ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১

ভোটার তালিকায় তালিকাভুক্ত হলেন শতবর্ষী আম্বিয়া বেগম

ষ্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা/ নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৫:০৭, ২৯ মার্চ ২০২৫

ভোটার তালিকায় তালিকাভুক্ত হলেন শতবর্ষী আম্বিয়া বেগম

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা সদরে গলাচিপা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নতুন ভোটার তালিকায় নাম অন্তভুর্তির কার্যক্রম চলছিল। এ সময় হুইল চেয়ারে করে সেখানে উপস্থিত হন শতবর্ষী এক নারী। নাম আম্বিয়া বেগম। ১৮ বছর বয়স হলেই ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়া প্রতিটি সুস্থ নাগরিকের অধিকার হলেও এতদিন এই অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন এই নারী। সঙ্গত কারনেই এই নারীর জীবনে কখনও ভোটও দেওয়া হয়নি। অবশেষে ভোটার তালিকাভুক্ত হতে পেরে খুশি আম্বিয়া বেগম। আসছে নির্বাচনে তিনি প্রথম বারের মতো ভোট দিবেন এই আশাও প্রকাশ করেছেন। 


আম্বিয়া বেগমের বয়স এখন ১০৫ বছর। তার জন্ম ১৯২০ সালের দিকে। তার জীবন যেন এক চলমান ইতিহাস। ব্রিটিশ শাসন, দেশভাগ, পাকিস্তান আমল, মুক্তিযুদ্ধসহ বহু ঐতিহাসিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি জেলার বাউফলের আব্দুল কুদ্দুস খানের স্ত্রী। বর্তমানে গলাচিপা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে পরিবারের সাথে বসবাস করছেন।


ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত না হওয়া প্রসঙ্গে আম্বিয়া বেগমের নাতি রাকিবুল হাসান জানান, তার দাদির জীবন ছিল অত্যন্ত সংগ্রামের। ১৯৭২ সালে স্বামী আব্দুল কুদ্দুস খানের মৃত্যুর পর তাকে বিভিন্ন জায়গায় ভাসমান হিসেবে থাকতে হয়েছে। কখনো বাউফলে, কখনো পটুয়াখালীতে, কখনো গলাচিপায়। এক জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে না পারার কারণে এতদিন তার ভোটার হওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এবার তাদের পরিবার থেকে উদ্যোগ নিয়ে তার দাদীকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। 


আম্বিয়া বেগমের ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে সহায়তা করেছেন গলাচিপা সদর ইউনিয়নের তথ্য সংগ্রহকারী ও রতনদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা লুৎফুন নাহার। তিনি আম্বিয়া বেগমের প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ ও তথ্য যাচাই করে ভোটার তালিকায় অন্তভূক্তির জন্য কাজ করেন।


গলাচিপা সদর ইউনিয়নের সুপারভাইজার ও বুড়িয়ার বাঁধ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন জানান, আম্বিয়া বেগমের জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করে দ্রুততার সঙ্গে তার ভোটার ফরম পূরণ করা হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হাতে পাবেন।


ভোটার হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শতবর্ষী আম্বিয়া বেগম মাথায় কাপড় গুঁজে মুচকি হেসে আনন্দ প্রকাশ করেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও তার চোখেমুখে ছিল উচ্ছ্বাসের ঝলক। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, জীবনে অনেক কিছু দেখেছি, কিন্তু ভোট দিতে পারিনি। এতদিন পর ভোটার হতে পেরে ভালো লাগছে। ইনশাআল্লাহ্ ভোটও দিতে চাই।


নতুন ভোটার তালিকায় নাম ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই আম্বিয়া বেগম দেশের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটারদের মধ্যে অন্যতম হয়ে গেলেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভোটার হতে পারার আনন্দ তার পরিবারেও ছড়িয়ে পড়েছে।

শিহাব

×