ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

পশ্চিমাঞ্চলে ঈদের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রলিম্যানরা রেললাইন সচল রাখছেন

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী

প্রকাশিত: ০০:০৯, ২৯ মার্চ ২০২৫

পশ্চিমাঞ্চলে ঈদের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রলিম্যানরা রেললাইন সচল রাখছেন

ঈদের পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন চলছে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে। প্রতিটি ট্রেন ঠিক সময় মতো যাত্রীদের নিয়ে চলাচল করছে। এবার এ পর্যন্ত তেমন সমস্যা দেখা দেয়নি। যাত্রীরাও স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন। বিলম্ব নেই কোন ট্রেনের। উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিনাঞ্চলের কিছু অংশ জুড়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ঈদের ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ১৭ জোড়া ট্রেন চলছে। এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন পথে আরও ৩৫ জোড়া ট্রেন রয়েছে। যাত্রীদের নিরাপদে বাড়ি পৌছাতে রেলপথের রেললাইন মজবুত রাখা স্লিপারের সাথে নাটবণ্টু ঠিক আছে কিনা তা প্রতিক্ষন নজরদারী করতে হচ্ছে প্রকৌশলী সাথে নিয়ে এক ঝাঁক ট্রলিম্যানদের। বলতে গেলে রাতদিন পরিশ্রম করে রেল দপ্তরের প্রকৌশল বিভাগ। এই বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ এক পদের নাম ট্রলিম্যান। মূলত রেলপথের ক্রটি-বিচ্যুতি অনুসন্ধানে সাহায্য করেন এই ট্রলিম্যানরা। আর মূল অনুসন্ধানের কাজটি করেন প্রকৌশলীরা। এমন একটি রেলপথ চিলাহাটি-নীলফামারী-সৈয়দপুর ও পার্বতীপুর। আবার পার্বতীপুর-সান্তাহার। সান্তাহার টু ঈশ্বরর্দী, রাজশাহী। ঈশ্বরর্দী- খুলনা- ঈশ্বরর্দী যমুনা সেতু এপার। আবার যমুনা সেতুর ওপার থেকে ঢাকা পর্যন্ত চলে এক ঝাঁক ট্রলিম্যানদের দিনরাত।

বর্তমানে রেলপথে এমন চিত্র চোখে পড়লো নীলফামারীর ডোমারের চিলাহাটি থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত। এখানে রেলপথ রয়েছে ৬১ কিলোমিটার। এ রেলপথে রয়েছে একজন ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী। তাকে বয়ে নিয়ে চলতে রয়েছে চারজন ট্রলিম্যান। তাদের মধ্যে একজন লিটন খান।

লিটন খান বলেন, আমাদের ট্রলিম্যানের চাকরিটা মূলত ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী স্যারের সঙ্গে। উনি যেখানে যাবেন সেখানেই আমাদের ট্রলি নিয়ে যেতে হবে। ট্রলি বাদেও সড়কে বা ট্রেনে কাজ থাকলে যেতে হয়। আমাদের এটা হার্ডওয়ার্কিং জব। তবে হার্ডওয়ার্কিংটা সমস্যা না।

সবচেয়ে বেশি পেইন আমাদের চাকরিটার নির্দিষ্ট কোনো টাইম নেই। চাকরিতে যেমন নিদিষ্ট একটা টাইম থাকে। সব সময় আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হয় কখন ডাক পড়ে।যেহেতু ইমার্জেন্সি স্টাফ রাতদিন বলে কিছু নেই ট্রলিম্যানদের। আরেক ট্রলিম্যান কহিনুর মোড়ল।

তিনি জানান, দিন রাত বলতে কিছু নেই।  গাড়ি পড়েছে বা কোথাও রেললাইনে ফাটল দেখা গেছে। সাথে সাথে দৌড়াতে হয়। ব্রিটিশ যেটা নিয়ম করে গেছে সেইভাবেই সাহেবদের নিয়ে ট্রলি চালাচ্ছি। আমাদের কোন উৎসব নেই বললেই চলে। ঈদ আর পূজা নাই আমাদের ডিউটি চলবেই। তবে ঈদের দিন ও ঈদের পরের দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলে হয়তো বিশ্রাম পাবো।

ছোটখাটো প্রয়োজনে ট্রলিতে যন্ত্রপাতি থাকা সাপেে নিজেরাই মেরামত করেন অথবা মিস্ত্রিকে ডেকে পাঠান। সাধারণত প্রতি ৬ কিলোমিটার রেলপথে প্রকৌশল দপ্তরের একজন করে মিস্ত্রি বা কিম্যান থাকে। সামনে বাক্স থেকে রেঞ্চ, হাতুড়ি, শাবল, করাতের মতো জিনিসপত্র নিয়ে তিনি হেঁটে বেড়ান রেললাইন ধরে। রেল বা লোহার বারের কোথাও কিছু ঢিলা হয়ে থাকলে টাইট দেন, আগাছা পরিষ্কার করেন, পাথর সরে গেলে নির্দিষ্ট স্থানে এনে গুছিয়ে রাখেন।

ট্রলিম্যান সোলেমান বলেন, আগে ছিল পুশ ট্রলি। স্যারের সুবিধার্থে আমরা মেশিন লাগিয়েছি। যেহেতু ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্ট সেজন্য তাড়াতাড়ি যেতে এই মেশিন ভালো কাজে দেয়। মূলত আমাদের পুশ ট্রলি। আমরা মেশিন ট্রলি করে নিয়েছি। ট্রেনে সময়সূচি হিসেব করেই লাইনে নামি আমরা। এরপরও কোনো ট্রেন চলে আসলে এক লাইন থেকে অন্য লাইনে সরিয়ে নেই আমরা।

সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) সুলতান মৃধা  বলেন, আমাদেরও ২৪ ঘণ্টা ডিউটি, ট্রলিম্যানদেরও। অর্থাৎ আমার ডিপার্টমেন্টের সবার ২৪ ঘণ্টা ডিউটি। কেউ বলতে পারবে না আমি ডিউটি করে আসছি আর যেতে পারবো না। কাজে যেতেই বাধ্য তারা। ট্রলিম্যানরা সব সময় আমাদের হেল্প করে। ওয়েম্যানদের সব সময় পাশে থাকে এটি হলো নিয়ম তাদের। তাদের কাছে লাইনের যেসব কাগজপত্র তারাই অফিসারের প্রোগ্রামের সময় এসব নিয়ে যায়।

তিনি জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে পশ্চিমাঞ্চল রেলের ১৭ জোড়া ট্রেন ঢাকা থেকে ও পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা, রাজশাহী, চিলাহাটি সহ বিভিন্ন রুটে আরও ৩৫ জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। সকল ট্রেনের চলাচল স্বাভাবিক ও রেললাইন ঠিক রাখতে নজরদারি চলছে ২৪ ঘন্টা।

রাজু

×