
ছবি: জনকণ্ঠ
কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ বাংলার ঐতিবাহী নৌকা বাইচ। আগে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে এই নৌকা বাইচের আয়োজন করা হতো। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীতে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হতো। এখন আর তেঁতুলিয়ার পাড়ে সেই প্রাণচাঞ্চল্যতা নেই।
একসময়ে হাজার হাজার মানুষ এই নৌকা বাইচ উপভোগ করতো। তেঁতুলিয়া নদীর একপা্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে এ নৌকা বাইচ উপভোগ করতো। তখন মাঝিদের উচ্ছ্বাসী স্লোগান, আর দর্শকদের করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠতো।
ঐতিহ্য নৌকা বাইচের আয়োজন কেবল একটি প্রতিযোগিতা ছিলনা বরং নদী-কেন্দ্রিক জীবনের এক উৎসব ছিল । যেখানে মিশে আছে স্থানীয় সংস্কৃতি, কৃষকের আশা-নিরাশা, এবং প্রজন্মান্তরের ভালোবাসা।
বাউফলের নৌকা বাইচের ইতিহাস অনেক পুরানো। শত বছর আগ থেকেই এই নৌকা বাইচ হতো তেঁতুলিয়া নদীতে। তখন তেঁতুলিয়া নদী ছিল উত্তাল। ডেউয়ের তালে তালে মাঝি মাল্লারা বেঠা চালাতো। পানির কলতানের শব্দ কান পর্যন্ত পৌঁছাতো। মাল্লাদের মুখে ছিল হেইয়াহো.. শব্দ।
স্থানীয় কয়েক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, ব্রিটিশ আমলে কৃষি ফসলের মৌসুম শেষে নৌকা বাইচের এই আয়োজন করা হতো। মাঘ মাসের শেষে কুয়াশা ঢাকা সকালে নৌকাগুলো সাজানো হয় ফুল, রঙিন কাপড়, এবং মাটির প্রদীপে। প্রতিটি নৌকার নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ইতিহাস বা স্বপ্ন।
আগে গ্রামঞ্চলে নৌকা বাইচের প্রস্তুতি শুরু হতো মাসখানে আগ থেকে। প্রতিটি ইউনিয়নের গ্রামবাসী অর্থ, শ্রম, আর আবেগ দিয়ে গড়ে তোলে তাদের নৌকা। কেউ বাঁশ কাটে, কেউ রঙ তৈরি করে, কেউবা মাঝিদের জন্য রান্না করে। নৌকা বাইচে জেতার মূল মন্ত্র হলো দলের সমন্বয়।
জাহিদুল নামের একজন মাঝি বলেন, "বৈঠার শব্দ, শ্বাস-প্রশ্বাস, স্লোগান—সবই যেন একসুরে বাঁধা। সামনে শুধু লক্ষ্য, আর বার বার ফিছনে তাকাতো চোখ।" যদিও আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ আগেরমত চোখে পরেনা। আয়োজন করতে কেতউ এগিয়েও আসেনা।
এখন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ের মানুষ ল্যাম (আঞ্চলিক ভাষা) বা হেরিকেন জ্বালিয়ে সুর তোলেনা “তেঁতুলিয়া মায়ের কূল নাইরে, নৌকা বাইয়া যাইরে।” একসময়ে বাউফলের মানুষের কাছে এই বাইচ শুধু হারের জিতের খেলা ছিলনা। বরং নদীর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলারও খেলা ছিল।
শহীদ