
ছবিঃ সংগৃহীত
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ ফয়েজের পরিবারে এবার ঈদের কোনো আমেজ নেই। হয়নি নতুন পোশাক কেনাকাটা, ঈদের প্রস্তুতির আনন্দও হারিয়ে গেছে চোখের জল আর শোকের মাঝে। বিভিন্ন অনুদান থেকে সামান্য সহযোগিতা মিললেও মা সবুরা বেগম ভুলতে পারছেন না বুকের ধন হারানোর যন্ত্রণা।
দশ বছর আগে অভাব-অনটনের সংসারের হাল ধরতে ইট-পাথরের শহর ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চর আবাবিলের ঝাউডগী গ্রামের সন্তান মো. ফয়েজ। স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজ করলেও পারদর্শী ছিলেন নানা ছোটখাটো কাজেও।
গত বছরের ২১ জুলাই সন্ধ্যায় ঢাকার যাত্রাবাড়ীর সাইনবোর্ড এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন ফয়েজ। সেদিন সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে শেষ কথা বলছিলেন তিনি। ফোনে বলেছিলেন, "মা, গুলি চলছে অনবরত, সবে কাজ শেষ করেছি। তুমি ফোন রাখো।" কল কাটার মুহূর্তেই মা শুনেছিলেন বিকট গুলির শব্দ। এরপর আর কোনো সাড়া মেলেনি তার ছেলের। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ঘোষণা করেন, ফয়েজ আর নেই।
শহীদ ফয়েজের মা সবুরা বেগম চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, "আমার ফয়েজ থাকলে আমাদের ঈদ থাকতো। এবার বাবা নেই, তাই ঈদও নেই। ঘরে শুধু কান্না আর বুকভরা শূন্যতা।"
বাবা আলাউদ্দিন (৫৫) বললেন, "ঈদ আমাদের নাই, ফয়েজ আমাদের মাঝে নাই। আমি চট্টগ্রাম ফোর্টে চাকরি করতাম। সেনা সরকারের সময় চাকরি হারিয়েছি। আরেক আন্দোলনে আমার ছেলেকে হারালাম। ৮৯ সালে বিয়ে করেছি। তিন বছর পর জন্ম নেয় আমার রাজপুত্র ফয়েজ। আজ সে আর নেই। আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।"
স্বামী হারিয়ে একাকী হয়ে পড়েছেন ফয়েজের স্ত্রী নুর নাহার। ১৮ মাস বয়সী শিশু রাফি মাহমুদকে নিয়ে ঠাঁই মিলেছে গাজীপুরের টঙ্গীতে থাকা এক স্বজনের বাড়িতে। তাদের জীবনেও ঈদ কোনো আনন্দ নিয়ে আসেনি, বরং কেবলই বেদনার বোঝা আরও ভারী করেছে।
ফয়েজের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির শোকের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার পরিবারের কান্না আজ ঈদের খুশির বিপরীতে নিপীড়নের এক নীরব সাক্ষী।
মারিয়া