ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১

কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে সফল কৃষি উদ্যোক্তা সৈয়দপুরের হামিদার রহমান বাবু

এম আর মহসিন, নিজস্ব সংবাদদাতা, সৈয়দপুর

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২৫ মার্চ ২০২৫

কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে সফল কৃষি উদ্যোক্তা সৈয়দপুরের হামিদার রহমান বাবু

ছবি: সংগৃহীত

মাটির টানে লাখ টাকা বেতনের কর্পোরেট চাকরী ছেড়ে একই আঙ্গিনায় মাছ, জৈব সার, গরু, ছাগল পালন ও  চাষাবাদে সফল কৃষি উদ্যোক্তা বনেছেন সৈয়দপুরর যুবক হামিদার রহমান (৩৮)। কঠোর অধ্যাবসায়, শ্রম আর দৃঢ় প্রত্যয়ী এ যুবক কৃষিতে স্বাবলম্বী হওয়ায় এ জনপদের মডেল কৃষকে পরিণত হয়েছেন।

জানা যায়, পৌর ৮ নং ওয়ার্ডের বাঙ্গালীপুর নিজ পাড়ার পুরাতন বাবু পাড়ার আলহাজ মোফাজ্জল হোসেন ও হামিদা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে মো: হামিদার রহমান বাবু। ৪ বোনের একমাত্র ভাই। বাবার মৃত্যুর পর কাঁধে অনেক দায়িত্ব। ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) করার পর দেশের বিভিন্ন খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পেতেন লাখ টাকার ওপরে বেতন। সেখানে আয়েশী চাকুরী হলেও প্রতিনিয়ত ছিল জবাবদিহিতা। এভাবে প্রায় ১০ বছর কাটিয়েছেন।

২০১২ সালে সেই বৃত্ত ভাঙ্গেন সৈয়দপুরে একটি জ্যাকেট, থ্রি কোয়াটার প্যান্টের কারখানা দিয়ে। বিনিয়োগ করেন সমস্ত সঞ্চিত অর্থ। তবে বাকির রপ্তানি বাণিজ্যে সব কিছু খোয়া যায়। লোকসানের ঘানি নিয়ে আবারও যোগ দেন চাকরিতে। মনে টিকে না সেখানে। ২০২১ সালে পিতার রেখে যাওয়া কৃষি ক্ষেতে পরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলেন মৎস্য, গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল, প্রাকৃতিক জৈব্যসারের খামার। বর্তমানে তার এসকল খামারে প্রতিদিন ১০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, শহরের পার্শ্বর্তী আলমপুর ইউনিয়নের হাজিপাড়ার কৃষি খামারটি। বসবাসের স্থান থেকে দুরে। চতুর্দিকে ইরি-বোরোর সবুজের সমারোহ। মধ্যখানে গ্রামীণ মেঠোপথ। ২শত গজের পথ পেরিয়ে হামিদার বাবুর গড়া স্বপ্নের সেই খামার। ৭০ শতকের পুকুরে মিশ্র মৎস্য ও ৩০ শতক পুকুরে পাঙ্গাস মাছের চাষ। পুকুরের ধারে সারি-সারি খেজুর গাছ। পাশে গরু মোটাতাজা করণ খামার। সেই খামারে দেশী বিদেশী মিলে ৪২ ষাড় গরু। পাশেই দেড় শতাধিক ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের খামার ও গরুর গোবর থেকে তৈরী প্রাকৃতিক জৈব সারের কারখানা। এ সবগুলো খামার কাটাতার ও বাশের বেড়া ঘেরায় পৃথক ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। এ সকল খামারে নিয়মিত কাজ করেন লিটন (৩০), শিপন (২৪), তাপস (২৭), দিপক (২৩) নামে শ্রমিক। এছাড়া কৃষি ক্ষেত দেখাশোনা করেন আরও ৬ শ্রমিখ। শ্রমিকরা জানান, মাছ চাষ প্রথম বার। তবে প্রতিবছর ৫ শত টন জৈব সার উৎপাদন হচ্ছে। এ সকল সার বিশেষ প্রক্রিয়ার ভাবে বস্তায় ভরে বাজারজাত করা হচ্ছে। সবগুলো ছাগল ব্লাক বেঙ্গল। যা মাংসের জন্য পালন করা হচ্ছে। পাশে মোটাতাজা গরুর খামার। ৬টি ফ্রিজিয়ান গরু থেকে শুরু এ প্রকল্প। এখন ৪২টি গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। এখানে একটি আদর্শ খামারের সমস্ত সুবিধা ও ব্যাবস্থপনা মজুদ রয়েছে। মোটাতাজাকরণে গমের ভুষি, আরবি, রাইস ব্রান্ড, সবুজ ঘাস, খড়কুটা, ডিডিজিএম, ফিসমিল, মুসুরের ভুষি খাদ্য হিসাবে ব্যাবহার করেন। এখান থেকে ছাগলের খাবার যোগান হয়।

