
উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে পবিত্র মাহে রমজানে চাহিদা বেড়েছে মুড়ির। ফলে মুড়ি উৎপাদনে দিন-রাত এক করে কাজ করেছেন ঝালকাঠির নলছিটির মুড়িয়ালরা। রোজার সময় ছাড়া অন্য সময়ে বেচাকেনা তেমন না থাকায় কষ্টে দিন কাটাতে হয় মুড়ি কারিগরদের। তবে তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় বিসিক কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাটির পাত্রে ভাজা হচ্ছে মুড়ি। আর কেনার জন্য আগে থেকেই ভিড় করে আছেন ক্রেতারা। মুড়ি ছাড়া রমজানের ইফতার যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই তো মুড়ি ভাজার ধূম পড়েছে মুড়ির জন্য বিখ্যাত ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দশটি গ্রামে। প্রাচীনকাল থেকেই ঝালকাঠির বিভিন্ন স্থানে মুড়ি ভাজার ঐতিহ্য রয়েছে।
তবে পেশা হিসেবে বংশ পরম্পরায় এ কাজ করছে নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। এখানকার দপদপিয়া, সরই, সূর্য্যপাশা, কুড়ালিয়া, তীমিরকাঠি ও নাচনমহলসহ কমপক্ষে দশ গ্রামে এখন রমজানকে কেন্দ্র করে মুড়ি ভাজায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। তাদের যেন ব্যস্ততার শেষ নেই।
এ বিষয়ে কথা হয় বৃদ্ধ হাবিব সরদারের সাথে। তিনি বলেন, "বুঝ শক্তি হবার পর থেকে দেখি মুড়ি ভাজতে। বাবার কাছে শুনেছি তার পূর্বপুরুষ থেকেই মুড়ি ভাজার কাজ চলছে। আড়তদারদের দেয়া চালে ৫০ কেজির এক বস্তা চালে ৪২-৪৩ কেজি মুড়ি হয়। মুড়ি ভাজার লাকড়ি, হাড়ি-পাতিলের খরচ দিয়ে ৫০ কেজি মুড়ি ভেজে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪০০ টাকা পাওয়া যায়।"
নলছিটির অনেক পরিবার পেশা হিসেবে বছরের বারো মাস মুড়ি ভাজলেও রমজানে নাওয়া-খাওয়ারও সময় মেলে না তাদের। রমজান মাসে বেড়ে যায় মুড়ির চাহিদা। প্রায় প্রতিদিন আশেপাশের জেলা থেকেও মুড়ি কিনতে নলছিটিতে আসেন অনেকেই। দেখা যায়, বাড়িতে এসে মুড়ি ভেজে নিয়ে যাচ্ছেন দূর-দূরান্তের সাধারণ গৃহস্থসহ মুড়ি ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, গত কয়েক যুগ ধরে এসব গ্রামের কয়েকশ পরিবার মুড়ি ভেজে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। প্রতিটি পরিবারে একজন নারী মুড়ি ভাজার মূল ভূমিকায় রয়েছেন, যাকে পরিবারের অন্য সদস্যরা সহায়তা করে থাকেন। রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার ছাড়া এসব মুড়ি এখন বরিশাল, ঢাকা ও ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রসিদ্ধ। উৎপাদনের ব্যাপকতার কারণে এ গ্রামগুলো এখন মুড়ি পল্লী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
মুড়ি ভাজার কৌশল জানতে চাইলে দক্ষিণ তিমিনকাঠি গ্রামের কাজল রেখা জানান, "মুড়ি ভাজতে হলে হাতের টেকনিক জানাটা অনেক দরকার। পাশাপাশি মুড়ি ভাজার উপযোগী মাটির চুলা ও সরঞ্জামের গুরুত্বও অনেক। প্রথমে মোটা চাল লবণ পানির সঙ্গে মিশিয়ে মাটির পাত্রে হালকা ভাজেন।"
রেখা বলেন, "৫০ কেজি বস্তার চালের জন্য এক কেজি লবনের প্রয়োজন হয়। চাল ভাজার পাশাপাশি অন্য মাটির পাত্রে বালির মিশ্রণ গরম করতে হয়। এরপর মাটির অন্য পাতিলের মধ্যে গরম বালি ঢেলে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ভাজা চাল ঢেলে দেন। ১০-১৫ সেকেন্ডের নারাচাড়ায় তৈরি হয়ে যায় ভালো মানের মুড়ি।"
তিনি বলেন, "চুলার তাপ ও সংসারের কাজের জন্য রাত ৩টা থেকে সকাল ৯টার মধ্যেই ভাজার কাজ শেষ করতে চেষ্টা করেন সবাই। একদিনে কেউ ৫০ কেজি, কেউ আবার ১শ কেজি চালের মুড়িও ভাজেন। এ বছর বাজার দর অনুযায়ী প্রতি কেজি মুড়ি ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।"
এ বিষয়ে ঝালকাঠি বিসিকের শিল্পনগরীর কর্মকর্তারা জানান, "ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী খাবার মুড়ি। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা এবং এর সঙ্গে জড়িতদের জীবনমান উন্নয়নে সহজ শর্তে ঋণদান ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হবে।"
নুসরাত