ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

কৃষকের মুখে হাসি

জেগে ওঠা তিস্তাচরে হরেক সবজি চাষ ফলন ভালো

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ২৮ মার্চ ২০২৫

জেগে ওঠা তিস্তাচরে হরেক সবজি চাষ ফলন ভালো

সবজির মধ্যে ফলন ভালো হয়েছে মিষ্টি কুমড়ার

যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। চরের ধু ধু বালুচর এখন সবুজে ঢেকে গেছে। এ বালুচরে চাষাবাদ হচ্ছে ভুট্টা, আমন ধান, মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, বরবটি, মিষ্টি আলু, বাদাম, করলা, বেগুন, পুঁই শাক, লাউ শাকসহ বিভিন্ন রবি শস্য। এসব শস্য চাষে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন তিস্তা পাড়ের কৃষক। প্রায় প্রতিটি ফসলের ভালো ফলন হওয়ায় বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত তারা। 
তিস্তা নদী বেষ্টিত জেগে ওঠা চরাঞ্চলের জমিতে নিরাপদ মিষ্টি কুমড়াসহ নানা জাতের সবজি চাষ করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। চরের চাষিরা বলছেন, চরের আবাদ তাদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।
সরেজমিন উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, বালুচরে শোভা পাচ্ছে মিষ্টি কুমড়াসহ নানা জাতের শস্য। এসব চরের চাষিরা আলু, গম, বাদাম, সরিষা, রসুন, পিঁয়াজের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন। তিস্তার চরাঞ্চলে পলি ও উর্বর দো-আঁশ মাটিতে মিষ্টি কুমড়ার বা¤পার ফলন ও অধিক দাম পাওয়ার আশাও করছেন চাষিরা।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, তিস্তা নদী উত্তরের নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধাসহ ৫টি জেলা দিয়ে প্রবাহিত। প্রতিটি জেলায় তিস্তা নদীতে জেগে ওঠা চরের আয়তন ক্রমাগত বাড়ছে। এতে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমলেও চরগুলোতে চাষাবাদ বেড়েছে। চলতি মৌসুমেই আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ২ লাখ হেক্টর।

এবার নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন চরে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে  রবি শস্য চাষে কোমর বেঁধে নেমেছেন কৃষকরা। তাই যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। শুধু চরের জমিতে নয়, চরে বসবাসকৃত অনেক পরিবার বাসভূমিতে জাঙ্গি তৈরি করে সেখানেও সবজি চাষ করছেন। 
ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি তেলিপাড়া এলাকার বিধবা শরিফা বেওয়া (৫০) বলেন, ‘তিস্তা নদী হামার গুলার জমি-জিরাত, বাড়ি-ভিটা সউগ নিছে। এলা নদীর ভাসা চরত কৃষি অফিসের বুদ্ধি শুনিয়া কাশিয়াবাড়ি চোটেয়া মিষ্টি কুমড়া, আলু, গম, বাদাম, সরিষা, রসুন, পিঁয়াজ আবাদ করি লাভ পাবার নাগছি। চরের আবাদ হামার ভাগ্য বদলে দিছে।’ 
একই অভিব্যক্তি স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম, যীতেন্দ্র নাথ, তুহিন মিয়া, দুলাল হোসেনসহ অনেকেরই। তারা বলছেন, চর এখন আর অভিশাপ নয় হয়ে উঠেছে সবুজের আশীর্বাদ।
চরখড়িবাড়ি চরের কৃষক হামিদুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে গম উঠে গেছে। কিছু ভুট্টা উঠেছে। গম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫০ টাকা মণ  ও ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা মণ দরে। এবার দাম ভালো উঠেছে। কিন্তু চর থেকে হাটবাজারে পরিবহনে খরচ বেশি হচ্ছে। তারনপরও বেশ লাভ পাচ্ছি আমরা। ডিমলার ঝাড়সিংগশ্বর এলাকার কৃষক মামুন ইসলাম বলেন, আগে তিস্তার চরাঞ্চল পতিত ছিল।

অন্য ফসলের আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় এসব জমিতে ফসল ফলানো হয়নি। এখন আধুনিক পদ্ধতিতে চরে নানামুখী রবি শস্য চাষ হচ্ছে। এতে ভালো ফলন এবং দামও পাওয়া যাচ্ছে।
খালিশাচাঁপানী ডালিয়ার বাঘের চর , যা তিস্তা ব্যারাজ সংলগ্ন। এখানকার কৃষক আরিফ হোসেন বলেন, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা ও গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা এলাকার কৃষক বিমল চন্দ্র রায় জানান, গত বছর মিষ্টি কুমড়ার দাম বেশি পাইনি। এবার আশা করছি ভালো দাম পাব। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন ভালো হবে। তিস্তা চরে আবাদ করে নদীপাড়ের মানুষের সংসার চলে। চাষাবাদের জন্য তেমন কোনো জমি নেই। তাই প্রতিবছর নদীতে চর জাগার অপেক্ষায় থাকি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন,  তিস্তায় জেগে ওঠা চরে ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে ও হচ্ছে। তিস্তাপাড়ের কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি আমরা।

×