
ছবিঃ সংগৃহীত
নীলফামারীর ডিমলা থানার ভবনটি এখন এক ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। জরাজীর্ণ ও বেহাল দশার কারণে এটি যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরণের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। ছাঁদের পলেস্তারা খসে পড়ছে, বিম ও দেয়ালে গভীর ফাটল দেখা দিয়েছে, আর মরিচা ধরা রড উন্মুক্ত হয়ে গেছে। ফলে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে দায়িত্ব পালন করছেন ৬৬ জন পুলিশ সদস্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, থানার দ্বিতল ভবনটির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। দ্বিতীয় তলার ছাঁদ ও দেয়ালের পলেস্তারা প্রতিনিয়ত খসে পড়ছে, যা ব্যারাকে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যদের জন্য ভয়াবহ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফাটল ধরা দেয়াল ও মরিচা ধরা রড দেখে মনে হয়, এটি ধসে পড়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তবুও এখানেই প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করছেন থানার ওসি, ইন্সপেক্টর (তদন্ত), ১২ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই), ৭ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এবং ৩৯ জন কনস্টেবলসহ মোট ৬৬ জন পুলিশ সদস্য।
থানার ভেতরেই রয়েছে অস্ত্রাগার, হাজতখানা ও মালখানা, যা এই দুর্বল ও ভঙ্গুর ভবনের কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। বিশেষ করে থানার দ্বিতীয় তলায় থাকা ব্যারাকে ৪৮ জন পুলিশ সদস্য রাতে অবস্থান করেন, যা তাদের জীবনকে চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
পুলিশ সদস্যদের মতে, ভূমিকম্প, প্রবল ঝড়বৃষ্টি কিংবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে ভবনটি মুহূর্তের মধ্যে ধসে পড়তে পারে। এতে পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি থানায় আটক বন্দিরাও চরম বিপদের সম্মুখীন হবেন। প্রতিদিন এই ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে পুলিশের মনোবলও ভেঙে পড়ছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারাও থানার এমন বেহাল অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, থানার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যদি এতটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম ব্যাহত হতে বাধ্য। দ্রুত থানার জন্য একটি নতুন ভবন নির্মাণের দাবি তুলেছেন পুলিশ সদস্য ও সাধারণ জনগণ।
এ প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩) বলেন, "ডিমলা থানার ভবনটির বর্তমান অবস্থাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং এর ধসে পড়ার সম্ভাবনা থাকায় পুলিশ সদস্যরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। পুলিশের নিরাপত্তা এবং জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে, এই সংকট মোকাবিলায় অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে, বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে, যা রোধ করতে এখনই দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি।"
ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলে এলাহী জনকণ্ঠকে বলেন,"ডিমলা থানার ভবনটি বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দেয়ালে ফাটল, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়া এবং মরিচা ধরা রডের কারণে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন খুবই জরুরি।"
তিনি আরও জানান, "বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং নতুন ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে।"
নীলফামারীর পুলিশ সুপার এ.এফ.এম তারিক হোসেন খান বলেন, "পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব, তাই আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। নতুন ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সরকারকে প্রস্তাব পাঠানো হবে। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে, যাতে থানার কার্যক্রম আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায়।"
ইমরান