লিটন নামে শ্রমিক জানায়, তাদের খামারে এবার আড়াই শত থেকে ৮ শত কেজি ওজোনের ষাড় রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ গণঅভুত্থান নামের ফ্রিজিয়ান শান্ত স্বভাবের ষাড়টিকে দেখতে খামারে আসছেন ব্যাবসায়ীরা। সাড়ে ৫ ফুট উচ্চতা ও সাড়ে ৮ ফুট দৈর্ঘ্যরে এ ষাড়টি নজর কেড়েছে সকলের। এছাড়া ৭৮০ শতক জমিতে আলু,ধান, গম, শসা, করলাসহ মৌসুমী সব ধরনের সবজি ও ফসল উৎপাদন করে তাক লাগিয়েছেন প্রতিবেশী কৃষকদের। নিবিড় শ্রম, মেধা ও সঠিক পরিকল্পনায় বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদে যে লাভবান হওয়ায় যায়, তার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কৃষক হামিদুর। তপ্ত রোদ,ঝড় বৃষ্টি কিংবা শীতল আবহাওয়া কোন কিছুই তাকে থামাতে পারছেনা। আবহাওয়া যতই প্রতিকুল হোক, সময় মত ঠিকই হাজির হন তার খামারে। এ যেন মাটি টান। সবুজ শ্যামলিমার ক্ষেত কিংবা প্রতিপালিত তার গোবাদিপশুর মমতা মাখানো আহবান।

এ নিয়ে একান্ত আলোপচারিতায় জনকন্ঠ’কে বাবু জানায়, এসিরুমে বসে কর্পোরেট চাকরী কখনই মন টানতো না। ২০১২ সালে সৈয়দপুর শহরের থানার পিছনে পোশাক তৈরীর ব্যাবসা শুরু করি। তবে ব্যাবসায়ীদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে রপ্তানিমুখী ওই ব্যাবসায় দাড়াতে পারেনি। পরে অনিচ্ছা সত্বেও যোগদান করেন চাকুরীতে। তবে চাকুরীতে থাকা বস্থায় ২০২১ সালে ৬টি ষাড় নিয়ে মোটাতাজা প্রকল্প শুরু করি। ওই ষাড় দিয়ে সব ব্যয় বাদ দিয়ে আড়াই লাখ টাকা লাভ হয়। পরে চাকরী বাদ দিয়ে পরিকল্পিত ভাবে কৃষি উৎপাদনে মনোযোগ দেই। এতে প্রতিবছর, ধান, সবজি, গরু, ছাগল, সার ও মাছ বিক্রি করে সব ব্যায় বাদ দিয়ে বছরে ২৫ লাখ টাকা লাভ হচ্ছে। তবে তিনি কখনোই স্থানীয় কৃষি বা প্রাণি সম্পদ অফিস যাননি। নিজের লব্ধ জ্ঞান দ্বারাই চাষাবাদ উৎপাদসমুখী কৃষি শিল্পোকে এগিয়ে নিচ্ছেন।

সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধিমান ভুষন জানান, তার কৃষি প্রকল্পটি আমাদের এলাকার সংলগ্ন। তিনি পরামর্শ নিতে আসলে আমরা পাশে থাকব। তবে তার সফলতার গল্পে কৃষক ও খামারিদের অনুপ্রাণিত করবে

মায়মুনা

×