ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১

সামর্থ্য ছিলনা ঈদের বাজার করার 

দুঃখ আর হতাশায় দিন কাটছে অসহায় আলী হাসানের পরিবারের

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ৩০ মার্চ ২০২৫

দুঃখ আর হতাশায় দিন কাটছে অসহায় আলী হাসানের পরিবারের

ছবি: আহত আলী ও পরিবাবের সদস্য

কাল যখন সারাদেশ ঈদের আনন্দে মেতে উঠবে, ঠিক তখন বাউফলের অসহায় আলীর পরিবার ঈদের আনন্দে মেতে উঠবে না।

টানাপোড়েনের সংসারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার জোগাড় করাই যেখানে কঠিন, সেখানে নতুন পোশাক বা ঈদের বিশেষ খাবার যেন তাদের কাছে বিলাসিতা।

জীবনযুদ্ধের কঠিন বাস্তবতায় এক সময় পরিবার চালানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন আলী হাসান (২৪)। 

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ তিনিই সংসারের বোঝা হয়ে গেছেন। এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা তার জীবনকে এক অনিশ্চিত অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।

আলী হাসানের বাবার নাম খালেক রাঢ়ী। পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদী পাড়ের নিমদী গ্রামে তার বাড়ি। মা, বাবা, স্ত্রী ও দেঁড় বছর বয়সী আবু বকর সিদ্দিক নামে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে তার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলী হাসান ছোটবেলা থেকেই পরিবারের অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছেন। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনোর আগেই বাবার সঙ্গে মাছ ধরার কাজে যুক্ত হন। কিন্তু নদীতে মাছ ধরার কাজ করেও পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরানো সম্ভব হয়নি। 

সংসারের টানাপোড়েনের কারণে আট বছর আগে ঢাকার পথে পা বাড়ান তিনি, পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর আশায়। ঢাকায় এসে তাঁতীবাজার মোড়ে ‘তুষার কাটিং’ নামে এক প্লেইন সীট কাটিংয়ের দোকানে কাজ শুরু করেন। ১২ হাজার টাকা বেতনের চাকরি আর বাবার আয় মিলিয়ে মোটামুটি ভালোভাবেই চলছিল তাদের সংসার। স্ত্রী ফারজানা, ছোট্ট ছেলে আবু বকর সিদ্দিক, বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে তার স্বপ্ন ছিল সুখের জীবন গড়ার।

কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায়। প্রায় দেড় বছর আগে কর্মস্থলে কাজ করার সময় হঠাৎ প্লেইন সীটের লট ভেঙে পড়ে আলী হাসানের ওপর। গুরুতর আহত হয়ে তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েন। দীর্ঘ চিকিৎসার পর জীবন ফিরে পেলেও দুই পায়ের টিবিয়া হাড় ভেঙে যাওয়ায় বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ অচল হয়ে আছেন। 

চিকিৎসকরা ইলিজারভ পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করলেও অর্থাভাবে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি।

দুর্ঘটনার পর থেকে আলী হাসান হুইলচেয়ারে বন্দি। চলাফেরা তো দূরের কথা, গোসল, খাওয়া, এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজেও অন্যের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। তার দেখভালের পুরো দায়িত্ব পালন করছেন স্ত্রী ফারজানা, মা হেলেনা বেগম ও বৃদ্ধ বাবা খালেক রাঢ়ী।

আলী হাসান বলেন, আমি কোনো সরকারি সাহায্য পাইনি। আমি সরকারি অফিসে গেছিলাম কিন্তু আমাকে কোনো সাহায্য সহযোগিতা করে নাই । যেই দোকানে কাজ করতাম সেই দোকানের মহাজন চিকিৎসার জন্য প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা দেয়। কিন্তু সেই টাকায় তো হয়না। কোনো বিত্তবান যদি আমার পাশে দাঁড়াতো তাহলে আমার জন্য ভালো হতো।

আলী হাসানের স্ত্রী ফারহানা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামী এক্সিডেন্ট হওয়ার পর থেক আমরা খুব কষ্টে দিন পার করতেছি। খুব অসহায় অবস্থায় আছি আমরা। আমার স্বামীর দুই পা ভেঙে গেছে। ডাক্তার বলছে ৫-৭ লাখ টাকা হলে আমরা তার উন্নত চিকিৎসা করাতে পারবো এবং পরিপূর্ণ ভাবে হাঁটাচলা করতে পারবে। আমার শ্বশুর ছোট-খাট কাজ করে। আমাদের পক্ষে তার চিকিৎসা চালানো সম্ভব না। আমরা আপনাদের সাহায্য কামনা করি। কাল ঈদের দিন, কিন্তু ঈদের মার্কেট করার মত ক্ষামতা আমাদের নাই। যদি কেউ আমাদের দেয় তাহলে নতুন জামা পড়তে পারবো আর না হলে পারবোনা। যার স্বামী এরকম অসুস্থ সেই একমাত্র জানে তার কি হাল হয়। সে সবার কাছে অবহেলার পাত্র হয়ে দাঁড়ায় । আমি আমার স্বামীকে পরিপূর্ণ সুস্থ অবস্থায় হাঁটতে দেখতে চাই।

আলী হাসানের পিতা খালেক রাঢ়ী বলেন, কাল ঈদ, আনন্দ ফুর্তির দিন আসতেছে, আমি এখন পর্যন্ত কারো জন্য কিছু কিনতে পারি নাই । আজকে সেহরি খাইছি শুধু মরিচ দিয়া, কিছু জোগাড় করতে পারি নাই। সবাই ঈদের আনন্দ করবে, আমাদের কোনো আনন্দ নাই।

বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএসও) ডাঃ আব্দুর রউফ বলেন, আলী নামে যে রোগীর কথা বলেছেন, আমি তার রিপোর্ট দেখলাম। এই রোগীটার হাড্ডি ভেঙে গেছে ও হাড্ডির উপর চামড়া ও মাংসের ভিতর ইনফেকশন আছে। উন্নত চিকিৎসা দিলে অবশ্যই ভালো হওয়ার কথা ।

ইমরান

আরো পড়ুন  

×