ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

আপাতত আগামী জুন পর্যন্ত ॥ বিষয়টি রিভিউ করা হবে

আশ্রিত রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা হাসের সিদ্ধান্ত স্থগিত হচ্ছে

মোয়াজ্জেমুল হক

প্রকাশিত: ০০:২৪, ২৯ মার্চ ২০২৫

আশ্রিত রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা হাসের সিদ্ধান্ত স্থগিত হচ্ছে

আশ্রিত রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা হাসের সিদ্ধান্ত স্থগিত

বাংলাদেশে আশ্রিত লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য খাদ্য সহায়তা খাতে ডব্লিউএফপির (বিশ^ খাদ্য কর্মসূচি) বরাদ্দ হ্রাসের পূর্বেকার সিদ্ধান্ত আগামী জুন পর্যন্ত স্থগিত করা হচ্ছে। বিষয়টি আনঅফিসিয়ালি কক্সবাজারের আরআরসি (শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার) দপ্তর ইতোমধ্যে অবহিত হয়েছে।

অফিসিয়াল নির্দেশনা খুব দ্রুত আসছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। তবে বর্তমানে রোহিঙ্গাদের মাথাপিছু সাড়ে ১২ ডলারের স্থলে ১২ ডলার করা হচ্ছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে এটি বাস্তবায়িত হবে। ফলে দশমিক ৫০ ডলার কমবে। যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। 
আরআরসি দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, আশ্রিত  রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার পরিমাণ হ্রাসের বিষয়টি ঠেকাতে জাতিসংঘের তৎপরতায় ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। বিশেষ করে অতিসম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চারদিনের বাংলাদেশ সফরে এসে সরেজমিন কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।

সার্বিক বিষয়ে তিনি সম্যক ধারণা গ্রহণ করেন। ফিরে গিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব এ ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগী হয়ে তৎপরতা বাড়িয়ে দেন। এর ফলে আপাতত আগামী জুন মাস পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা হ্রাসের পূর্বের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার আভাস মিলেছে। তবে খাদ্য সহায়তা খাতে মাথাপিছু সাড়ে ১২ ডলারস্থলে ১২ ডলার কার্যকর হবে আগামী ১ এপ্রিল থেকে।

এতে বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে অনেকটা স্বস্তি এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত আপাতত আগামী জুনমাস হলেও তা আরও বৃদ্ধি পাবে। এমনকি শেষ পর্যন্ত হ্রাসের সিদ্ধান্ত বাতিলও হয়ে যেতে পারে।
সূত্র জানিয়েছে, ডব্লিউএফপির বক্তব্য অনুযায়ী, দাতাদের পক্ষ  থেকে বড় অঙ্কের পরিমাণ সাহায্য কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তার রেশন হ্রাসের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। আগামী ১ এপ্রিল থেকে বরাদ্দ অর্ধেক করার কথা বলা হয়। বিষয়টি আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য বড় ধরনের দুঃসংবাদ হয়ে আসে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য এ বিষয়টি মানবেতর অবস্থার সৃষ্টি করবে। শুধু তাই নয়, আশ্রিতদের মধ্যে অনেকে অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ের পথ খুঁজবে। এর আগে ডব্লিউএফপি বলেছে, দাতাদের সাহায্যের পরিমাণ ব্যাপকভাবে এমনিতেই হ্রাস পেয়েছে।

এক্ষেত্রে আরও হ্রাস করা হলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ খাতে বরাদ্দ অর্ধেক কমার সিদ্ধান্ত আসে। অর্থাৎ বর্তমানে মাথপিছু সাড়ে ১২ ডলারের খাদ্য সহায়তা ৬ ডলার করার কথা বলা হয়।
সূত্র জানিয়েছে, ইউএনএইচসিআরসহ ১১৩টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ও স্থানীয় কমিউনিটির জন্য ২০২৫-২০২৬ সালের জন্য ৯৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা চেয়েছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে বড় দাতাদেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন ইউএসআইডির অর্থায়ন বিশ^জুড়ে বাতিল করেছে। ফলে ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা অর্ধেকে হ্রাস করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

কিন্তু এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করার জন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থার পাশাপাশি খোদ জাতিসংঘ মহাসচিব তৎপর হন। ফলে আপাতত আগামী জুন মাস পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করার আনঅফিসিয়াল সিদ্ধান্ত মিলেছে। তবে মাথাপিছু দশমিক ৫০ ডলার কমবে ১ এপ্রিল থেকে। 
এদিকে, আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সরকারিভাবে প্রায় ১২ লাখ বলা হলেও ইতোমধ্যে তা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বেসরকারি পরিসংখ্যানে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র সেনা অভিযান শুরু হয়। রোহঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা, নারী ধর্ষন চলতে থাকায় প্রাণে বাঁচতে দলে দলে এ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে।

ওই সময়ে এ সংখ্যা সরকারিভাবে প্রায় ১২ লাখ নির্ণয় হয়। অথচ বেসরকারি পর্যায়ে এ সংখ্যা ছিল আরও বেশি। অর্থাৎ প্রায় ১৩ লাখ। পরবর্তীতে বিভিন্ন ফাঁকফোকরে আরও বহু রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে বছরে গড়ে ৩০ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে।

এছাড়া গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর সরকারিভাবেই বলা হয়েছে আরও ৬০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে।  বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে বেসরকারিভাবে বলা হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বলে তথ্য দিচ্ছে। 
এমনিতর পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা প্রদান হ্রাস করার বিষয়টি রিভিউ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কক্সবাজারের আরআরসি দপ্তর সূত্র। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। ফলে খাদ্য সহায়তা হ্রাসের সিদ্ধান্ত আগামী জুন পর্যন্ত স্থগিত থাকছে। তবে ১ এপ্রিল থেকে মাথাপিছু দশমিক ৫০ ডলার হ্রাসের বিষয়টি মন্দের ভালো বলেও রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো মনে করছে।

×