
ছবি: তিনজন গ্রেপ্তার
বালুমহাল ইজারা দরপত্র জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে সেনা সদস্যকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ২০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার শেষ কার্যদিবসে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। এর আগে সোমবার রাতে নগরীর রিচমার্ট আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে অপহৃত সেনাসদস্যকে উদ্ধার করা হয়।
একই অভিযানে হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশে তুলে দিয়েছে সেনাবাহিনী।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান। মামলাটি দায়ের করেছেন চাঁদপুরের মতলব থানার বাসিন্দা আব্দুল মতিন কাজী।
ওসি মিজান বলেন, এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ১২ জনের নামোল্লেখ ও ৮ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলায় জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক, বরিশাল জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং মহানগর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদককে আসামি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-জেলার হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট দেওয়ান মো. মনির হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নূর হোসেন সুজন ও হিজলা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ইমরান খন্দকার।
এছাড়া মামলার পলাতক আসামিরা হলেন- জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক প্রকৌশলী মাহফুজুল আলম মিঠু, জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাকসুদুর রহমান ওরফে মাসুদ রাঢ়ী, কাশিপুরের রুবেল, মহানগর যুবদল নেতা ও হোটেল রিচমার্টের মালিকানা অংশিদার বেলায়েত হোসেন ওরফে বেলায়েত, গণপাড়ার মো. জাহিদ, মহানগর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদা বেগম, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান মঞ্জু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নিজামুর রহমান নিজাম।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, নগরীর লঞ্চঘাট এলাকায় বিআইডব্লিউটিসি ভবনে রিচমার্ট হোটেল থেকে আটক তিনজনকে মঙ্গলবার থানায় হস্তান্তর করেছে সেনাবাহিনী।
এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার বাদী মতিন কাজীর ব্যবসায়ীক অংশীদার ও মামলার ২ নম্বর সাক্ষী আব্দুল বাসেত জানান, বালুমহাল ইজারা নিতে সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে দরপত্র জমা দিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় যান তারা। এতে বাধা দেন আসামিরা। জোর করে দরপত্র জমা দিলে তারা আমাদের ওপর চড়াও হন।
একপর্যায়ে আসামিরা মতিনের ভাতিজা সেনা সদস্য জাফরকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে অপহরণ করে লঞ্চঘাট এলাকায় রিচমার্ট হোটেলের ৩১০ নম্বর কক্ষে আটকে রাখে।
সেখানে তিনি নিজেকে সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পরিচয় দেয়ার পরেও তাকে মারধর করা হয়। তার সঙ্গে থাকা ব্যবহৃত স্বর্ণালংকার, আইফোন এবং নগদ টাকা কেড়ে নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।
বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানানোর পর সেনাবাহিনী রিচমার্ট হোটেলে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করে।
হোটেলটির অন্যতম মালিক যুবদল নেতা বেলায়েত হোসেন। দরপত্রে অংশ নিতে সিডিউল ক্রেতা অনেককে বিভিন্ন কৌশলে ডেকে এনে সোমবার এ হোটেলে আটকে রাখা হয়েছিলো।
হোটেল রিসমার্টে আগেও এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে দাবি স্থানীয়দের।
মামলার সাক্ষী বাসেত আরও জানান, ১৩ কোটি টাকার সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেঘনার বালুমহাল তারা ইজারা পেয়েছেন।
তবে মামলার অন্যতম আসামি মহানগর মহিলা দলের সাংগঠনিক ফরিদা বেগম জানান, মেঘনার বালুমহালের বিপরীতে ৩৩টি দরপত্র বিক্রি হয়েছিলো। বাসেত ও মতিনের ভাড়াটিয়া গুণ্ডাদের বাঁধায় অন্যরা জমা দিতে পারেননি।
মতিনরা দুটি দরপত্র জমা দিয়ে ওই বালুমহাল বাগিয়েছে।
ফরিদা অভিযোগ করেন, সোমবার ভোরে একদল যুবক তাদের চাঁদমারী বাসায় হানা দিয়ে তার দরপত্র ছিনিয়ে নিয়েছে। দরপত্র ক্রয়কারী মফিজুল ইসলাম নামক আরেকজন অভিযোগ করেন, তিনি সাড়ে তিন কোটি টাকার পে-অর্ডার কেটেও দরপত্র জমা দিতে পারেননি।
মেঘনার বালুমহাল পুনঃদরপত্রের জন্য তিনি আবেদন করবেন বলেও উল্লেখ করেন।
শিলা ইসলাম