ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

মূহুর্তে ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেলো নারী শ্রমিক সাবার! 

মাহফুজ মন্ডল, বগুড়া

প্রকাশিত: ০০:৫৪, ২৮ মার্চ ২০২৫

মূহুর্তে ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেলো নারী শ্রমিক সাবার! 

ছবিঃ সংগৃহীত

সাবা, ৩৫ বছর বয়সী এক পরিশ্রমী নারী। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবারও (২৭ মার্চ) কাজে গিয়েছিলেন তিনি, পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর তাগিদে। সামনে ঈদ, তাই আরও একটু বেশি কাজ, একটু বেশি উপার্জনের স্বপ্ন ছিল তার চোখে। কিন্তু কপালে লেখা ছিল আরেক গল্প। কর্মক্ষেত্রেই এল তার জীবনের শেষ মুহূর্ত।

বগুড়ার শাজাহানপুরের বনানী এলাকায় অবস্থিত কিরণ সরিষার তেলের মিলে কাজ করতেন সাবা। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) বিকেলে মিলের অন্যান্য শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করছিলেন তিনি। হঠাৎ মেশিনের সঙ্গে তার কাপড় পেঁচিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। মিলের গর্জন, সহকর্মীদের চিৎকার, আর যন্ত্রণায় কাতরানো সাবার করুণ আর্তনাদ সব মিলিয়ে এক মর্মান্তিক দৃশ্য।

সহকর্মীরা দেরি করেননি। তড়িঘড়ি করে তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, সাবা আর নেই।

সাবার মৃত্যু যেন মিলের প্রতিটি শ্রমিকের হৃদয়ে এক শূন্যতা তৈরি করেছে। তার এক সহকর্মী কাঁদতে কাঁদতে বললেন, "ঈদের আগে তার মনে কত আনন্দ ছিল! নতুন জামা কিনবে, ছেলে-মেয়েদের মুখে হাসি ফুটাবে, অথচ আজ সে নিজেই আর নেই!"

একজন শ্রমিকের জীবন মানেই কি এমন অনিশ্চয়তা? প্রতিদিন সকালবেলা কাজে বেরিয়ে যাওয়া, আর নিশ্চিতভাবে ফেরা না-ফেরা? সাবার মৃত্যু যেন শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার নগ্ন চিত্রও তুলে ধরে।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, "আমরা খবর পেয়েছি, ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" 

কিন্তু ততক্ষণে যা হারানোর, তা হারিয়ে গেছে। এক গরিব ঘরের স্বপ্নভরা মায়ের কপালে ঈদের খুশির বদলে লেগে গেছে শোকের ছায়া। ঈদের নতুন পোশাকের জায়গায় এখন সাবার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে কাফনের সাদা কাপড়। 

শ্রমজীবী মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কতটুকু নিশ্চিত? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। নাহলে হয়তো আজ সাবা, কাল অন্য কেউ দুর্ঘটনার তালিকা দীর্ঘ করতে থাকবে।

ইমরান

×