
ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর ফুটপাতের মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাজধানীতে বিপণিবিতান ছাড়াও ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে ফুটপাতের দোকানগুলোতে। এ কারণে ফুটপাতগুলোতে এখন পা ফেলার জায়গা নেই। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্রেতাদের হাঁকডাক আর ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম ফুটপাতের দোকানগুলো। বড় বিপণিবিতান থেকে দাম অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় এখানে কেনাকাটা করতে আসছেন নি¤œমধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ গেট, জিরো পয়েন্ট, জিপিওর দক্ষিণ, পূর্ব ও উত্তর পাশের সব ফুটপাতেই মানুষ আর মানুষ। প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটাতে চলছে কেনাকাটা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমজমাট বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট। সেখানে এমনিতেই সাড়া বছর পাঞ্জাবি বিক্রি হয়।
ঈদ উপলক্ষে আরও নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। দোকানের পরিধি দক্ষিণ গেটের মূল সড়ক থেকে গিয়ে ঠেকেছে মসজিদের ভেতরে প্রবেশের সিঁড়িতে। অন্য সময় সিঁড়িতে দোকান বসায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঈদকে কেন্দ্র করে তা কিছুটা শিথিল। তাই বিনা বাধায় চলছে বেচাকেনা।
ব্যবসায়ীরা জানান, বায়তুল মোকাররমের আশাপাশের ফুটপাতগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে দুইশ’র বেশি নতুন দোকান বসেছে। এর বাইরে সেখানে নিয়মিত দোকান রয়েছে আরও তিন শতাধিক। এসব দোকানে নারী-পুরুষের পোশাক, জুতা, পাঞ্জাবি, টুপি, শিশুদের পোশাক, খেলনা, প্রসাধনী, ব্যাগ সবকিছুই পাওয়া যাচ্ছে। দক্ষিণ গেটে মীর জুয়েল নামে এক ক্রেতা বলেন, বায়তুল
মোকাররম দক্ষিণ গেটে যে পাঞ্জাবির রেগুলার মূল্য ৩০০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়।
অপরদিকে পশ্চিমপাশের দেওয়াল সংলগ্ন দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে অপেক্ষাকৃত নতুন ধরনের পাঞ্জাবি। এখানে দামও কিছুটা বেশি। এর মধ্যে অ্যাম্ব্রয়ডারি ডিজাইনের পাঞ্জাবির দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। সাধারণ ডিজাইনের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকার মধ্যে। শিশুদের পাঞ্জাবি-পাজামার সেট ৩০০-৪০০ টাকা। জিপিওর পশ্চিম-দক্ষিণের পুরোটাতেই পাঞ্জাবির সমাহার। সেখানে বিভিন্ন দামের অফার দিয়ে মাইকিং করছেন বিক্রেতারা।
বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটের দেয়াল ঘেঁষে ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট নিয়ে বসেছে কমপক্ষে ৫০টির মতো দোকান। বিক্রেতারা জানান, তারা সারা বছরই এখানে ব্যবসা করেন। সব সময় বিক্রি হয় গড়পড়তা। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে ভালো ব্যবসার আশায় থাকেন। এবারের রমজানের শুরুতে টুকটাক বিক্রি হলেও ১৫ রমজানের পর থেকে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করেছে।
সেখানে ব্যবসায়ী আহসান হাবিব বলেন, ‘এই সারিতে মূলত ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট বিক্রি হয়। ৩০০-৫০০ টাকার মধ্যে জিন্সের প্যান্ট ও ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে ফুলশার্ট। একই ধরনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে এর পশ্চিম দিকের গলিতে।’
জিরো পয়েন্টের জুয়েলারি দোকানের সামনের ফুটপাতে বসেছে শিশুদের পোশাকের দোকান। মেয়ে শিশুদের নান্দনিক কারুকার্যের ফ্রক ও প্যান্ট পাওয়া যাচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়। জিরো থেকে দুই বছরের শিশুদের শার্ট-প্যান্ট বা গেঞ্জির সেটও কেনা যাচ্ছে সাশ্রয়ী দামে।
একই সারিতে বসেছে বিভিন্ন ডিজাইনের জুতার দোকান। সেখানে নারী-পুরুষ ও শিশুর জুতা বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। বাহারি সাইজ ও ডিজাইনের জুতা পাওয়া যাচ্ছে ৭০০-১ হাজার ২০০ টাকায়। পাশাপাশি এখানে বিভিন্ন ব্যাগ ও স্যুটকেস কেনাবেচা হচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে মানিব্যাগ, থান কাপড়, বোরকা, শিশুদের ঘড়ি-চশমা।
জুতা কিনতে আসা মাহফুজা বেগম বলেন, ‘অন্যান্য ফুটপাতের চেয়ে বায়তুল মোকাররম এলাকায় কেনাকাটা করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এখানে প্রয়োজনীয় সব কিছুই পাশাপাশি পাওয়া যায়। তা ছাড়াও ফুটপাত হলেও এখানে কিছুটা উন্নত পণ্য পাওয়া যায়।’
ব্যাগ বিক্রেতা সাজু জানান, ঈদে পোশাকের পাশাপাশি নতুন ব্যাগের চাহিদা থাকে। এবার আশানুরূপ ব্যবসা হবে বলে আশা করছি।’