ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১

ধুলায় আচ্ছন্ন সড়কে চলাচলকারী মানুষ

মঠবাড়িয়ায় কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার

নিজস্ব সংবাদদাতা, মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর

প্রকাশিত: ০১:০৬, ২৫ মার্চ ২০২৫

মঠবাড়িয়ায় কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার

ঠিকাদার কাজ ফেলে যাওয়ায় ধুলায় ডুবছে মানুষ

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মঠবাড়িয়া-মিরুখালী সড়কটি বেশ কয়েক বছর পড়েছিল বেহাল অস্থায়। দীর্ঘদিন ভোগান্তির পর রাস্তাটির কাজ শুরু হলে এলাকাবাসী ও সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী মানুষজনের মধ্যে বেশ স্বস্তি ফিরছিল। কিন্তু ওই স্বস্তি আর তাদের কাছে স্বস্তি নাই, পরিণত হয়েছে অভিশাপে।

গত ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে ঠিকাদার কাজ ফেলে লাপাত্তা হয়েছেন। সড়কের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনসহ হাজার হাজার মানুষ।
উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুন মাসে ইফতি টিসিএল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওই সড়কের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। মঠবাড়িয়ার জিরো পয়েন্ট থেকে মিরুখালী টাকবাজার পর্যন্ত দুইটি প্যাকেজে ৬ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার ব্যায় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রথম প্যাকেজটি ৩ কিলোমিটার ভ্রায় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এবং দ্বিতীয় প্যাকেজটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সড়কে খোয়া ফেলেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
সোমবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, পুরো সড়কের কার্পেট উঠিয়ে নতুন করে খোয়া দিয়েছিল। যা গুঁড়ো হয়ে লাল ধুলায় পরিণত হয়েছে। কোথাও কোথাও খানা-খন্দে পরিণত হয়েছে। ব্যস্ততম এ সড়কে প্রতিদিনই ছোট-বড় হাজার যান চলাচল করার কারণে বালু আর ধুলায় মাখামাখি হয়ে চলতে হচ্ছে পথচারী ও যাত্রীদের। সড়কের দুপাশের বাড়ি-ঘর লাল ধুলায় ঢাকা পড়েছে। সড়কের পাশের গাছপালা নষ্ট হচ্ছে।

ঘরের কাপড়-চোপড়সহ রান্না করার খাবারগুলোও ব্যবহার করার উপযোগী থাকছে না ধুলায় এমটাই অভিযোগ করছেন সড়কের পাশে বসবাসকারীরা। ধুলা ও খানাখন্দে একদিকে যেমন যান চলাচলে বিঘœ হচ্ছে অপরদিকে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে সড়কের চলাচলকারী ও দুপাশে বসবাসকারী স্থানীয়দের।
ওই সড়কের পাশেই অবস্থিত আন্ধারমানিক সরকারি প্রথমিক বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক আলী হায়দার সোহেল বলেন, আমার বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে-যেতে চরম ধুলার সম্মুখীন হতে হয়। এ ছাড়া বিদ্যালয়টি সড়ক লাগোয়া হওয়ায় ধুলাবালিতে শিক্ষর্থীদের ক্লাস করতে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সড়কের ধুলার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ আমরা চরম স্বাস্খ্য ঝুঁকিতে রয়েছি।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফেরদৌস ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যারা চলাচল করছেন তাদের হাঁচি, কাশি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, হাঁপানি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার যাদের আগে থেকেই ফুসফুসে সমস্যা আছে, তাদের অল্পতেই সমস্যা জটিল করে তুলতে পারে। সাধারণত এমন ধুলাবালির কারণে শিশু, বৃদ্ধ ও যাদের ডাস্ট অ্যালার্জি আছে তারা বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মো. জিয়ারুল ইসলাম জানান, ওই সড়কের পাশে জেলা পরিষদের ৭৪টি বড় গাছ রয়েছে, যা সড়ক সংস্কারে একান্তভাবে কাটার প্রয়োজন। জেলা পরিষদ ওই গাছ কাটতে দেরি করায় কাজে বিলম্ব হচ্ছে।

আমরা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি যাতে কাজটি দ্রুত শেষ করতে পারি। আমাদের চেষ্টা থাকবে যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করে জনসাধারণের জন্য চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া। এ ব্যাপারে চেষ্টা করেও ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

×