ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১

আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণপালা ‘ঢাকী’

রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ১ এপ্রিল ২০২৫

আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণপালা ‘ঢাকী’

ছবিঃ সংগৃহীত

আধুনিক প্রযুক্তি ও আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে বিলুপ্তির পথে বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি। গ্রামীণ বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম যাত্রাপালা, পুতুলনাচ ও সার্কাস আজ অস্তিত্ব সংকটে। বিশেষত যাত্রাপালার একটি বিশেষ ধারা ‘ঢাকী’ হারিয়ে যেতে বসেছে। 

এক সময় চৈত্র-সংক্রান্তিতে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে রাতভর ঢাকী পালা মঞ্চস্থ হতো। রাবণ বধ, রাজা হরিশ্চন্দ্র, কংস বধ, শিব-পার্বতীসহ নানা পৌরাণিক কাহিনি মঞ্চে তুলে ধরতেন ঢাকী শিল্পীরা। বিনিময়ে গৃহস্থরা চাল, ডাল, নারকেল, সুপারি ও অর্থ দিয়ে শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করতেন। তবে কালের বিবর্তনে সেই ঐতিহ্য আজ প্রায় বিলুপ্ত। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ মেলাও।

চৈত্র-সংক্রান্তিতে মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জের গোপীনাথপুর গ্রামে গ্রামীণ মেলা বসে। মেলার মঞ্চে রাবণবধ, রাজা হরিশ্চন্দ্র ও কংসবধ মঞ্চস্থ করা হয়। 

যাত্রাপালা ঢাকীর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করা তুষার কান্তি দাশ, উজ্জ্বল সরকার, সুজন রায় ও সুকান্ত সরকার জানান, সময়ের পরিবর্তনে এখন আর গ্রামীণ পালা ঢাকীর কদর নেই। এছাড়াও চৈত্র-সংক্রান্তিতে আগে মেলায় যে পরিমাণ মানুষের সমাগম হতো কালের আবর্তে তাও হারিয়ে গেছে। এখন আর সেই উচ্ছ্বাস নেই। প্রাণ নেই গ্রামীণ মেলারও।  

জোরারগঞ্জের তেতৈয়া তরুণ সংঘ ও যুব সমাজের উদ্যোগে গ্রামীণ পালা রাবণবধ পরিচালনাকারী সঞ্জয় কুমার নাথ, মিহির কান্তি নাথ ও বিকাশ চন্দ্র নাথ জানান, গ্রামীণ পালা রাবনবধ মঞ্চস্থ করতে গিয়ে বেশ সাড়া পেলেও রাতে ঢাক-ঢোলের শব্দে অনেকে বিরক্ত হয়। এছাড়াও এসবের প্রচলন না থাকায় পোশাক ও কস্টিউম পাওয়া যায়না। 

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুভাষ সরকার বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যেবাহী ঢাকী (যাত্রাপালা) এখন ঘোর দুর্দিন। আগের মতো আর দেখা যায় না পথে-প্রান্তরে। আগে চৈত্র মাসে বাড়িতে বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ পালা ঢাকী দেখা যেতো। কালের পরিবর্তনে এখন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এসব লোকসংস্কৃতি।

এ ব্যাপারে নাট্যকার মঈন উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী সেলিম বলেন, আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন এবং বাঙালী সংস্কৃতি, কৃষ্টির যথাযথ চর্চার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে লোক-সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ও পহেলা বৈশাখে গ্রামীণ সংস্কৃতির চর্চা, বিকাশে সংস্কৃতিমনা মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। এতে করে ঢাকী, গ্রামীণ মেলা, যাত্রাপালাসহ বিভিন্ন লোক-সংস্কৃতির বিকাশ সম্ভব হবে।

ইমরান

×