
‘আমরা যে আদর্শিক ছাত্র ও তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলনের মধ্যে দেখেছি, এখন তাদের অনেকের মধ্যেই সুবিধাবাদী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় ইউএনও অফিস, ডিসি অফিস, এসপি অফিস ও থানায় তাদের অনৈতিক আধিপত্য বিস্তার এবং প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।’
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুর ইফতার মাহফিল ও দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। আজ শনিবার (২৯ মার্চ) বিকেলে পটুয়াখালীর গলাচিপা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। গলাচিপা উপজেলা শাখা গণঅধিকার পরিষদ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রদের প্রতি মানুষের যে অগাধ বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা তৈরি হয়েছিল, তা আজ চিড় ধরেছে। ছাত্রদের কর্মকাণ্ডই এজন্য দায়ী।’
নুরুল হক নুর বলেন, ‘যেহেতু আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক দল গঠন করেছে, এখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম আর নেই। এটি সকল মতাদর্শের মানুষের একটি প্ল্যাটফর্ম ছিল। এখন সবাই যার যার রাজনৈতিক প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘গত জুলাইয়ের আন্দোলনে ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আন্দোলন করে যা পারেনি, কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। তবে জনগণের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি এখনও আসেনি। যে কোনো গণআন্দোলন তখনই সফল হয়, যখন জনগণ সরাসরি সম্পৃক্ত হয়।’
নুরুল হক নুর বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব জনগণের ত্যাগের প্রতিদান দেওয়া। যদি তারা জনগণের প্রত্যাশা ভুলে যায়, তবে জনগণ প্রতারিত হবে এবং রাজনৈতিক নেতারাও তার ভুক্তভোগী হবে।’
তিনি বলেন, ‘মেধাবী তরুণরা রাজনীতির বাইরে থাকায় দুর্বৃত্তরা রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে। এই চিত্র আমরা গত কয়েক বছর ধরে দেখেছি। তাই মেধাবী তরুণদের রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি ছাত্র নেতারা সরকারের মধ্যে না থেকে পদত্যাগ করে রাজনৈতিক দলের মতো রাজপথে আন্দোলন, সংগ্রাম চালিয়ে যান, তাহলে ভবিষ্যতে জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।’
নুর বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে আমরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেছি। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্রদের মধ্যে প্রতিবাদের চেতনা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই চেতনার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সম্ভব হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থন পেলে সংসদে গিয়ে আপনাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলবো।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘গলাচিপার রামনাবাদ নদীর ব্রিজ বাতিল হয়ে যাচ্ছিল, যা উপদেষ্টাদের কাছে ঘুরে, মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় কথা বলে পুনরায় টেন্ডার করানো হয়েছে। আশা করি কাজ দ্রুত শুরু হবে।’
ইফতার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গণঅধিকার পরিষদ গলাচিপা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের পটুয়াখালী জেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. সৈয়দ নজরুল ইসলাম লিটন, গলাচিপা উপজেলা শাখার সদস্য সচিব মো. জাকির হোসেন মুন্সি, পটুয়াখালী জেলা যুব অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি মহিবুল্লাহ এনিম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আবু নাঈম প্রমুখ।
আফরোজা