
ছবি:সংগৃহীত
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের সংশ্লিষ্টতা সবারই জানা। তবে ইতিহাসে এমন কিছু ঘটনা আছে, যেখানে ভারতের নিজেদের স্বার্থ প্রাধান্য পাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এর একটি উদাহরণ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের শহীদ হওয়া এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার ঘটনা।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মেজর শফিউল্লাহর নেতৃত্বে দুই নম্বর সেক্টরে সক্রিয় অংশ নেন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন। তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠনের জন্য কাজ শুরু করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সেক্টরে অংশ নেয়া নৌবাহিনী সদস্যদের একত্রিত করে ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের আগরতলায় ১০ নম্বর নৌ সেক্টর গঠন করা হয়। সেখানে তিনি ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন মনীন্দ্রনাথ সামন্তের তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু করেন।
অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের নৌবাহিনী দুটি গানবোর্ড, পদ্মা ও পলাশ, ভারতের গার্ডেন রিচ ডকইয়ার্ডে তৈরি করে এবং এগুলোকে ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে মংলা বন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে ভারতীয় গানবোর্ড পানভেলের সাথে যুক্ত হয়ে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নেয়।
১০ ডিসেম্বর দুপুরে পদ্মা ও পলাশ গানবোর্ড খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে পৌঁছালে, ভারতীয় বিমান বাহিনীর তিনটি জঙ্গি বিমান তাদের দিকে আসতে থাকে। তবে, ক্যাপ্টেন সামন্ত নির্দেশ দেন গুলিবর্ষণ থেকে বিরত থাকতে। কিছুক্ষণ পর, বিমানগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে আরও নিচে নেমে আসে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জাহাজগুলোর উপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এ হামলায় সম্পূর্ণ অক্ষত থেকে যায় ভারতীয় গানবোর্ড পানভেল কারণ ভারতীয় বিমানগুলো এটিকে লক্ষ্য করে কোন হামলাই করেনি প্রথম গোলা এসে পড়ে পদ্মায় এবং পরবর্তীতে পলাশে গোলা সরাসরি পদ্মার ইঞ্জিন রুমে আঘাত করে বিধ্বস্ত করে দেয় ইঞ্জিন হতাহত হয় অনেক নাবিক পদ্দার পরিণতিতে পলাশের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রায়চৌধুরী নাবিকদের জাহাজ ত্যাগের নির্দেশ দেন রুহুল আমিন এই আদেশে ক্ষিপ্ত হন তিনি উপস্থিত সবাইকে যুদ্ধ বন্ধ না করার আহ্বান করেন ক্রুদের বিমানের দিকে গুলি ছুটতে বলে ইঞ্জিন রুমে ফিরে আসেনকিন্তু অধিনায়কের আদেশ অমান্য করে।
এই গোলাবর্ষণে পদ্মার ইঞ্জিন রুমে আঘাত লাগে এবং পলাশের ইঞ্জিন রুমে একটি গোলা এসে পড়ে, যার ফলে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন গুরুতরভাবে আহত হন। এরপরও তিনি চেষ্টা চালিয়ে যান পলাশকে বাঁচানোর, কিন্তু ইঞ্জিন বিকল হয়ে আগুন ধরে যায় এবং রুহুল আমিনের ডান হাতটি পুরোপুরি উড়ে যায়।
এক হাত হারানো রুহুল আমিন রূপসা নদীতে ঝাঁপ দেন এবং সাঁতরে নদীর অপর পাড়ে পৌঁছান। কিন্তু সেখানে পাকিস্তানের দোসর রাজাকারের দল তাকে আক্রমণ করে এবং শহীদ করেন। তার মরদেহ বেশ কিছুদিন অযত্নে পড়ে থাকে, পরবর্তীতে বাগমারা গ্রামের স্থানীয় জনগণ তাকে দাফন করেন এবং সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকারী গেজেট নোটিফিকেশনে রুহুল আমিনসহ সাতজন বীর সন্তানকে মরণোত্তর বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
সূত্র: https://youtu.be/WVxzn7F24Ls?si=s8CglopDlFGuomyP
আঁখি