ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১

বিটুমিন ছাড়াই সড়ক নির্মাণ, হাতের টানেই উঠে যাচ্ছে ঢালাই!

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ২৫ মার্চ ২০২৫

বিটুমিন ছাড়াই সড়ক নির্মাণ, হাতের টানেই উঠে যাচ্ছে ঢালাই!

ছবি: জনকণ্ঠ

বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নে লোদা সেতু থেকে কাউনিয়া ইসমাইল হাওলাদার বাড়ি পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সড়কের কাজ নিম্নমানের হওয়ায় সামান্য চাপেই ঢালাই উঠে যাচ্ছে। অটোগাড়ির চাকা বা হাত দিয়ে সামান্য টান দিলেই সড়কের ঢালাই উঠে আসছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার শাহীন তালুকদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সড়ক নির্মাণ করেছেন, যার ফলে নির্মাণের মাত্র তিন দিনের মাথায় রাস্তার ঢালাই উঠে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এলজিইডি বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেদী হাসান খাঁন ও আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ইদ্রিস আলীর যোগসাজশে ঠিকাদার কাজের অনিয়ম করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন স্থানে ঢালাই উঠে গেছে। স্থানীয়রা জানান, বিটুমিন ছাড়াই ঢালাই দেওয়া হয়েছে, ফলে ম্যাগাডামের ওপরে টেকসই কোনো স্তর তৈরি হয়নি। দরপত্র অনুযায়ী, পাঁচ ইঞ্চি সাববেইজ থাকার কথা থাকলেও সেখানে মাত্র তিন ইঞ্চি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে, এক ইঞ্চি ঢালাই থাকার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে মাত্র আধা ইঞ্চি।

স্থানীয় বাসিন্দা বশির উদ্দিন বলেন, “পায়ের ঘষাতেই রাস্তার ঢালাই উঠে যাচ্ছে। এমন নিম্নমানের কাজ আগে কখনও দেখিনি।” একই অভিযোগ করেছেন গ্রামের শাহজাহান হাওলাদার ও জাহাঙ্গির মিয়া। তারা জানান, কাজের সময় বিটুমিন ব্যবহারের দাবি জানালেও ঠিকাদারের লোকজন তা উপেক্ষা করেছেন।

কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমির ছাত্র রাতুল ইসলাম ও সাব্বির হোসেন বলেন, “রাস্তার এমন অবস্থা হলে কিভাবে চলাচল করব? পুনরায় এই রাস্তা নির্মাণ করা হোক।”

অটোগাড়ি চালক বাহাদুর ও আল আমিন জানান, কাজ শেষ হওয়ার তিন দিনের মধ্যেই সড়কের ঢালাই উঠে যেতে শুরু করেছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদার শাহীন তালুকদার বলেন, “আমি কাজ ঠিকমতোই করেছি। তবে ভুলত্রুটি হতেই পারে। ঢালাই উঠে গেলে বিটুমিন দিয়ে পুনরায় ঠিক করা হবে।”

আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, “ঠিকাদার বিটুমিন ছাড়া ঢালাই দিয়েছেন এবং ঢালাই উঠে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। সহকারী প্রকৌশলীকে সরেজমিন তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।” তবে তিনি ঠিকাদারের সঙ্গে অনিয়মের যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করেন।

বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, “ঠিকাদারের সঙ্গে স্থানীয়দের দ্বন্দ্ব রয়েছে, তাই তারা এমন অভিযোগ করছেন।” অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, “সড়কের অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বরিশাল অঞ্চল) শেখ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, “ঠিকাদারের সঙ্গে প্রকৌশলীদের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এম.কে.

×