ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১

৫ প্লাটুন বিজিবিসহ চারস্তরের নিরাপত্তা, ২টি বিশেষ ট্রেন চালু, সিসি ও ড্রোন ক্যামেরায় মনিটরিং

বৃহত্তম ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ

মাজহার মান্না, নিজস্ব সংবাদদাতা, দৈনিক জনকণ্ঠ, কিশোরগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:০৮, ২৯ মার্চ ২০২৫

বৃহত্তম ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ

ছবিঃ সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ প্রস্তুত হচ্ছে উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের জন্য। এবারের ঈদুল ফিতরের বড় জামাতে ইমামতি করবেন মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ, যিনি সকাল ১০টায় ১৯৮তম জামাতের নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর বিকল্প হিসেবে মাওলানা জুবায়ের ইবনে আব্দুল হাইকে মনোনীত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ইতোমধ্যে জামাত আয়োজনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তবে এবারের জামাত নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন সকালে শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা, যাতে দুই পুলিশ সদস্য, এক এলাকাবাসী ও এক হামলাকারী নিহত হয়। এই ভয়ানক হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে এবার ঈদ জামাতে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাঠের চারপাশে পুলিশসহ সাদা পোশাকের গোয়েন্দাদের বিশেষ টিম অবস্থান করবে। ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে এবং গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য মাঠে ৬টি ওয়াচ টাওয়ার এবং সিসি ক্যামেরা দ্বারা পুরো মাঠ মনিটরিং করা হবে।

মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৮টি গেইটে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হবে। নামাজের সময় ঈদগাহ ময়দান ও আশপাশের আকাশে নজরদারি করবে ৪টি শক্তিশালী ড্রোন ক্যামেরা। এছাড়া ৬টি এ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম, ফায়ার ব্রিগেডের ২টি ইউনিট সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকবে এবং বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটসহ পুলিশের কুইক রেস্পন্স টিম প্রস্তুত থাকবে। জামাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিরা ঈদগাহে ছাতা, ব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে ঢুকতে পারবেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং পুলিশ ছুটি বাতিল করেছে।

মাঠের কাতারে নামাজের জন্য দাগ কাটা হয়েছে এবং পর্যাপ্ত অজুখানা প্রস্তুত করা হয়েছে। মাঠের মিম্বরে আলোকসজ্জা, সীমানা প্রাচীরের চুনকাম, এবং মাঠ সংলগ্ন রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এবারও শোলাকিয়া ঈদগাহ থেকে জামাত সরাসরি সম্প্রচার করবে বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল।

মুসল্লিদের সুবিধার্থে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঈদের দিন ‘শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল’ দুটি বিশেষ ট্রেন চালু করেছে। একটির যাত্রা শুরু হবে ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় এবং কিশোরগঞ্জ থেকে ফেরত ট্রেনটি দুপুর ২টায় ভৈরব পৌঁছাবে। অন্য ট্রেনটি ময়মনসিংহ থেকে ভোর পৌনে ৬টায় ছেড়ে কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল ৮টায়।

শোলাকিয়া ঈদগাহের ঐতিহ্য অনুসারে ঈদের নামাজ শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি শর্টগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরুর ঘোষণা দেওয়া হবে। বৃষ্টির কারণে ঈদগাহের আশপাশে পানি জমে না যাওয়ার জন্য পানি নির্গমনের ব্যবস্থা বিশেষভাবে নজর রাখা হয়েছে।

শোলাকিয়া ঈদগাহ কিশোরগঞ্জকে পরিচিত করেছে এবং সারা দেশেও এর পরিচিতি রয়েছে। ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে একসঙ্গে সোয়ালাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন, যা থেকে ঈদগাহ মাঠটির নাম ‘সোয়ালাখিয়া’ হয়ে পরে ‘শোলাকিয়া’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৫০ সালে দেওয়ান মান্নান দাদ খান শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য ৪.৩৫ একর জমি ওয়াকফ করেন, এবং ১৭৫০ সাল থেকে এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বর্তমানে মাঠের আয়তন ৬.৬১ একর।

প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের দিনে শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিণত হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মহামিলন কেন্দ্রে, যেখানে ধনী-গরীব নির্বিশেষে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। একসঙ্গে দেড় লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন এবং ঈদগাহসংলগ্ন খালি জায়গা, রাস্তা ও নিকটবর্তী এলাকায়ও সমসংখ্যক মুসল্লি জামাতে অংশগ্রহণ করেন।
 

মারিয়া

×