ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

মতলব উত্তরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখী চাষ 

কামাল হোসেন খান, মতলব, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ২৯ মার্চ ২০২৫

মতলব উত্তরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখী চাষ 

ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখী চাষ। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এর চাষ। বাম্পার ফলনের প্রত্যাশায় সূর্যমুখীর হাসিতে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার স্বপ্নে হাসছেন কৃষকরা।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৭ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। অধিকংশই প্রণোদনা ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে হয়েছে। এভাবে প্রতিবছরই সূর্যমুখী চাষ বাড়ছে।

বৈচিত্র্যময় কৃষির উপজেলা মতলব উত্তর। অধিক ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নির্মাণ হয়েছে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প। মেঘনা-ও ধনাগোদা নদী দ্বারা বেষ্টিত এই উপজেলায় প্রায় সব ধরনের ফসল উৎপন্ন হয়ে থাকে। সে কারণেই মতলব উত্তরে চলছে অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন সূর্যমুখী ফুলের চাষ। সূর্যমুখীর তেল কোলেস্টেরলমুক্ত। প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল আমাদের শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে অনন্য। যে কোনো তেলের চাইতে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। আর সে কারণেই মতলব উত্তরে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ।

কৃষিবিরে মতে, এই ফুলের চাষে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের  মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। প্রতি একর জমিতে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে  ৮০ থেকে  ৯০হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।

মতলব উত্তর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৪ টি ইউনিয়নে ৭হেক্টরের অধিক জমিতে কৃষক চলতি মৌসুমে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহ। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসছে দর্শনার্থীরাও। আর কৃষকেরা ভাল ফলন আশা করছেন।

প্রকৃৃতির এক অসাধারণ রূপবান উদ্ভিদ সূর্যমুখী। কেউ কিনেন, কেউ চাষ করেন, আবার কেউ ফুলের সৌন্দর্য দেখেন। এ জন্য সবাই ফুলের কাছে ছুটে যান। আর এ ফুল যদি হয় শস্য ক্ষেতের সুন্দর হলুদ সূর্যমুখী, তাহলে তো কথাই নেই। এমনই এক  হলুদের সমারোহ চিত্র মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার ওেয়ানজিকান্দি এলাকায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জসীম উদ্দিন দেওয়ানজিকান্দি গ্রামে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার। তিনি তৃতীয়বারের মতো হাইসেন জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে আশার আলো দেখছেন। তিনি সূর্যমুখীর হাসিতে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন। সূর্যমুখীর হাসিতে দুলছে কৃষক জসীম উদ্দিনের স্বপ্ন।

কৃষক জসীমউদ্দিনের জমিতে সূর্যের ঝলকানিতে হলুদ রঙে ঝলমল করছে চারপাশ। সূর্যের দিকে মুখ করে আছে ফুল, সকালে পূর্ব দিকে তাকিয়ে হাসলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের আবর্তনে তার দিক পরিবর্তন হয়। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এ যেন সবুজের মাঝে হলুরে সমাহার।    সূর্যের দিকে  মুখ করে হাসছে সূর্যমুখী। আর এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই অনেক মানুষ ভিড় করছেন সূর্যমুখী বাগানের সৌন্দর্য দেখতে। 

মনোরম সুন্দর পরিবেশ, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও উপজেলা সরের নিকটবর্তী হওয়ায় এমন দৃশ্য দেখাকে হাতছাড়া করতে চাইছেন না অনেকেই। সেইসঙ্গে সেলফি ও গ্রুপ ছবি তো আছেই। সবুজ মাঠের এই হলু রঙ ছবিতে এনে দিচ্ছে নতুন মাত্রা।

একগুচ্ছ ফুলের সঙ্গে র্শনার্থীরা সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে যেন হাসছেন। দৃষ্টিকাড়া ফুলের মধ্যে মুঠোফোনে বন্দী করছেন প্রিয় মুহূর্তগুলো। সূর্যমুখী ওই ফুলের বাগানের আশেপাশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পুরো দিনই বাড়ছে মানুষের সমাগম। ফুলে ফুলে ভরে গেছে সূর্যমুখী ক্ষেত। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এই ফুলকে সূর্যমুখী বলা হয়। সূর্যমুখীর ক্ষেতে একবার চোখ পড়লে তা ফেরানো কঠিন। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় উদ্ভাবিত এই ফুলের তেলজাতীয় ফসল সূর্যমুখী হাইসেন জাতের ফুল চাষ করে আশার আলো দেখছেন মতলব উত্তরের কৃষক মোঃ জসীম উদ্দিন।

সূর্যমুখী ফুলের চাষ এই এলাকার ফুল প্রেমিদের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণসহ হইচই ফেলে দিয়েছে। ফুল ফোঁটার পর প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী বাগানে ভিড় করছেন। বিশলা সূর্যমুখী ফুল বাগানের খবর শুনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ফুলবাগানটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। সেলফি তুলছেন উৎসুখ মানুষ। সূর্যমুখী ফুলের চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ এলাকাবাসীর অনেকেই এই ফুল চাষ করারও কথা বলছেন।

জসীম উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। গত দু;বছর আমি সূর্যমুখীর চাষ করেছিলাম। প্রথমবার লাভবান হয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে লাভবান হতে পারিনি। আশা করছি এই বছর লাভবান হবো। আগামী দিনেও সূর্যমুখীর চাষ আরও বাড়াতে চাই। বাম্পার ফলনের আশা করছি।

দর্শনার্থী জেসমিন  আক্তার বলেন, প্রকৃৃতির ঘ্রাণ নিতেই পরিবারকে নিয়ে সূর্যসুখী ফুলের বাগানে এসেছি। ফুলের গন্ধে মন নেচে উঠেছে। সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী বলেন, ঘরবন্দী অবস্থা থেকে একটু মুক্ত হাওয়ায় বেড়াতে ও বাগান ভরা ফুল দেখতে এখানে আসা। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব সুন্দর লাগছে। তাই সবাই মিলে এ মনোরম দৃশ্য ফ্রেমে বন্দী করছি।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, সূর্যমুখী ফুলের চাষে এ এলাকা উপযোগী। এখানে ফলনও ভালো হয়। প্রণোদনা ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে সূর্যমুখী চাষের জন্যে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। অন্যান্য তেলের তুলনায় সূর্যমুখী ফুলের তেলের চাহিদা সব স্থানেই বেশি। তাই আমরা এই তেলজাতীয় ফসল সূর্যমুখী চাষাবাে কৃষকরে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। সূর্যমুখী চাষ কৃষকের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

মায়মুনা

×