
ঈদ উপলক্ষে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যম-িত সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা এখন উৎসবমুখর
ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটকের ঢল নামবে- এমন প্রত্যাশা নিয়ে কুয়াকাটার সকল শ্রেণির ব্যবসায়ীরা এখন মুখিয়ে রয়েছেন। তারা পর্যটকের সকল ধরনের সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। বিশেষ করে হোটেল-মোটেল রেস্তরাগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ধোয়া-মোছার কাছ শেষ করেছেন। অনেকে আবার হোটেল-রেস্তোরাঁর অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার কাজ করেছেন। কেউবা রঙিন রঙে রাঙিয়েছেন পুরো হোটেল এরিয়া।
এক কথায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এখন শুধু পর্যটক বরণের অপেক্ষা। কুয়াকাটা পৌর এলাকা ও তার বাইরের অধিকাংশ হোটেল-মোটেল জনপদ ঘুরে এমন সব খবর মিলেছে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পরে মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে কুয়াকাটা এখন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রয়েছে।
এমনিতেই একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোরম বিরল দৃশ্য উপভোগের সৈকত কুয়াকাটায় সারা বছরই পর্যটকের আনাগোনা থাকছে। রয়েছে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আলাদা সুখ্যাতি। তবে এবারে পর্যটকের ঢল নামবে বলে অধিকাংশ ব্যসায়ীর অভিমত। কানায় কানায় পূর্ণ থাকবে কুয়াকাটা সৈকতের দীর্ঘ এলাকাÑ এমনই মন্তব্য সকলের। অধিকাংশ অভিজাত থেকে শুরু করে সাধারণ মানের হোটেলগুলোতে আগাম বুকিং চলছে। ইতোমধ্যে শতকরা ৪০-৬০ ভাগ পর্যন্ত কক্ষ বুকড হয়ে গেছে।
তারকা মানের সিকদার হোটেল রিসোর্টের হেড অব সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং আশিকুর রহমান জানান, তাদের একই সঙ্গে অন্তত ৫০০ গেস্টকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। এরই মধ্যে ৬০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। বাকিগুলো আগামী দুই-এক দিনে বুকিং সম্পন্ন হবে বলে এ কর্মকর্তার আশাবাদ।
ঈদের পরদিন থেকেই কুয়াকাটায় পর্যটকের ভিড় বাড়ার কথা জানালেন জনাব আশিকুর। তিনি জানালেন, পুরো রমজান মাসে তারা ৬০ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দিয়েছেন। এ ছাড়া এমনিতেই সারা বছর ৪০ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। এ বছর ঈদকে সামনে রেখে কাক্সিক্ষত গেস্ট থাকবে বলে তাদের প্রত্যাশা।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ জানালেন, ৫০-৬০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকড হয়ে গেছে। এবার ঈদে ব্যাপক সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটার কথা জানালেন তিনি। তাদের সকল পর্যটকের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার প্রস্তুতির কথা জানালেন।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মোতালেব শরীফ জানান, তাদের সংগঠনভুক্ত ৭৮টি হোটেলসহ চালু অবস্থায় প্রায় পৌনে দু’শ’ আবাসিক হোটেল-মোটেলে এই মুহূর্তে অন্তত ৩০ হাজার পর্যটকের আবাসন সঙ্কুলানের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে নির্মাণাধীন থাকা সব হোটেল চালু হলে অন্তত ৫০ হাজার গেস্ট সামাল দেওয়ার সক্ষমতা থাকবে।
এ বছর ঈদে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটকের আগমনের আশাবাদ তার। ইতোমধ্যে তার তথ্যানুসারে মান ভেদে অধিকাংশ হোটেলের ২০-৬০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকড হয়েছে। আগামী দুই দিনে পরিপূর্ণ হওয়ার কথা জানালেন জনাব শরীফ।
মোটকথা ঈদুল ফিতরকে ঘিরে পর্যটকের সেবায় কুয়াকাটার অন্তত পৌনে দু’শ’ হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট, অর্ধশতাধিক খাবার হোটেল-রেস্তোরাঁ এখন প্রস্তুত রয়েছে। তেমনিভাবে অন্তত ৬২ জন বাণিজ্যিক ক্যামেরাম্যান, অর্ধশত ট্যুর গাইড, ৩৭টি ট্রাভেলস, ১৬টি ফিশ ফ্রাই দোকান মালিক, ২২টি ইঞ্জিনচালিত স্পিড ও ফাইবার বোট, অর্ধশত ইজিবাইক, ১৯টি ফুসকার দোকানিসহ আচার, ঝিনুকসহ বিভিন্ন দোকানি তাদের পেশার পসরা সাজিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। ফের সচল করবেন ব্যবসাস্থল। সেই সঙ্গে অন্তত আড়াই হাজার পরিবারের পর্যটন নির্ভর ব্যবসায় ফিরবে চাঙ্গাভাব এমন আশায় বুক বেধে আছেন সবাই।
ঈদকে ঘিরে আগত পর্যটকের সেবা নিশ্চিতে কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ ও মহিপুর থানা পুলিশের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম জানান, পর্যটকের সেবায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকল প্রস্তুতি রয়েছে।