
উত্তরাঞ্চলের তিস্তা নদী অববাহিকার বিভিন্ন স্থানে ঈদ উৎসবে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিনোদনে মেতে উঠেছেন মানুষজন। বিশেষ করে যারা রাজধানীতে কর্মক্ষেত্রে বসবাস করেন এবং ঈদ উৎসবে উত্তরাঞ্চলের গ্রামের বাড়িতে এসেছেন, তারা তৈরি করা বিনোদন কেন্দ্রগুলোর চেয়ে প্রকৃতির বিনোদনে মেতে উঠে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতি ঈদের পরের দিন (১ এপ্রিল) দিনভর দেখা গেছে তিস্তা নদীর অববাহিকার দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প নীলফামারীর ডালিয়ায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ, রংপুর ও লালমনিরহাটের সীমানায় তিস্তার মহিপুর ব্রিজ এলাকা ও চিকলি নদীর পাড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে। সকলে প্রকৃতির বিনোদনে আনন্দ উপভোগ করছেন।
দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে সব কিছু। প্রতিবছরের মতো এবারও বিশাল সংখ্যক দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে। দর্শনার্থীরা স্পিডবোট এবং পালতোলা নৌকায় উঠে প্রকৃতির বাতাস ও নদীর পানির ঢেউ উপভোগ করছেন। প্রতিটি পয়েন্টে বসেছে মেলার উৎসবে দোকানপাট, আর খাবারের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
এই উৎসব চলবে ঈদের ছুটির সময় পর্যন্ত বলে জানালেন নৌকার মাঝিরা। এ সময় তাদের আয়-রোজগারও বেড়ে যায়।
তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসে আসেন তারা। তিস্তার বুকে স্পিডবোটে দ্রুত বেগে এপাশ থেকে ওপাশে ছুটে চলছেন পর্যটকরা। স্পিডবোট ও পালতোলা নৌকায় মাত্র ৫০ টাকায় তিস্তার বুকে ভাসছেন দর্শনার্থীরা। বড় বড় ঢেউ এসে ধাক্কা দিচ্ছে তিস্তার পাড়ে। ছিটকে আসা জলরাশির আনন্দে মেতে উঠছে সবাই। এ সময় তিস্তা ব্যারাজে আনন্দের স্মৃতির হিসেবে ফ্রেমবন্দি করছেন প্রিয় মুহূর্তগুলো।
ঘুরতে আসা দর্শনার্থী রাজিয়া আক্তার বলেন, "প্রতি বছর ঈদ ও নানান উৎসবে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় ছুটে আসি। রাজধানীতে বন্দী জীবনের পর ঈদে গ্রামে এলে আমি আমার ছেলেমেয়েদের নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। এখানে এসে অনেক মজা করেছি, যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এটাই আমাদের কাছে প্রকৃতির বড় বিনোদনের আস্থা।"
আরেক দর্শনার্থী মোস্তাফা বলেন, "আমরা ঢাকা শহরের গণ্ডির মধ্যে বসবাস করি। কোথাও প্রকৃতির বিনোদনে যেতে পারি না। তাই ঈদে সন্তানদের নিয়ে তিস্তা ব্যারাজে ছুটে এসেছি। এতে বাচ্চারা অনেক আনন্দ পাচ্ছে। এখানে বিশাল এলাকা জুড়ে মেলার মতো দোকান বসেছে। খাবারের দোকান রয়েছে। সব মিলে সারা দিন ভালো কেটেছে।"
মহিপুর তিস্তা ব্রিজেও একই অবস্থা।তিস্তায় স্পিডবোট ও পালতোলা নৌকায় দর্শনার্থীরা জলরাশির আনন্দে উন্মাদিত হচ্ছেন। এই সময় দর্শনার্থীরা তাদের প্রিয় মুহূর্তগুলো স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতে ফটোগ্রাফি করছেন।
তিস্তায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সাবরিনা ইয়াসমিন বলেন, "প্রতি বছর ঈদে এবং নানা উৎসবে আমরা পরিবার নিয়ে মহিপুর তিস্তা এলাকায় আসি। এখানে এসে আমরা অনেক মজা করেছি, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।"
রংপুর থেকে আসা শোভন ও মিলা বলেন, "নদীর বুকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া আশির দশকের পালতোলা নৌকাগুলো দেখতে বেশ ভালো লাগছে। এগুলো আমাদের মতো অন্যদেরও নজর আকৃষ্ট করছে, এবং আমরা ক্যামেরায় কিছু মুহূর্ত বন্দি করতে পেরেছি।"
স্থানীয়রা জানান, মহিপুর তিস্তায় বিনোদনের স্থানের অভাবে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ এখানে এসে ঈদের আনন্দ উপভোগ করে। যদি সরকারের সহযোগিতায় মহিপুর তিস্তার পাড়কে উন্নতভাবে সাজানো হয়, তাহলে এখান থেকে ব্যাপক রাজস্ব আসবে, যা নদীভাঙন কবলিত মহিপুরের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করবে।
আফরোজা