ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১

মোর কোন ঈদ নাই, এক বেলা ভিক্ষা না করলে দুই শিশু সন্তান না খেয়ে থাকে

জিয়াউল হক, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

প্রকাশিত: ০০:৫৬, ৩০ মার্চ ২০২৫

মোর কোন ঈদ নাই, এক বেলা ভিক্ষা না করলে দুই শিশু সন্তান না খেয়ে থাকে

“বাবা গরিব মানুষের আবার ঈদ কিসের। মোর কোন ঈদ নাই। একদিন ভিক্ষা না করলে দুই শিশু সন্তানের মুখে ভাত জোটে না।” কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের মৃত নিজাম সিকদারের স্ত্রী নিলুফা বেগম।

নিলুফা বেগমের স্বামী নিজাম সিকদার গ্রামে ভিক্ষা করে তার সংসার চালাতেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার অভাবে গত এক বছর আগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে দুই শিশু সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন নিলুফা বেগম। দুই শিশু সন্তান নিয়ে নিলুফা বেগমের ঠাঁই হয় পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের জরাজীর্ণ একটি ঘরের বারান্দায়।

এখন ৬০ বছর বয়সী নিলুফা বেগম জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ছেলে-মেয়ের মুখে দুমুঠো ভাতের জন্য এখন তিনি ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে ঘুরছেন দুয়ারে দুয়ারে।

২৯ মার্চ (শনিবার) পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে ৬০ বছরের বৃদ্ধা ভিক্ষুক নিলুফা বেগমের সঙ্গে কথা হয় জনকণ্ঠ সংবাদ মাধ্যমের। নিলুফা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "বাবা, ঈদ আসলে সবাই আনন্দ ফুর্তি করে। আর আমাদের জন্য ঈদ আসলে কষ্ট আরও বাড়ে। দুই শিশুসন্তান নিয়ে ভিক্ষা করে সংসার চালাতাম। জীবনের শেষ প্রান্তে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে বিছানায় পড়ে রয়েছি। ছেলে-মেয়ের মুখে এক বেলা ভাতও দিতে পারছি না। এখন ঈদ আসছে, জামা-কাপড় আর পাব কোথায়?"

চোখের পানি ফেলে নিলুফা বেগম বলেন, "বাবা, মোড় কেউ নেই! ঘর-দুয়ার হারিয়েছি অনেক আগেই। বাকেরগঞ্জ সাহেবগঞ্জ ৫ নং ওয়ার্ডে একটি ভাড়া বাসায় অসুস্থ স্বামী নিয়ে থাকতাম। মোর স্বামী নিজাম সিকদার ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন। প্রায় এক বছর হলো তিনি মারা গেছেন। তাই এখন কি করব? যেদিন ভিক্ষা করতে বের না হই, সেদিন না খেয়ে থাকতে হয়। মাস গেলে ১৫০০ টাকা ঘর ভাড়া দিতে হয়। আমি নিজেও অসুস্থ, ওষুধের টাকাও ভিক্ষা করেই যোগাড় করতে হয়। এখন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছি। বাবা, জীবনটা আর চলে না। গরিবের কষ্ট কেউ দেখে না।"

ভিক্ষুক নিলুফা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, "সুখ কি জিনিস, জীবনে চোখে দেখলাম না। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। ভিক্ষার টাকায় মাঝেমধ্যে সামান্য চিকিৎসা করালেও ভালো হয়নি। এভাবেই ভিক্ষা করতে করতে কখন জানি শ্বাসটা বন্ধ হয়ে যায়।"

নিলুফা বেগমের ছেলে আব্দুল্লা ফাজিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে এবং মেয়ে মারজিয়া ১১ বছর বয়সে সরকারি মডেল স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।

নিলুফা বেগম একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমানা আফরোজ জনকণ্ঠকে বলেন, "আপনাদের মাধ্যমেই আমি এ রকম একটি সংবাদ পেয়েছি। অবশ্যই এই ভিক্ষুক পরিবারটির খোঁজখবর নিয়ে তাদের সহায়তা করা হবে।"

নুসরাত

×