পারে।
এ ছাড়া একই রাতে ফুলবাড়ি ফাঁড়ি পুলিশ কর্তৃক অটোরিকশা চোর চক্রের কয়েকজনকে আটক ও তাদের ছেড়ে দেয়ার ঘটনা তার জানা নেই বলে জানান। তবে ফুলবাড়ি ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর বলেন, উভয়পক্ষ থানায় এসেছিল। কারও কোন অভিযোগ না থাকায় ওসি সাহেবের নির্দেশে মুচলেকা নিয়ে আটককৃতদের ছেড়ে দেয়া হয়।
পুলিশের এসকল ঘটনায় সাধারণ জনগণ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, বগুড়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন কতটা কার্যকর ব্যবস্থা নেয়, নাকি সব ঘটনাই থেকে যায় "তেলেশ মাতির কারবার" হিসেবে!
আসিফ