
ধানের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কৃষকরা। এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ভুুট্টার আবাদ করেছে কৃষকরা। এক কথায় ভুট্টা চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে উপজেলার কৃষকরা। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন কৃষকরা ভুট্টা উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। উপজেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। ধানের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন ভুট্টা চাষ বাড়ছেই। স্বল্প ব্যয়ে দ্বিগুণ লাভের পাশাপাশি বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় এই উপজেলার কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
উপজেলার নদী তীরবর্তী এখলাছপুর ইউনিয়নের চরকাশিম বোরচর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্তজুড়ে ভুট্টা চাষের আবাদ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি প্রধান এলাকা। কৃষির জন্য আদর্শ বলে ধান, পাট, সরিষাসহ সকল ফসল ফলে থাকে। অন্যান্য ফসলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মতলবে গত কয়েক বছর যাবত রেকর্ড পরিমাণ ভুট্টার চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় চাষের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জামিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে।
গত বছর উপজেলায় ২ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছিল। এ বছর উপজেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্র ২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বাস্তবে এর চাইতে অনেক বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। তবে উপজেলার মেঘনা, ধনাগোদা নদীর চরে শতশত একর জমিতে এবার ভুট্টার বীজ বপন করা হয়েছে।
কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় বিভিন্ন ইউনিয়নে ভুট্টার চাষ ব্যাপকহারে বেড়েছে। অন্য ফসলের তুলনায় কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় আগাম ভুট্টা চাষেও ঝুঁকছেন চাষিরা। লাভজনক এই ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর কৃষকদের সার বীজ ও কৃষি পুনর্বাসনসহ পরামর্শ সহায়তা দিয়ে কৃষকদের উৎসাহী করছে। এর ফলে দিন দিন কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে ভুট্টা চাষে।
মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি মাছ, হাঁস-মুরগি ও গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাহিদাও বেড়েছে অনেক বেশি। ভুট্টাগাছের পাতা সুষম গো-খাদ্য এবং কা- জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে একদিকে যেমন কৃষক তার গবাদি পশু পালন ও জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পারে, অপরদিকে বাজারে ভুট্টা ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষক এ ফসলে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
মতলব উত্তর উপজেলার চরকাশিম বোরচরের ভুট্টা চাষি মোঃ জামাল বাদশা জানান, এবার সাড়ে ৪ একর জমিতে তিনি আগাম ভুট্টার আবাদ করেছেন। ভুট্টা চাষে রোগ বালাই কম হয়। ভুট্টার বিশেষ চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাওয়া যায়।
তিনি আরো জানান, ভুট্টা চাষে জমিতে পানি সেচ কম লাগে এবং ফলনও অন্য ফসলের তুলনায় বেশি হয়। ফলে ধান আবাদের চেয়ে ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহ আমার। ভুট্টা মাছ ও মুরগির খাবার হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া ভুট্টা বাজারে বিক্রি করার পরও এর শুকনো গাছ ও মোচা বাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সময়ে জমিতে ভুট্টার বীজ বপন করা হয়। ৪-৫ মাসের মধ্যেই ঘরে চলে আসে ভুট্টা। বীজ, সার, পানি, জমি প্রস্তুুত লাগানো, শ্রমিক মজুরি, কাটা-মাড়াইসহ প্রতি বিঘায় তাদের খরচ হয় সর্বোচ্চ ১১-১৩ হাজার টাকা। ভুট্টা বিঘাতে গড়ে ৪৫-৫০ মণ হয়। বাজারে ভুট্টা অনেক চাহিদা আর দামও মোটামুটি ভালো।
উপজেলার ঘনিয়ারপাড় গ্রামের কৃষক বিমল চন্দ্র দাস জানান, অন্য বছরের তুলনায় এবার অনেক আগে ২ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ধান কাটার পর মাটি প্রস্তুুত করে সেই জমিতে আগাম ভুট্টাা চাষ করছি। সব দিক বিবেচনা করে ভুট্টা চাষে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় দিন দিন ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে এলাকার কৃষকদের।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, আলুর চাইতে ভুট্টা চাষ লাভজনক। পরিশ্রম কম ও উৎপাদন খরচও কম, তাই কৃষকরা কম খরচে বেশি লাভবান হওয়া ভুট্টাকে বেছে নিয়েছে।
গত বছর প্রতি মণ ভুট্টা বিক্রি হয়েছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ। বিঘাতে ৪৫-৫০ মণ পর্যন্ত ভুট্টা উৎপাদন হয়ে থাকে। এ বছর উপজেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্র ২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।
রাজু