
ছবি: সংগৃহীত
মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের বেচাবিক্রি ও কেনাকাটা।
দিনের বেলা দাবদাহের কারণে ক্রেতা কম থাকলেও সন্ধ্যা থেকে সেহরি পর্যন্ত বিকিকিনি চলে৷ ঈদ ঘনিয়ে আসায় ক্রেতার উপস্থিতি বেড়েছে কয়েক গুন। এবার চট্টগ্রামে মেয়েদের পছন্দের পোশাক পাকিস্তানি থ্রিপিস।
সন্ধ্যার পর থেকে সেহরি পর্যন্ত নগরীর স্যানমার, চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স, সিডিএ মার্কেট, অলঙ্কার শপিং কমপ্লেক্স, টেরিবাজার, খুলশী টাউন সেন্টার, নিউমার্কেট, মিমি সুপার মার্কেট, টেরিবাজার, আফমিপ্লাজা, আগ্রাবাদ লাকী প্লাজা, সিঙ্গাপুর মার্কেট, চকবাজার মতি টাওয়ার, গুলজার টাওয়ার, বালি আর্কেড, ফিনলে স্কয়ারসহ একাধিক মার্কেট বিভিন্ন কাপড়ের শোরুমে দল বেঁধে কেনাকাটা করছেন সব বয়সের ক্রেতারা।
স্যানমার ওসান সিটির বিক্রেতারা বলছেন, গরমের কারণে দিনে ক্রেতা কম থাকে। ইফতারের পর থেকে দল বেঁধে কেনাকাটা করতে আসেন ক্রেতারা তখন বিক্রি ভালো হয়। সেহরি পর্যন্ত ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় থাকে।
খুলশী টাউন সেন্টারে কেনাকাটা করতে আসা ইয়াছিন-স্মৃতি দম্পতির সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দিনে প্রচন্ড গরম। রোজা রেখে একদম বের হতে ইচ্ছে করে না। তাই পরিবারের সবাই মিলে রাতে কেনাকাটা শেষ করে সেহরির সময় ঘরে ফিরব।
স্যানমারে কেনাকাটা করতে আসা তরুণ জোহেব আব্দুল্লাহ বলেন, 'এবার ঈদের পোশাক, জুতাসহ সবকিছুর দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। আমার পছন্দের তালিকায় রয়েছে পাঞ্জাবি পাজামা ও পাংসু।
এদিকে টেরিবাজারে সরেজমিন দেখা গেছে, প্রবেশপথ থেকে সবকটি দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। ক্রেতার চাপে বিক্রয়কর্মীদের যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। তবে বর্তমানে থান কাপড়ের দোকানে ক্রেতা কম হলেও ওয়ানস্টপ শপিংমলগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে। এবার বিক্রি ভালো হওয়ায় স্বস্তিতে আছেন টেরিবাজারের ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী নুর ইসলাম বলেন, টেরিবাজারে গত এক দশকে প্রায় অর্ধশতাধিক ওয়ানস্টপ শপিংমল গড়ে উঠেছে। যেগুলোয় এক ছাদের নিচে মিলছে নারী-শিশু, বয়স্কসহ সব বয়সিদের প্রয়োজনীয় পোশাক। তাই ক্রেতারা এখানে পরিবারে সবাইকে নিয়ে কেনাকাটা শেষ করতে পারে।
ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, টেরিবাজার শাড়ির জন্য প্রসিদ্ধ। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, চীন, থাইল্যান্ডসহ নানা দেশ থেকে শাড়ি ও অন্যান্য কাপড় এখানে আসে। শবেবরাতের পর থেকে এ পর্যন্ত এই বাজারে ভালো শাড়ি বিক্রির পরিমাণ উল্লেখ করার মতো।
বিক্রেতারা বলেন, বিগত বছরগুলোয় ঈদের শেষ মুহূর্তে এসে বেচাকেনার ধুম পড়লেও মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির লোকেরা আগেভাগে কেনাকাটা শেষ করেছেন।
নগরীর পাশাপাশি পাশের উপজেলাগুলোয়ও জমে উঠেছে ঈদের শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মার্কেটগুলো জমজমাট থাকে। চট্টগ্রাম শহরের কাছাকাছি সীতাকুন্ড উপজেলায় গত কয়েকদিনের তীব্র গরম উপেক্ষা করে ক্রেতারা পছন্দের শাড়ি-কাপড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী নিতে ঈদের বাজারে ছুটে আসছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকছেন প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা। কেউ কেউ ইফতার সারছেন আশপাশের হোটেল-রেস্টুরেন্টে। সীতাকুন্ড উপজেলার কুমিরা এলাকা থেকে আসা রাজিয়া সুলতানা ঈদের শপিং করতে দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন, তিনি জানান, প্রতিবছর ঈদের কাপড় কেনার জন্য সীতাকুন্ড পৌরসদরের বাজারে আসেন। তার মতে, এ বছর কাপড়ের দাম অনেকটা বেশি। মেয়েদের বিভিন্ন আধুনিক ডিজাইনের পোশাকের দাম আরও নাগালের বাইরে।
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড কলেজ রোডের নূরুল আলম নিউমার্কেটের এক দোকানি বলেন, এবার দশ রমজান থেকে সীতাকুন্ড ঈদের বাজার জমজমাট। এখন মানুষ ঈদের দুই-তিনদিন আগের জন্য বসে থাকে না। প্রথম রমজান থেকে কেনাকাটা শুরু করে। তিনি বলেন, এই ঈদে তরুণীদের প্রথম পছন্দের ড্রেস পাকিস্তানের থ্রি-পিস ।
মেয়েদের আধুনিক পোশাকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছেলেরাও নিজেদের জন্য সেরা পোশাকটি কিনতে ছুটছেন এ মার্কেট ও মার্কেটে। পরিপাটি করে নিজেকে ঈদে সাজাতে ছেলেরাও ঘুরে ঘুরে দেখছেন নিজেদের পছন্দের পোশাক।
দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে শাড়ি, টু-পিস, থ্রি-পিস, বোরখা, ছোটদের পোশাক, লেহেঙ্গা, জয়পুরী, বুটিকস, দেশীয় সূতি ও নানা প্রসাধনী। ছেলেদের জন্য রয়েছে জিন্স জাতীয় প্যান্ট, গ্যাবার্ডিন, টি-শার্ট, শর্টস ও পাঞ্জাবী।
গৃহিণীরা নিজে ও পরিবারের শপিং শেষে গৃহস্থালি, ঘর সাজানোর নানা পণ্য কিনতে ব্যস্ত সময় পার করছে নগরীর গোলাম রসুল মার্কেটে।
টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর বলেন, রোজার শুরুর দিকে যথেষ্ট কাস্টমার ছিল, কিন্তু শেষের দিকে মোটামুটি । এবার কিন্তু দ্রব্যমূল্যের দাম আগের তুলনায় অনেক ভালো। অন্যান্য বার আমাদের দেশীয় বাজার ভারতীয় পণ্যের দখলে থাকতো। কিন্তু এ বছর ভারতীয় পণ্য এবার তেমন আসে নাই। আগের তুলায় তিন ভাগের এক ভাগ। কিন্তু দেশীয় পণ্যের বাজার এবার ভালো।
আসিফ